রজব | রজব মাসের ফজিলত

 

রজব, রজব মাসের ফজিলত , রজব মাসের দোয়া, রজব মাসের আমল, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, রজব মাস,

আসসালামু আলাইকুম, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন । আমিও ভাল আছি আল্লাহর রহমতে । আজকে আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম,রজব, রজব মাসের ফজিলত , রজব মাসের দোয়া, রজব মাসের আমল, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, রজব মাস,


রজব

পবিত্র কোরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, রজব মাস তার একটি। আরবি সপ্তম মাস রজব। রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত আর রজব হলো আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের মাস।

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللّٰهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌؕ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ وَ قَاتِلُوا الْمُشْرِكِیْنَ كَآفَّةً كَمَا یُقَاتِلُوْنَكُمْ كَآفَّةًؕ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِیْنَ

অথাৎ, আসলে যখন আল্লাহ‌ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসে নিজেদের ওপর জুলুম করো না। আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। এবং জেনে রাখো আল্লাহ‌ মুত্তাকীদের সাথেই আছেন।[সূরা তওবা,আয়াতঃ৩৬]

 রজব মাসের ফজিলত

মোমিন জীবনে মাহে রজবের গুরুত্ব অপরিসীম। রজব মাস এত ফজিলতপূর্ণ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘এ মাসে উল্লেখযোগ্য একাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন মেরাজ। তাই এ মাস মর্যাদাপূর্ণ। তাছাড়া হাদিসের কিতাবগুলোতে রজব মাসে রাসূল (সা.)-এর অধিক নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে পুরো আরবে বছরের মধ্যে চার মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকত। মহিমান্বিত রজব মাসে আরবে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। হজরত রাসূল (সা.) সঙ্গী-সাথিদের রজব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

এই মাসে মুহাম্মাদ (স.) মেরাজে গমন করেন। রজব মাসের একটি বিশেষ আমল হচ্ছে শবে মেরাজ। মেরাজ আরবী শব্দ যার বংলা অর্থ ঊর্ধ্বে গমন করা। মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, “পবিত্র ঐ মহান সত্ত্বা যিনি রাত্রি বেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশকে আমি বরকতময় করেছি। এটা এজন্য যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাতে পারি।” (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত নং-১)

রজব মাসের করণীয়

আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত চারটি মাস, বিশেষ মর্যাদা এবং প্রভূত সম্মানে ভূষিত। যার অংশীদার রজবও, যেহেতু রজব তার একটি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ... 

“হে মু’মিনগণ,আল্লাহর নিদর্শনসমূহ (নিষিদ্ধ বস্তু) হালাল মনে করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহকে।[সূরা মায়েদা,২]

গোনাহের কারণে কলুষিত অন্তরাত্মাকে তওবার মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে রজব মাসে। হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস। শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস। আর রমজান হলো- ফসল তোলার মাস। ’ তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো- বৃষ্টির মতো। ’[ -লাতায়েফুল মাআরেফ: ১৪৩]

 রজব মাসের দোয়া

অন্যান্য মাসের মতো রজব মাসের জন্য বিশেষ কিছু নফল আমল রয়েছে, যা আমল করলে আমরা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি এবং জান্নাত লাভের পথ সুগম হবে। হাদিস জানা যায়, যখন রজব মাস শুরু হত, তখন মহানবী (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে বলতেন, اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান’ [সুনানে মাঈয়ি, ৬৫৯]অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়েদিন।

 রজব মাসের আমল

আসলে সম্মানিত রজব মাস আমাদেরকে রমজানের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলেকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে রাসুলেপাক (সা.) এর প্রথম স্থান হওয়ার পরেও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন। তাই আমরাও যদি এই রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ্য রাখ আমি যেন আগত রমজানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ইবাদত-বন্দেগী, দানখয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব পুণ্য কর্ম বেশী বেশী করতে পারি। তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে এই রজব মাস থেকেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করে নেই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সম্মানিত রজব মাসের তাৎপর্য বুঝার এবং এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন।সেই সাথে দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমরা সকাতর প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে আপনার দয়ার চাদরে আমাদেরকে আবৃত করে নিন আর রমজানের আগেই বিশ্বকে করুন করোনা মুক্ত, আমিন।

 আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রজবের চাঁদ দেখার পর থেকে রমজান আসা পর্যন্ত এই দুই মাস বেশি বেশি এই দোয়া পড়তেন-

আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা'বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।

(মুসনাদে আহমাদ-১/৩৩৯, মিশকাত-১২১, বাইহাকী ৩/৩৭৫)

রজব মাস

প্রিয় নবী (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। অধিক নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাস। তাই আমাদেরও কর্তব্য রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করে রজব মাসের হক আদায় করা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখা।

তবে স্মরণ রাখা উচিত যে, শরীয়তের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামায, বিশেষ কোনো রোযা বা বিশেষ পদ্ধতির কোনো আমলের হুকুম দেওয়া হয়নি। রজব মাসের বরকত ও ফযীলত হাসিল করার জন্য অন্যান্য মাসে পালনীয় ফরয ইবাদতগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং নফল ইবাদত বেশি বেশি করতে হবে।একজন মোমেন রমজান আসার পূর্বে রজব মাস থেকেই নিজকে রমজানের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করে তোলে। বাহ্যিকভাবে আমরা যেমন স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য অনেক পূর্ব থেকেই নিজেকে গড়ে তুলি আর সব সময় মাথায় পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের চিন্তা ঘুরপাক করে ঠিক তেমনি যারা মোমেন তারা রমজানকে শ্বাগত জানানোর জন্য রজব মাস থেকেই তৈরী হয়ে থাকে। আসলে সম্মানিত রজব মাস আমাদেরকে রমজানের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলেকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে রাসুলেপাক (সা.) এর প্রথম স্থান হওয়ার পরেও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন। 

তাই আমরাও যদি এই রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ্য রাখ আমি যেন আগত রমজানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ইবাদত-বন্দেগী, দানখয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব পুণ্য কর্ম বেশী বেশী করতে পারি। 


Tag:রজব, রজব মাসের ফজিলত , রজব মাসের দোয়া, রজব মাসের আমল, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, রজব মাস,