জসীম উদ্দীনের কবিতা সমগ্র | Jasim Uddin poem

 

জসীম উদ্দীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, জসিম উদ্দিনের কবিতা, জসিম উদ্দিনের কবিতা সমগ্র, নকশী কাঁথার মাঠ কবিতা, নকশী কাঁথার মাঠ জসীম উদ্দিনের কবিতা, ধান ক্ষেত কবিতা, ধানক্ষেত জসীম উদ্দীনের কবিতা, রাখালী কবিতা, রাখালী জসীম উদ্দীনের কবিতা,

    জসীম উদ্দীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা | জসিম উদ্দিনের কবিতা

    টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি বারকাতুহু । প্রিয় পাঠকবৃন্দ কেমন আছেন আপনারা সবাই ? আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আমিও ভাল আছি। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম জসীম উদ্দীনের শ্রেষ্ট কবিতাজসীম উদ্দীনের কবিতা, । আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

    নকশী কাঁথার মাঠ কবিতা | নকশী কাঁথার মাঠ জসীম উদ্দিনের কবিতা

    এক

    বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে ক্ষীর নদী,

    উইড়া যাওয়ার সাধ ছিল, পাঙ্খা দেয় নাই বিধি |

    — রাখালী গান

    এই এক গাঁও, ওই এক গাঁও — মধ্যে ধু ধু মাঠ,

    ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ |

    এ-গাঁও যেন ফাঁকা ফাঁকা, হেথায় হোথায় গাছ ;

    গেঁয়ো চাষীর ঘরগুলি সব দাঁড়ায় তারি পাছ |

    ও-গাঁয় যেন জমাট বেঁধে বনের কাজল কায়া,

    ঘরগুলিরে জড়িয়ে ধরে বাড়ায় বনের মায়া |

    এ-গাঁও চেয়ে ও-গাঁর দিকে, ও-গাঁও এ-গাঁর পানে,

    কতদিন যে কাটবে এমন, কেইবা তাহা জানে!

    মাঝখানেতে জলীর বিলে জ্বলে কাজল-জল,

    বক্ষে তাহার জল-কুমুদী মেলছে শতদল |

    এ-গাঁর ও-গাঁর দুধার হতে পথ দুখানি এসে,

    জলীর বিলের জলে তারা পদ্ম ভাসায় হেসে!

    কেউবা বলে — আদ্যিকালের এই গাঁর এক চাষী,

    ওই গাঁর এক মেয়ের প্রেমে গলায় পরে ফাঁসি ;

    এ-পথ দিয়ে একলা মনে চলছিল ওই গাঁয়ে,

    ও-গাঁর মেয়ে আসছিল সে নূপুর-পরা পায়ে!

    এইখানেতে এসে তারা পথ হারায়ে হায়,

    জলীর বিলে ঘুমিয়ে আছে জল-কুমুদীর গায়ে |

    কেইবা জানে হয়তো তাদের মাল্য হতেই খসি,

    শাপলা-লতা মেলছে পরাগ জলের উপর বসি |

    মাঠের মাঝের জলীর বিলের জোলো রঙের টিপ,

    জ্বলছে যেন এ-গাঁর ও-গাঁর বিরহেরি দীপ !

    বুকে তাহার এ-গাঁর ও-গাঁর হরেক রঙের পাখি,

    মিলায় সেথা নতুন জগৎ নানান সুরে ডাকি |

    সন্ধ্যা হলে এ-গাঁর পাখি ও-গাঁর পানে ধায়,

    ও-গাঁর পাখি এ-গাঁয় আসে বনের কাজল ছায় |

    এ-গাঁর লোকে নাইতে আসে, ও-গাঁর লোকেও আসে

    জলীর বিলের জলে তারা জলের খেলায় ভাসে |

    এ-গাঁও ও-গাঁও মধ্যে ত দূর — শুধুই জলের ডাক,

    তবু যেন এ-গাঁয় ও-গাঁয় নেইকো কোন ফাঁক |

    ও-গাঁর বধু ঘট ভরিতে যে ঢেউ জলে জাগে,

    কখন কখন দোলা তাহার এ-গাঁয় এসে লাগে |

    এ-গাঁর চাষী নিঘুম রাতে বাঁশের বাঁশীর সুরে,

    ওইনা গাঁয়ের মেয়ের সাথে গহন ব্যথায় ঝুরে!

    এ-গাঁও হতে ভাটীর সুরে কাঁদে যখন গান,

    ও-গাঁর মেয়ে বেড়ার ফাঁকে বাড়ায় তখন কান |

    এ-গাঁও ও-গাঁও মেশামেশি কেবল সুরে সুরে ;

    অনেক কাজে এরা ওরা অনেকখানি দূরে |

    এ-গাঁর লোকে দল বাঁধিয়া ও-গাঁর লোকের সনে,

    কাইজা ফ্যাসাদ্ করেছে যা জানেই জনে জনে |

    এ-গাঁর লোকেও করতে পরখ্ ও-গাঁর লোকের বল,

    অনেকবারই লাল করেছে জলীর বিলের জল |

    তবুও ভাল, এ-গাঁও ও-গাঁও, আর যে সবুজ মাঠ,

    মাঝখানে তার ধূলায় দোলে দুখান দীঘল বাট ;

    দুই পাশে তার ধান-কাউনের অথই রঙের মেলা,

    এ-গাঁর হাওয়ায় দোলে দেখি ও-গাঁয় যাওয়ার ভেলা |

    নকশী কাঁথার মাঠ

    ধান ক্ষেত কবিতা | ধানক্ষেত জসীম উদ্দীনের কবিতা

    পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত,

    সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত।

    ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে,

    ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে।

    কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী,

    হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি।

    কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়,

    ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।

    পথের কেনারে মোর ধান ক্ষেত, সবুজ পাতার পরে,

    সোনার ছড়ায় হেমন্তরাণী সোনা হাসিখানি ধরে।

    শরৎ সে কবে চরে গেছে তার সোনালী মেঘের ছটা,

    আজো উড়িতেছে মোর এই খেতে ধরিয়া ধানের জটা।

    মাঝে মাঝে এর পকিয়াছে ধান, কোনখানে পাকে নাই,

    সকুজ শাড়ীর অঞ্চলে যেন ছোপ লাগিয়াছে তাই।

    আজান গাঁয়ের কৃষাণকুমারী এইখান দিয়ে যেতে,

    সোনার পায়ের চিহ্নগুলিরে গেছে এর বুকে পেতে।

    মোর ধানক্ষেত, এইখানে এসে দাঁড়ালে উচচ শিরে,

    মাথা যেন মোর ছুঁইবারে পারে সুদূর আকাশটিরে!

    এইকানে এসে বুক ফুলাইয়া জোরে ডাক দিতে পারি,

    হেথা আমি করি যা খুশী তাহাই, কারো নাহি ধার ধারি।

    হেথায় নাহিক সমাজ-শাসন, নাহি প্রজা আর সাজা,

    মোর ক্ষেত ভরি ফসলেরা নাচে, আমি তাহাদের রাজা।

    এইখানে এসে দুঃখের কথা কহি তাহাদের সনে,

    চৈত্র দিনের ভীষণ খরায় আষাঢ়ের বরিষণে।

    কৃষাণী কনের কাঁকনের ঘায়ে ছিঁড়িয়া বুকের চাম,

    এই ধানক্ষেত নয়নের জলে ভাসিয়েছি অবিরাম।

    এইখানে বসে রাতের বেলায় বাঁশের বাঁশীর সুরে,

    মোর ব্যথাখানি ছড়ায়েছি তার সুদূর কৃষাণ-পুরে।

    এই ধানক্ষেত লুকাইয়া তার গোপন স্মৃতির চিন্,

    দেখিয়া দেখিয়া কাটিয়া গিয়াছে কত না দীর্ঘদিন।

    পথের কেনারে দাঁড়ায়ে রয়েছে আমার ধানের ক্ষেত,

    আমার বুকের আশা-নিরাশার বেদনার সঙ্গেত।

    বকের মেয়েরা গাঁথিয়া যতনে শ্বেত পালকের মালা,

    চারিধারে এর ঘুরিয়া ঘুরিয়া সাজায় সোনার ডালা।

    তাল বৃক্ষের উচু বাসা ছাড়ি বাবুই পাখির দল,

    কিসের মায়ায় সারা ক্ষেত ভরি ফিরিতেছে চঞ্চল।

    মাঝে মাঝে তারে জালে জড়াইয়া টেনে নিয়ে যেতে, চায়,

    সকাল-সাঁঝের আলো-ছায়া-ঘেরা সোনালী তটের ছায়!

    শিশির তাহারে মতির মালায় সাজায় সারাটি রাতি,

    জোনাকীরা তার পাতায় পাতায় দোলায় তারার বাতি।

    ধান ক্ষেত

    রাখালী কবিতা | রাখালী জসীম উদ্দীনের কবিতা

    এই গাঁয়েতে একটি মেয়ে চুলগুলি তার কালো কালো,

    মাঝে সোনার মুখটি হাসে আঁধারেতে চাঁদের আলো।

    রানতে বসে জল আনতে সকল কাজেই হাসি যে তার,

    এই নিয়ে সে অনেক বারই মায়ের কাছে খেয়েছে মার।

    সান করিয়া ভিজে চুলে কাঁখে ভরা ঘড়ার ভারে

    মুখের হাসি দ্বিগুণ ছোটে কোনমতেই থামতে নারে।

    এই মেয়েটি এমনি ছিল, যাহার সাথেই হত দেখা,

    তাহার মুখেই এক নিমেষে ছড়িয়ে যেত হাসির রেখা

    মা বলিত, বড়ুরে তুই, মিছেমিছি হাসিস্ বড়,

    এ শুনেও সারা গা তার হাসির চোটে নড় নড়!

    মুখখানি তার কাঁচা কাঁচা, না সে সোনার, না সে আবীর,

    না সে ঈষৎ ঊষার ঠোঁটে আধ-আলো রঙিন রবির!

    কেমন যেন গাল দুখানি মাঝে রাঙা ঠোঁটটি তাহার,

    মাঠে ফোটা কলমি ফুলে কতকটা তার খেলে বাহার।

    গালটি তাহার এমন পাতল ফুঁয়েই যেন যাবে উড়ে

    দু একটি চুল এলিয়ে পড়ে মাথার সাথে রাখছে ধরে।

    সাঁঝ-সকালে এ ঘর ও ঘর ফিরত যখন হেসে-খেলে;

    মনে হত ঢেউয়ের জ্বলে ফুলটিরে কে গেছে ফেলে!

    এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে ও পথ দিয়ে চলতে ধীরে

    ওই মেয়েটির রূপের গাঙে হারিয়ে গেল কলসটিরে।

    দোষ কি তাহার? ওই মেয়েটি মিছেমিছি এমনি হাসে,

    গাঁয়ের রাখাল! অমন রূপে কেমনে রাকে পরাণটা সে!

    এ পথ দিয়ে চলতে তাহার কোঁচার হুড়ুম যায় যে পড়ে,

    ওই মেয়েটি কাছে এলে আচঁলে তার দে সে ভরে।

    মাঠের হেলের নাস্তা নিতে হুকোর আগুন নিবে যে যায়,

    পথ ভুলে কি যায় সে নিতে, ওই মেয়েটি রানছে যেথায়?

    নিড়ের ক্ষেতে বারে বারে তেষ্টাতে প্রাণ যায় যে ছাড়ি,

    ভর-দুপুরে আসে কেবল জল খেতে তাই ওদের বাড়ি!

    ফেরার পথে ভুলেই সে যে আমের আঁটির বাশীটিরে,

    ওদের গরের দাওয়ায় ফেলে মাঠের পানে যায় সে ফিরে।

    ওই মেয়েটি বাজিয়ে তারে ফুটিয়ে তোলে গানের ব্যাথা,

    রাঙা মুখের চুমোয় চুমোয় বাজে সুখের মুখর কথা!

    এমনি করে দিনে দিনে লোক- লোচনের আড়াল দিয়া,

    গেঁয়ো স্নেহের নানান ছলে পড়ল বাঁধা দুইটি হিয়া!

    সাঁঝের বেলা ওই মেয়েটি চলত যখন গাঙের ঘাটে

    ওই ছেলেটির ঘাসের বোঝা লাগত ভারি ওদের বাটে।

    মাথার বোঝা নামিয়ে ফেলে গামছা দিয়ে লইত বাতাস,

    ওই মেয়েটির জল-ভরনে ভাসতে ঢেউয়ে রূপের উছাস।

    চেয়ে চেয়ে তাহার পানে বলত যেন মনে মনে,

    জল ভর লো সোনার মেয়ে! হবে আমার বিয়ের কনে?

    কলমী ফুলের নোলক দেব, হিজল ফুলের দেব মালা,

    মেঠো বাঁশী বাজিয়ে তোমায় ঘুম পাড়াব, গাঁয়ের বালা!

    বাঁশের কচি পাতা দিয়ে গড়িয়ে দেব নথটি নাকের,

    সোনা লতায় গড়ব বালা তোমার দুখান সোনা হাতের।

    ওই না গাঁয়ের একটি পাশে ছোট্র বেঁধে কুটিরখানি,

    মেঝের তাহার ছড়িয়ে দেব সরষে ফুলের পাঁপড়ি আনি।

    কাজলতলার হাটে গিয়ে আনব কিনে পাটের শাড়ী,

    ওগো বালা! গাঁয়ের বালা! যাবে তুমি আমার বাড়ি?”

    এই রুপেতে কত কথাই আসত তাহার ছোট্র মনে,

    ওই মেয়েটি কলসী ভরে ফিরত ঘরে ততক্ষণে।

    রুপের ভার আর বইতে নারে কাঁখখানি তার এলিয়ে পড়ে,

    কোনোরুপে চলছে ধীরে মাটির ঘড়া জড়িয়ে ধরে।

    রাখাল ভাবে, কলসখানি না থাকলে তার সরু কাঁখে,

    রুপের ভারেই হয়ত বালা পড়ত ভেঙে পথের বাঁকে।

    গাঙোন জল ছল-ছল বাহুর বাঁধন সে কি মানে,

    কলস ঘিরি উঠছে দুলি’ গেঁয়ো-বালার রুপের টানে।

    মনে মনে রাখাল ভাবে, “গাঁয়ের মেয়ে! সোনার মেয়ে।

    তোমার কালো কেশের মত রাতের আঁধার এল ছেয়ে।

    তুমি যদি বল আমায়, এগিয়ে দিয়ে আসতে পারি

    কলাপাতার আঁধার-ঘেরা ওই যে ছোট তোমার বাড়ি।

    রাঙা দু’খান পা ফেলে যাও এই যে তুমি কঠিন পথে,

    পথের কাঁটা কত কিছু ফুটতে পারে কোনমতে।

    এই যে বাতাস-উতল বাতাস, উড়িয়ে নিলে বুকের বসন,

    কতখন আর রুপের লহর তোমার মাঝে রইবে গোপন।

    যদি তোমার পায়ের খাডু যায় বা খুলে পথের মাঝে,

    অমর রুপের মোহন গানে সাঁঝের আকাশ সাজবে না যে।

    আহা ! আহা ! সোনার মেয়ে ! একা একা পথে চল,

    ব্যথায় ব্যথায় আমার চোখে জল যে ঝরে ছল ছল।”

    এমনিতর কত কথায় সাঁঝের আকাশ হত রাঙা,

    কখন হলুদ, আধ-হলুদ, আধ-আবীর মেঘ ভাঙা।

    তার পরেতে আসত আঁধার ধানের ক্ষেতে, বনের বুকে,

    ঘাসের বোঝা মাথায় লয়ে ফিরত রাখাল ঘরের মুখে।

    সেদিন রাখাল শুনল, পথে সেই মেয়েটির হবে বিয়ে,

    আসবে কালি ’নওশা’তাহার ফুল-পাগড়ী মাথায় দিয়ে।

    আজকে তাহার ’হলদি-ফোটা’ বিয়ের গানে ভরা বাড়ি,

    মেয়ে-গলার করুণ গানে কে দেয় তাহার পরাণ ফাড়ি’।

    সারা গায়ে হলুদ মেখে সেই মেয়েটি করছিল সান,

    কাঁচা সোনা ঢেলে যেন রাঙিয়ে দেছে তাহার গা’খানা।

    চেয়ে তাহার মুখের পানে রাখাল ছেলের বুক ভেঙে যায়।

    আহা ! আহা ! সোনার মেয়ে ! কেমন করে ভুললে আমায় ?

    সারা বাড়ি খুশীর তুফান-কেউ ভাবে না তাহার লাগি,

    মুখটি তাহার সাদা যেন খুনী মকর্দ্দমার দাগী।

    অপরাধীর মতন সে যে পালিয়ে এল আপন ঘরে,

    সারাটা রাত মরল ঝুরে কি ব্যথা সে বক্ষে ধরে।

    বিয়ের ক’নে ছলছে আজি শ্বশুর-বাড়ি পালকী চড়ে

    চলছে সাথে গাঁয়ের মোড়ল বন্ধু ভাই-এর কাঁধটি ধ’রে ।

    সারাটা দিন বিয়ে বাড়ির ছিল যত কল-কোলাহল

    গাঁয়ের পথে মূর্ত্তি ধরে তারাই যেন চলছে সকল।

    কেউ বলিছে, মেয়ের বাপে খাওয়াল আজ কেমন কেমন,

    ছেলের বাপের বিত্তি বেসাৎ আছে কি ভাই তেমন তেমন?

    মেয়ে-জামাই মিলছে যেন চাঁদে চাঁদে মেলা,

    সুর্য যেমন বইছে পাটে ফাগ-ছড়ান সাঁঝের বেলা!

    এমনি করে কত কথাই কত জনের মনে আসে,

    আশ্বিনেতে যেমনি তর পানার বহর গাঙে ভাসে।

    হায়রে আজি এই আনন্দ, যাবে লয়ে এই যে হাসি,

    দেখল না কেউ সেই মেয়েটির চোখদুটি যায় ব্যথায় ভাসি।

    খুঁজল না কেউ গাঁয়ের রাখাল একলা কাঁদে কাহার লাগি

    বিজন রাতের প্রহর থাকে তাহার সাথে ব্যথায় জাগি।

    সেই মেয়েটির চলা-পথে সেই মেয়েটির গাঙের ঘাটে

    একলা রাখাল বাজায় বাঁশী ব্যথার ভরা গাঁয়ের বাটে।

    গভীর রাতে ভাটীর সুরে বাঁশী তাহার ফেরে উদাস

    তারি সাথে কেঁপে কেঁপে কাঁদে রাতের কালো বাতাস।

    করুণ করুণ-অতি করুণ বুকখানি তার উতল করে,

    ফেরে বাঁশীর সুরটি ধীরে ধীরে ঘুমো গাঁয়ের ঘরে ঘরে।

    “কোথায় জাগো বিরহিণী ! ত্যজি বিরল কুটিরখানি,

    বাঁশীর ভরে এস এস ব্যথায় ব্যথায় পরাণ হানি।

    শোন শোন দশা আমার, গহন রাতের গলা ধরি’

    তোমার তরে ও নিদয়া, একা একা কেঁদে মরি।

    এই যে জমাট রাতের আঁধার, আমার বাঁশী কাটি তারে,

    কোথায় তুমি, কোথায় তুমি, কেঁদে মরে বারে বারে।”

    ডাকছাড়া তার কান্না শুনি একলা নিশা সইতে নারে,

    আঁধার দিয়ে জড়ায় তারে, হাওয়ায় দোলায় ব্যথার ভারে।

    রাখালী


    Tag: জসীম উদ্দীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, জসিম উদ্দিনের কবিতা, জসিম উদ্দিনের কবিতা সমগ্র, নকশী কাঁথার মাঠ কবিতা, নকশী কাঁথার মাঠ জসীম উদ্দিনের কবিতা, ধান ক্ষেত কবিতা, ধানক্ষেত জসীম উদ্দীনের কবিতা, রাখালী কবিতা, রাখালী জসীম উদ্দীনের কবিতা,