যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতা সমগ্র | Jatindramohan Bagchi poem
যতীন্দ্রমোহন বাগচী শ্রেষ্ঠ কবিতা | যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা
টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি বারকাতুহু । প্রিয় পাঠকবৃন্দ কেমন আছেন আপনারা সবাই ? আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আমিও ভাল আছি। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম যতীন্দ্রমোহন বাগচীর শ্রেষ্ট কবিতা, যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা, । আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
অন্ধ বধূ কবিতা | অন্ধবধূ যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা
পায়ের তলায় নরম ঠেকল কী!
আস্তে একটু চলনা ঠাকুর-ঝি —
ওমা, এ যে ঝরা-বকুল ! নয়?
তাইত বলি, বদোরের পাশে,
রাত্তিরে কাল — মধুমদির বাসে
আকাশ-পাতাল — কতই মনে হয় ।
জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরি ভাই —
আমের গায়ে বরণ দেখা যায় ?
—অনেক দেরি? কেমন করে’ হবে !
কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে,
দখিন হাওয়া —বন্ধ কবে ভাই ;
দীঘির ঘাটে নতুন সিঁড়ি জাগে —
শেওলা-পিছল — এমনি শঙ্কা লাগে,
পা-পিছলিয়ে তলিয়ে যদি যাই!
মন্দ নেহাৎ হয়না কিন্তু তায় —
অন্ধ চোখের দ্বন্ধ চুকে’ যায়!
দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্ ,
অন্ধ গেলে কী আর হবে বোন?
বাঁচবি তোরা —দাদা তো তার আগে?
এই আষাড়েই আবার বিয়ে হবে,
বাড়ি আসার পথ খুঁজে’ না পাবে —
দেখবি তখন —প্রবাস কেমন লাগে ?
—কী বল্লি ভাই, কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল ?
হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল !
কত লোকেই যায় তো পরবাসে —
কাল-বোশেখে কে না বাড়ি আসে ?
চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ !
পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর,
তোমার ভায়ের সবই স্বতন্তর —
ফিরে’ আসার নাই কোন উদ্দেশ !
—ঐ যে হথায় ঘরের কাঁটা আছে —
ফিরে’ আসতে হবে তো তার কাছে !
এই খানেতে একটু ধরিস ভাই,
পিছল-ভারি — ফসকে যদি যাই —
এ অক্ষমার রক্ষা কী আর আছে !
আসুন ফিরে’ — অনেক দিনের আশা,
থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা —
তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে!
জন্ম শোধের বিদায় নিয়ে ফিরে’ —
সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে।
’চোখ গেল ঐই চেঁচিয়ে হ’ল সারা।
আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা —
জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ !
কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার — ছাই!
কাঁদতে গেলে বাঁচত সে যে ভাই,
কতক তবু কমত যে তার শোক!
’চোখ’ গেল– তার ভরসা তবু আছে —
চক্ষুহীনার কী কথা কার কাছে !
টানিস কেন? কিসের তাড়াতাড়ি —
সেই তো ফিরে’ যাব আবার বাড়ি,
একলা-থাকা-সেই তো গৃহকোণ —
তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে
দুটো যেন প্রাণের কথা বলে —
দরদ-ভরা দুখের আলাপন
পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মতো
ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত !
এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে
অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে —
বন্ধ চোখের অশ্রু রুধি পাতায়,
জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে
চির-বিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে —
সকল বালাই বহি আপন মাথায় ! —
দেখিস তখন, কানার জন্য আর
কষ্ট কিছু হয় না যেন তাঁর।
তারপরে – এই শেওলা-দীঘির ধার —
সঙ্গে আসতে বলবনা’ক আর,
শেষের পথে কিসের বল’ ভয় —
এইখানে এই বেতের বনের ধারে,
ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে —
সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়।
শেওলা দীঘির শীতল অতল নীরে —
মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে’!
সংকলিত
অপরাজিতা কবিতা | অপরাজিতা যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতা
পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে,
তবু কেন তোর অপরাজিতা নাম?
বর্ণ-সেও ত নয় নয়নাভিরাম |
ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি ;
রূপগুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি!
কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে—
ফুল কহে—মোর কিছু নাই কিছু নাই,
ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাই নাক,
বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ |
মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে,
পূজা-শুধু-পূজা জীবনের মোর ব্রত ;
তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে—
সংকলিত
যৌবন-চাঞ্চল্য কবিতা | যৌবন-চাঞ্চল্য যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা
ভুটিয়া যুবতি চলে পথ;
আকাশ কালিমামাখা কুয়াশায় দিক ঢাকা।
চারিধারে কেবলই পর্বত;
যুবতী একেলা চলে পথ।
এদিক-ওদিক চায় গুনগুনি গান গায়,
কভু বা চমকি চায় ফিরে;
গতিতে ঝরে আনন্দ উথলে নৃত্যের ছন্দ
আঁকাবাঁকা গিরিপথ ঘিরে।
ভুটিয়া যুবতি চলে পথ।
টসটসে রসে ভরপুর--
আপেলের মত মুখ আপেলের মত বুক
পরিপূর্ণ প্রবল প্রচুর;
যৌবনের রসে ভরপুর।
মেঘ ডাকে কড়-কড় বুঝিবা আসিবে ঝড়,
একটু নাহিকো ডর তাতে;
উঘারি বুকের বাস, পুরায় বিচিত্র আশ
উরস পরশি নিজ হাতে!
অজানা ব্যাথায় সুমধুর--
সেথা বুঝি করে গুরুগুরু!
যুবতি একেলা পথ চলে;
পাশের পলাশ-বনে কেন চায় অকারণে?
আবেশে চরণ দুটি টলে--
পায়ে-পায়ে বাধিয়া উপলে!
আপনার মনে যায় আপনার মনে গায়,
তবু কেন আনপানে টান?
করিতে রসের সৃষ্টি চাই কি দশের দৃষ্টি?
--স্বরূপ জানেন ভগবান!
সহজে নাচিয়া যেবা চলে
একাকিনী ঘন বনতলে--
জানি নাকো তারো কী ব্যাথায়
আঁখিজলে কাজল ভিজায়!
সংকলিত
কেয়াফুল কবিতা | কেয়া ফুল যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা
ফুল চাই ---- চাই কেয়াফুল!----
সহসা পথের ’পরে
আমার এ ভাঙ্গা ঘরে
কন্ঠ কার ধ্বনিল আকুল।
তখনো শ্রাবণ-সন্ধ্যা
নিঃশেষে হয়নি বন্ধ্যা-----
থেকে থেকে ঝরিতেছে জল;
পবন উঠিছে জেগে,
বিজলী ঝলিছে বেগে------
মেঘে মেঘে বাজিছে মাদল।
জনহীন ক্ষুব্ধ পথ
জাগিছে দুঃস্বপ্নবৎ----
বুকে চাপি’ আর্ত্ত অন্ধকার;
কোনমতে কাজ সারি’
যে যার ফিরিছে বাড়ী,
ঘরে ঘরে বন্ধ যত দ্বার।
শূন্য ঘরে
হিয়া গুমরিয়া মরে
স্মরি’ যত জীবনের ভুল;
অকস্মাৎ তারি মাঝে
ধ্বনি কার কানে বাজে-----
চাই ফুল----চাই কেয়াফুল!
পাগল! আজি এ রাতে
এ দুর্য্যোগ-অভিঘাতে----
বৃষ্টিপাতে বিলুপ্ত মেদিনী;
তার মাঝে কে আছে,
কেতকী-সৌরভ যাচে!
কোথায় বা হবে বিকিকিনি?
পবন উঠিছে মাতি!
কিছুক্ষণ কান পাতি’
মনে হ’ল গিয়াছে বালাই;
সহসা আমারি দ্বারে
ডাক এল একেবারে----
চাই ফুল --- কেয়াফুল চাই!
ভাবিলাম মনে মনে-----
হয়ত বা এ জীবনে
কোনোদিন কিনেছিনু ফুল;
সেই কথা মনে ক’রে
আজো বা আশায় ঘোরে;
কিম্বা কারে করিয়াছে ভুল!
তাড়াতাড়ি আলো তুলি’
বাহিরিনু দ্বার খুলি,
সবিস্ময়ে দেখিলাম চেয়ে----
মাথায় বৃহৎ ডালা,
দাঁড়ায়ে পসারী-বালা-----
শ্রাবণ ঝরিছে অঙ্গ বেয়ে;
কহিলাম, এ কি কান্ড!
তোমার পসরাভান্ড
আজ রাতে কে কিনিবে আর ?
এ প্রলয়ে কারো কাছে
কিছু কি প্রত্যাশা আছে-----
কেন মিছে বহিছ এ ভার!
আর্দ্র দেহে আর্দ্র বাসে
সে কহিল মৃদু হাসে,-----
শিরে বায়ু সুগন্ধ ছড়ায়----
যে ফুল বেসাতি করি,
বাদল যে শিরে ধরি,-----
কপালে লিখিল বিধি তাই!
বহিয়া দুখের ঋণ
যে কষ্টে কাটাই দিন-----
এ দুর্দ্দিন কিবা তার কাছে?
ওগো তুমি নেবে কিছু?
নয়ন হইল নীচু----
সেথাও বা মেঘ নামিয়াছে!
খোলা দরজার পাশে
বায়ু গরজিয়া আসে,
ফুলবাসে ভরি দেহ-মন;
ঝর-ঝর ঝরে জল,
আঁখি করে ছল-ছল
ঘনাইয়া প্রাণের শ্রাবণ!
বাদলের বিহ্বলতা----
বুঝি হায়! লাগিল তা’
নয়নে বচনে সর্ব্ব দেহে;
সহসা চাহিয়া আড়
রমণী ফিরাল ঘাড়-----
উর্দ্ধে যেন কি দেখিবে চেয়ে!
না কহিয়া কোন বাণী
পসরা লইনু টানি’-----
মূল্য তার হাতে দিনু যবে,
উজার করিতে ডালা
কাঁদিয়া ফেলিল বালা------
ওমা এ কি ---- এত কেন হবে?
কহিনু ---যা’ কিনিলাম,
এ নহে তাহারি দাম-----
প্রতিদিন দিতে হবে মোরে;
এক পণ দুই পণ----
যেদিন যেমন মন,
তাহারি আগাম দিনু তোরে;
কতক বুঝে’ না-বুঝে’
হৃদয়ের ভাষা খুঁজে’
বহুকষ্টে জানাইয়া তাই,
পুষ্পগন্ধে মোরে ঘিরে’
অন্ধকারে ধীরে-ধীরে
পসারিনী লইল বিদায়।
ফিরিনু একলা ঘরে-----
বাদল তখনো ঝরে,
পুষ্পগন্ধে পূর্ণ গৃহতল;
শয্যা লইলাম পাতি’
নিবায়ে দিলাম বাতি----
আবার আসিল বেগে জল!
রুদ্ধ জানালার ফাঁকে
বাতাস কাহারে ডাকে,
বিজলী চমকি’ কারে চায়!
কোন্ অন্ধ অনুরাগে
ত্রিযামা যামিনী জাগে
শ্রাবণ ব্যাকুল-ব্যর্থতায়!
সঙ্গীহীন শূন্য ঘরে
হিয়া গুমরিয়া মরে----
স্মরিয়া এ জীবনের ভুল;
সেই সাথে থেকে- থেকে
মনে হয় --- গেল ডেকে’
কাননের যত কেয়াফুল!
সংকলিত
কাজলা দিদি কবিতা | কাজলা দিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা
বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক'রে রবে?
আমিও নাই---দিদিও নাই---কেমন মজা হবে!
ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |
বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,---
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
সংকলিত
Tag: যতীন্দ্রমোহন বাগচী শ্রেষ্ঠ কবিতা, যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা, যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতা সমগ্র, অন্ধ বধূ কবিতা, অন্ধবধূ যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা, অপরাজিতা কবিতা, অপরাজিতা যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতা, যৌবন-চাঞ্চল্য কবিতা, যৌবন-চাঞ্চল্য যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা, কেয়াফুল কবিতা, কেয়া ফুল যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা, কাজলা দিদি কবিতা, কাজলা দিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতা,