কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নারী কবিতা | ধর্ষিতা নারী ও নারী দিবসের কবিতা
নারী কবিতা
টাইম অফ বিডির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি । আপনারা অনেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী নিয়ে বেশ কিছু কবিতা হয়তো খুঁজছেন আর তাই আমরা আমাদের আজকের এই পোস্টে নারী দের নিয়ে বিভিন্ন কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছি।আমাদের আজকের পোস্টট তৈরি করেছে যা তা নিয়ে তা হল নারী কবিতা , নারী নিয়ে কবিতা , ধর্ষিতা নারী কবিতা, নারী দিবসের কবিতা , নারী কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম, নারী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।আশা করি পুরো পোস্টটি আপনারা ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন এবং আপনাদের ভালো লাগবে।
নারী নিয়ে কবিতা
সংসার করতে এসে রুটি গোল করা টা শিখে গেছি,
কিন্তু হাসতে ভুলে গেছি।
সংসার করতে এসে রান্না শিখে গেছি
কিন্তু চুল বাঁধতে ভুলে গেছি।
সংসার করতে এসে সবার খেয়াল করতে শিখে গেছি,
কিন্তু নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে গেছি।
সংসার করতে এসে পরিবার মেইন্টেন করতে শিখে গেছি,
কিন্তু নিজেকে নিজের পরিচালনা করা ভুলে গেছি।
সংসার করতে এসে রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে সবার মুখে যথা সময় খাবার তুলে দিয়েছি।
কিন্তু নিজের সেই পোড়া ঘায়ে মলম দিতে ভুলে গেছি।
সংসার করতে গিয়ে রাতে সবাই কে খাওয়াইয়ে আনন্দ দিতে শিখে গেছি,
ঠোটের এক কোনে হাসি দিয়ে ধন্যবাদ শোনার বিনিময়ে ক্লান্ত হয়ে নিজে না খেয়ে শুয়ে পরেছি।
সংসার করতে গিয়ে ২৪ ঘন্টার সার্ভিস দিতে শিখে গেছি, কিন্তু নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করাতে ভুলে গেছি
সংসার করতে গিয়ে চিরজীবনের জন্য নিজেকে বিসর্জন দেয়া শিখে গেছি,
বিনিময়ে চিতার আগুন পেয়েছি।
সংসার করতে গিয়ে ওপর পাশের হুংকার গ্রহণ করা শিখে গেছি,
পাওনা হিসেবে চোখের পানি ফেলেছি।
সংসার করতে গিয়ে স্বামীর পকেট সেফ করা শিখে গেছি,
প্রাপ্য হিসেবে বিলাসিতা ভুলে গেছি।
সংসার করতে গিয়ে দশ দিক সামলানো শিখে গেছি..
সুনাম হিসেবে সারাজীবনের অলসতার প্রাইজ পেয়েছি,,।
সংসার করতে গিয়ে নিজের কাছে নিজেকেই অচেনা বানিয়ে ফেলেছি।।
এটাই আমরা নারী।।
এটাই আমাদের জীবন।।।
ধর্ষিতা নারী কবিতা
"আমি নারী তাই "
তারেক আল মুনতাছির
আমি নারী তাই,
সৃষ্টির বােঝা শরীরে ধরি।
আমি নারী তাই,
গঙ্গার স্রোত ধারণ করি।
আমি নারী তাই,
পড়ালেখায় বিভোর নই,
আমি নারী তাই,
পাঁচ পতিকে নিয়ে ঘর করি।
আমি নারি তাই,
গাছকে পতিদেবতা রূপে মানি।
আমি নারী তাই
দেবদাসীর শৃঙ্খল হাতে পরি।
আমি নারী তাই,
পণ দিয়েও বিক্রি হয়ে চলি।
আমি নারী তাই,
আজো সতীত্বের পরীক্ষা দিই।
আমি নারী তাই,
রাস্তাঘাটে রােজ ধর্ষিতা হই।
আমি নারী তাই,
স্বামীর লীলাখেলা সহ্য করি।
আমি নারী তাই,
সতীনের সঙ্গে ঘর করি।
আমি নারী তাই,
উপবাস করে স্বামীর আয়ু বাড়াই।
আমি নারী তাই,
স্বামীর চিতায় জ্যান্ত উঠে জুলি।
আমি নারী তাই,
সব অপবাদ নীরবে সহ্য করি।
আমি নারী তাই,
মুখ বুজে শুধু অগ্নি-পরীক্ষা দিই।
আমি নারী তাই,
পাতালে প্রবেশ করে লজ্জা ঢাকি।
নারী দিবসের কবিতা
আরোগ্য
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
"নারী তুমি ধন্যা--
আছে ঘর, আছে ঘরকন্না।
তারি মধ্যে রেখেছ একটুখানি ফাঁক।
সেথা হতে পশে কানে বাহিরের দুর্বলের ডাক।
নিয়ে এসো শুশ্রূষার ডালি,
স্নেহ দাও ঢালি।
যে জীবলক্ষ্মীর মনে পালনের শক্তি বহমান,
নারী তুমি নিত্য শোন তাহারি আহ্বান।
সৃষ্টিবিধাতার
নিয়েছ কর্মের ভার,
তুমি নারী
তাঁহারি আপন সহকারী।
উন্মুক্ত করিতে থাকো আরোগ্যের পথ,
নবীন করিতে থাকো জীর্ণ যে-জগৎ,
শ্রীহারা যে তার 'পরে তোমার ধৈর্যের সীমা নাই,
আপন অসাধ্য দিয়ে দয়া তব টানিছে তারাই।
বুদ্ধিভ্রষ্ট অসহিষ্ঞু অপমান করে বারে বারে,
চক্ষু মুছে ক্ষমা কর তারে।
অকৃতজ্ঞতার দ্বারে আঘাত সহিছ দিনরাতি,
লও শির পাতি।
যে অভাগ্য নাহি লাগে কাজে,
প্রাণলক্ষ্মী ফেলে যারে আবর্জনা-মাঝে,
তুমি তারে আনিছ কুড়ায়ে,
তার লাঞ্ছনার তাপ স্নিগ্ধ হস্তে দিতেছ জুড়ায়ে।
দেবতারে যে পূজা দেবার
দুর্ভাগারে কর দান সেই মূল্য তোমার সেবার।
বিশ্বের পালনী শক্তি নিজ বীর্যে বহ চুপে চুপে
মাধুরীর রূপে।
ভ্রষ্ট যেই, ভগ্ন যেই, বিরূপ বিকৃত,
তারি লাগি সুন্দরের হাতের অমৃত।"
নারী কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম
নারী
-কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-
রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান
সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ
বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর
অর্ধেক তার নারী।
নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’
করে নারী হেয় জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে,
সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর
নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই নর ও
নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল,
ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-
গন্ধ সুনির্মল। তাজমহলের পাথর
দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী,
বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী,
শষ্য-লক্ষী নারী,
সুষম-লক্ষী নারীওই
ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের
জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ
কামিনী এনেছে যামিনী শান্তি সমীরণ
বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস,
নিশিথে হয়েছে বঁধু
পুরুষ
এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,পুরুষ
চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শষ্য
রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল,সেই জল
মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল
সোনালী ধানের শীষে
স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
নারীর অঙ্গ-পরশ
লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর
পেল কবি-প্রাণ
যত কথা হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল
সুঢা,সুঢায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের
মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড়
অভিযান
মাতা ভগ্নি বধুদের
ত্যাগে হইয়াছে মহান।
কোন রণে কত খুন দিল নর,
লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর,
লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত
বোন দিল সেবা
বীর স্মৃতি স্তম্ভের
গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক
জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে,
শক্তি দিয়েছে বিজয়
লক্ষী নারী।
নারী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুমি এ মনের সৃষ্টি, তাই মনােমাঝে
এমন সহজে তব প্রতিমা বিরাজে।
যখন তােমারে হেরি জগতের তীরে
মনে হয় মন হতে এসেছ বাহিরে।
যখন তােমারে দেখি মনােমাঝখানে
মনে হয় জন্ম-জন্ম আছ এ পরানে।
মানসীরূপিণী তুমি, তাই দিশে দিশে
সকল সৌন্দর্যসাথে যাও মিলে মিশে।
চন্দ্রে তব মুখশােভা, মুখে চন্দ্রোদয়,
নিখিলের সাথে তব নিত্য বিনিময়।
মনের অনন্ত তৃষ্ণা মরে বিশ্ব ঘুরি,
মিশায় তােমার সাথে নিখিল মাধুরী।
তার পরে মনগড়া দেবতারে মন
ইহকাল পরকাল করে সমর্পণ।
Tag:নারী কবিতা , নারী নিয়ে কবিতা , ধর্ষিতা নারী কবিতা, নারী দিবসের কবিতা , নারী কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম, নারী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর