প্রবন্ধ রচনা - বাংলাদেশের ষড়ঋতু



প্রবন্ধ রচনা - বাংলাদেশের ষড়ঋতু




 প্রবন্ধ রচনা - বাংলাদেশের ষড়ঋতু  


 সূচনা : বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ । ভৌগােলিক কারণে এখানকার প্রকৃতি ষড়ঋতুর চক্রে আবর্তিত হয় । মধ্যমমানের সূর্যতাপ ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এখানকার পরিবেশকে রেখেছে নাতিশীতােষ্ণ । তাই প্রতি দুই মাস পর পর এখানকার প্রকৃতি ধারণ করে ভিন্নরূপ । ঋতুতে ঋতুতে চলে এখানে সাজবদলের পালা । সে কারণেই বুঝি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় । জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে তুমি বিচিত্ররূপিনী ॥ ষড়ঋতুর পরিচয় : পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ঋতুর সংখ্যা চারটি হলেও বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ । এখানে প্রতি দুই মাস অন্তর নতুন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে । ঋতুগুলাে হলাে- গ্রীষ্ম , বর্ষা , শরৎ , হেমন্ত , শীত ও বসন্ত । এ ছয়টি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয় এবং প্রকৃতিকে করে তােলে অপরূপ বৈচিত্র্যে বৈচিত্র্যময় । তাই প্রকৃতিপ্রেমিকের উচ্চারণ- Bangladesh is the favourite playground of nature , decorated with six seasons . 


গ্রীষ্মকাল : ঋতু আবর্তনের শুরুতেই আসে গ্রীষ্মকাল । বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস গ্রীষ্মকাল । গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে খাল - বিল , ডােবা , পুকুর শুকিয়ে যায় । নদ - নদীর পানি কমে যায় । মাঠ - ঘাট খাঁ খাঁ করতে থাকে । সবুজ ঘাসের উপর পড়ে ধুলার আস্তরণ । প্রকৃতিতে কখনাে তিন চার দিন গুমােট ভাব পরিলক্ষিত হয় । আবার কখনাে শুরু হয় কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্য । ভেঙে যায়

গাছপালা , ঘরবাড়ি ; লণ্ডভণ্ড করে দেয় সবকিছু । অন্যদিকে বাংলার প্রকৃতি অকৃপণ হাতে উপহার দেয় আম , জাম , লিচু , কাঁঠাল ইত্যাদি । গ্রীষ্মের রােদের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবির মুখে শােভা পায় 

“ রােদ যেন নয় শুধু ঘন ঘন ফুলকি আগুনের ঘােড়া যেন ছুটে চলে দুলকি । ”


জেএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র প্রবন্ধ রচনা    


 বর্ষাকাল : গ্রীষ্মের পরেই বর্ষা আসে মহাসমারােহে । আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল । দিগ্বিজয়ী যােদ্ধার বেশেই বর্ষা ঋতুর আবির্ভাব । মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে উঠে । শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টিপাত । নদী - নালা ও খাল - বিল পানিতে ভরে যায় । অনেক সময় দিনের পর দিন আকাশে সূর্যের মুখ দেখা যায় না । সারাদিন মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হয় । প্রকৃতিতে ফিরে আসে সজীবতা । জমিতে জমিতে ধান , কৃষকের মুখে হাসির বান । এ প্রসঙ্গে কবি উল্লেখ করেন ।


এসএসসি বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা     

 “ বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর । আউসের ক্ষেত জলে ভর ভর কালিমাখা মেঘে উপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহিরে , ওগাে , আজ তােরা " যাস নে ঘরের বাহিরে । ”


 শরৎকাল : বর্ষা শেষে বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আসে শরৎ । ভাদ্র - আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল । তখন প্রকৃতিতে বিরাজ করে এক মনােমুগ্ধকর অবস্থা । এ রূপের জন্যই শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানি । আকাশে তখন সাদা মেঘ দল বেঁধে ভেসে বেড়ায় । শরতের মায়াময় রৌদ্র কিরণে প্রকৃতি চঞ্চল হয়ে উঠে ।

JSC bangla 2nd Paper pdf  

গাছ - পালা , তরু - লতায় তখন দেখা যায় সবুজের সমারােহ । সৌন্দর্যে বিমােহিত কবির উচ্চারণ 


“ আজিকে তােমার মধুর মুরতি 

হেরিনু শারদ প্রভাতে ।


 হেমন্তকাল : ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের আনন্দ নিয়ে আগমন ঘটে হেমন্তের । কার্তিক - অগ্রহায়ণ দুই মাস এ ঋতু বিরাজ করে । মাঠে মাঠে তখন ফসল কাটার গান । ঘরে ঘরে চলে নবান্ন উৎসব ; আত্মীয়স্বজনকে পিঠাপুলি খাওয়ানাের নিমন্ত্রণ । প্রভাতে সূর্যকিরণে দূর্বাঘাসের উপরে শিশির বিন্দুগুলাে মুক্তার মতাে উজ্জ্বল হয়ে উঠে । হেমন্ত প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন

 “ কী শােভা কী ছায়া গাে কী স্নেহ কী মায়া গাে কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে নদীর কূলে কূলে । ”


শীতকাল : কুয়াশার মলিন চাদর গায়ে উত্তরের ঠাণ্ডা হাওয়া সাথে নিয়ে আসে শীত । পৌষ - মাঘ দুই মাস শীতকাল । প্রকৃতি তখন শীর্ণ , শুষ্ক ও স্নান । সর্বত্রই রিক্ততার আভাস । উত্তুরে হাওয়া বইতে থাকে । লেপ , চাদর ও গরম কাপড় মুড়ি দিয়ে সবাই শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে । মানুষের মন থাকে ক্লান্ত ও নিস্তেজ । তবু খেজুর রসের পায়েস , টাটকা শাকসবজি , নানা রকমের পিঠা বাঙালির জীবনে বয়ে আনে খুশির জোয়ার । এ খুশিতে একাত্ম হয়ে কবি গেয়ে উঠেন— 

“ পৌষ - পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে , আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে । ” 


Jsc bangla pdf book

বসন্তকাল : সবশেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত । ফাল্গুন - চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল । তখন গাছে গাছে ফুল , ফুলে ফুলে অলি , সুন্দর ধরাতল । পাখির কলকাকলি , কোকিলের সুমধুর তান , দক্ষিণের হাওয়া , আম্রমুকুলের গন্ধ , ফুলের সমারােহ প্রভৃতি মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব মায়ালােক । মানুষের প্রাণে তখন আনন্দের জোয়ার । আনন্দে আত্মহারা কবি গেয়ে উঠেন 

“ ওগাে দখিনা মলয় , আজি তব পরশনে কার কথা পড়ে মনে । মধুপ হয়েছে আজি পাগলপারা কুসুমে কুসুমে তাই জেগেছে সাড়া । ” 


উপসংহার : প্রকৃতির নিয়মে আমাদের এ লীলাভূমি বিভিন্ন সময় সজ্জিত হয় নানা সাজে । ঋতুচক্রের খেলায় প্রকৃতি আলপনা আঁকে মাটির বুকে , আকাশের গায়ে , মানুষের মনে । তাই ঋতু বদলের সাথে সাথে এখানে জীবনের রঙও বদলায় । তার প্রভাব পড়ে মানুষের মনে । রূপবৈচিত্র্যের এ প্রাকৃতিক খেলার কারণেই বাংলার মানুষের মন এত উদার ও ভালােবাসায় পূর্ণ ।