অধ্যবসায় রচনা, অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট,বাংলা রচনা অধ্যবসায়, প্রবন্ধ রচনা অধ্যবসায়
অধ্যবসায় রচনা, অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট, অধ্যবসায় রচনার ২০ পয়েন্ট,
রচনা অধ্যবসায়, অধ্যবসায় রচনা ৩০ পয়েন্ট, বাংলা রচনা অধ্যবসায়
- সূচনা
- অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
- অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়
- ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়
- অর্থনীতি ও অধ্যবসায়
- প্রতিভা ও অধ্যবসায়
- অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত
- জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়
- অধ্যবসায়ের চর্চা
- অধ্যবসায়ের অপব্যবহার
- অধ্যবসায়ের শিক্ষা
- অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি
- উপসংহার
অধ্যবসায় রচনা
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়:
জীবনে চলারপথ কুসুমাইস্তীর্ণ নয়। জীবনের পথপরিক্রমায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আর এই সমস্যা মােকাবিলার উপায় অধ্যবসায় অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনাে মহৎ কাজ সম্ভব নয়। কবির ভাষায়
‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ?'
মূলত এ উদ্যম অধ্যবসায়েরই নামান্তর। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর নিজের ভিতর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করার জন্যে প্রয়োজন অধ্যবসায়। অনেকে মনে করেন বড় কাজের জন্যে অনেক প্রতিভার প্রয়োজন। আসলে যেকোনো কাজের জন্যে চাই নিরলস পরিশ্রম আর এর মাধ্যমেই বিকশিত হবে প্রতিভা।
এ বিষয়ে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এর উক্তিটি উল্লেখযোগ্য -
"প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।"
পরিশ্রম ও অধ্যবসায় এক সূত্রে গাঁথা। অধ্যবসায়হীন মানুষ পঙ্গু। জীবনে সাফল্য নিজ হাতে ধরা দেয় না। বিশ্বখ্যাত আইরিশ কবি, লেখক ও নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন -
"সাফল্য একটি বিজ্ঞান। সঠিক উপাদান মেশালে তুমি সঠিক ফলাফল পাবে"
- আর সঠিক উপাদানটি হলো অধ্যবসায়।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়:
ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন রচনার অনুশীলনক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ সূচনা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সংযােগ। বারবার পাঠ অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে রচিত হয় জীবনের সাফল্যের বুনিয়াদ। অধ্যবসায় না থাকলে কেবল মেধা কাজে লাগে না। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী যথেষ্ট প্রয়াসের অভাবে জীবনে সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় গুরুত্ব অনেক। অনেক সময় দেখা যায় অধ্যবসায় এর অভাবে কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর হাল ছেড়ে দেয়। বিশ্ব বিখ্যাত রক মিউজিশিয়ান বন জোভি বলেছেন -
“সাফল্য মানে ৯ বার পড়ে গিয়ে ১০ম বার উঠে দাঁড়ানো”
অর্থনীতি ও অধ্যবসায় :
একটি দেশের অর্থনীতি নির্ভির করে সে দেশের মানুষ কতটা পরিশ্রমী। একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো নির্মাণ হয় ওই দেশের মানুষ দ্বারা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনুন্নত দেশের মানুষ উন্নত দেশের মানুষের চেয়ে কম পরিশ্রমী। উন্নত বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে অধ্যবসায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। দেশের অর্থনীতি যদি শক্তিশালী না হয় তবে সে দেশে দেখা দেয় নানা সমস্যা। অর্থের অভাবে সে দেশে উন্নয়ন হয় মন্থর। কাজেই অধ্যবসায় একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করতে।
প্রতিভা ও অধ্যবসায়:
অনেকেই ভেবে থাকেন, প্রতিভাই সফলতার মূল নিয়ামক। এ ধারণা পুরােপুরি গ্রহণযােগ্য নয়। অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। প্রতিভাবানদের জীবনেও আত্মপ্রতিষ্ঠা আসে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। একজন মানুষের সফল বা ব্যর্থ হওয়া তার ক্ষমতার ওপর যতটা না নির্ভর করে, তারচেয়ে বেশি তার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে। যারা সফল হয়, তারা সফল হওয়ার আগে থেকেই সফল মানুষের মত আচরণ করে। এই বিশ্বাসই একদিন সত্যিতে পরিনত হয়।
"Impossible is a Word, Which is Only Found in The Dictionary of Fools"
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়:
জাতির গৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রত্যেক নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন। জাতীয় জীবনে অধ্যবসারে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিজীবনে তার অনুশীলন প্রয়ােজন। এদিক থেকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনেকখানি। মানুষ তিল তিল করে আজকের সভ্যতাকে গড়ে তুলেছে অধ্যবসায় দ্ধারা। মানুষ অন্ধরকার থেকে শুরু আকাশ জয় করেছে। পাড়ি জমাচ্ছে চাঁদে। এ সবের পিছনে ছিল অধ্যবসায়ের সাধনা। অধ্যবসায়ের দরুন মানুষ আবিষ্কার করছে নতুন নতুন প্রযুক্তি আর সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরি করছে আকাশ ছোঁয়া দালান। আর এর মাধ্যমে বিকাশ ঘটছে সভ্যতার এবং জাতীয় জীবনের।
অধ্যবসায়ের চর্চা:
অধ্যবসায় এমন একটি গুন যা জন্মগতভাবে লাভ করা যায় না। একটা অর্জন করে নিতে হয়। তাহলেই আসবে সাফল্য। আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছেন -
“সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে”
মাতৃগর্ভ থেকে যে শিশু পৃথিবীতে আসে সে প্রথমে হাটতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অল্প অল্প করে হাটতে শিখে। তাই আমাদের উচিত ছোট বেলা থেকেই অধ্যবসায়ের চর্চা করা।
চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা মাও সে তুং বলেছেন -
“সন্তানের সাফল্য চাইলে তাকে মাছ খেতে দেয়ার বদলে মাছ ধরতে শেখাও”
শুরুর ভিত্তি যদি মজবুত হয় তাহলে সাফল্য নিকটে আসে। আমরা নিজ নিজ স্থান থেকে অধ্যবসায়ের চর্চা করতে পারি এটা হতে পারে একজন ছাত্র, একজন ব্যবসায়ী, হতে পারে শিক্ষক, কুলি দিন মজুর ইত্যাদি।
আমেরিকান বিলিওনেয়ার ওয়ারেন বাফেট বলেছেন-
“ব্যবসার জগতে তারাই সবচেয়ে বেশি সফল, যারা তাদের সবচেয়ে ভালোলাগার কাজটি করছে”
অধ্যবসায়ের অপব্যবহার:
মানুষ সামাজিক জীব। স্বভাবগত কারণে মানুষের লোভের প্রভিত্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সমাজের অনেক লোক আছেন যারা সাফল্যকে কিনে নেন টাকার দাম দিয়ে। অর্থাৎ বিনা পরিমশ্রমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার লালসা বুকে ধারণ করে অন্যায় ও অসাধু পথে অধ্যবসায়কে বেছে নেয়। রাতারাতি সাফল্য পাওয়ার আকাঙ্খা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই হয়। এ প্রসঙ্গে এ্যাপল কম্পিউটার্স এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বলেছেন -
“রাতারাতি সাফল্য বলতে কিছু নেই। মনোযোগ দিলে দেখবে সব সাফল্যই অনেক সময় নিয়ে আসে”
অধ্যবসায়ের অপব্যবহার নিয়ে আমেরিকান লেখক ও কবি হারমান মেলভির উক্তিটি যথার্থ -
“অসত্যের পথে সফল হওয়ার চেয়ে, সত্যের পথে ব্যর্থ হওয়াও ভালো”
অধ্যবসায়ের শিক্ষা :
মরা যদি বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশ এবং সফল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করি তবে দেখবো ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রবণতা রয়েছে এবং সেই ধারাটি হল অধ্যবসায়ের ক্ষমতা। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন -
"The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time you fall."
আর এটাই হলো অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা। জীবনে ব্যর্থতা যে থাকবে না এমন টা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ জীবন থেমে থাকে না। জীবন বহমান নদীর মতো। তাই জীবনে ব্যর্থতা দেখে পিছু পা হলে সাফল্য লাভ করা যাবে না। বিশ্বখ্যাত লেখক ও ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন বলেছেন -
“জীবনে সফল হতে চাইলে দু’টি জিনিস প্রয়োজন: জেদ আর আত্মবিশ্বাস”
অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা হলো বার বার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর সাফল্যের স্বপ্ন দেখা। আমাদের মনে রাখতে হবে খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসবেই। আর সেই ভালো সময়টিক কাজে লাগানোর জন্যে দরকার অধ্যবসায়ের।
অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি:
বহু রক্ত আর ত্যাগের বিনিয়োমে আমরা পেয়েই স্বাধীনতা। বুক ফুলিয়ে বলতে পারছি আমরা বাঙালি। আসলে কি আমরা নিজেদের মধ্যে বাঙালির গুণাবলী ধারণ করতে পেরেছি? অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা বাঙালির মধ্যে অধ্যবসায়ের গুনটি অনেকটাই নেই। আমাদের মধ্যে নেই কোনো প্রচেষ্টা, নেই পরিশ্রম করার প্রবনতা, নেই সাফল্য লাভের ইচ্ছা। বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগী বলেছেন -
“যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে,
তবে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি”
অথচ সহজ এই গুণগুলো আমাদের মাঝে নেই।
উপসংহার:
কোনাে মানুষ জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌঁছানাের উদ্যমী নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে কোনাে প্রতিকূলতাই জাতিকে নিরস্ত করতে পারে না। অধ্যবসায়ী মানুষ ধৈর্য ও অবিচলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একসময়-না-একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। প্রতিটি সফল জীবন এক অর্থে অধ্যবসায়েরই চালচিত্র। তাই ছােটবেলা থেকে প্রত্যেকের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া।
ভারতীয় পন্ডিত, সাধক, ও লেখক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন -
“একটি লক্ষ্য ঠিক করো। সেই লক্ষ্যকে নিজের জীবনের অংশ্ বানিয়ে ফেলো।
চিন্তা করো, স্বপ্ন দেখো। তোমার মস্তিষ্ক, পেশী, রক্তনালী – পুরো শরীরে সেই লক্ষ্যকে ছড়িয়ে দাও,
আর বাকি সবকিছু ভুলে যাও। এটাই সাফল্যের পথ।”
Tag:অধ্যবসায় রচনা, অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট, অধ্যবসায় রচনার ২০ পয়েন্ট, রচনা অধ্যবসায়, অধ্যবসায় রচনা ৩০ পয়েন্ট, বাংলা রচনা অধ্যবসায়, প্রবন্ধ রচনা অধ্যবসায়