চে গুয়েভারা | চে গুয়েভারার জীবনী | চে গুয়েভারার জীবন কাহিনি - Time Of BD - Education Blog

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৩ ভিজিটর বন্ধুরা। দোয়া করি, এই বছরের প্রতিটি মুহুর্ত যেনো সকলের অনেক আনন্দে কাটে।

চে গুয়েভারা | চে গুয়েভারার জীবনী | চে গুয়েভারার জীবন কাহিনি

চে গুয়েভারা | চে গুয়েভারার জীবনী | চে গুয়েভারার জীবন কাহিনি

চে গুয়েভারা


বিশ্বে আজ পর্যন্ত যত জন মানুষকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে সাম্যবাদী বিপ্লবের প্রতীক চে আর্নেস্তো গ্যেভারা অন্যতম। চে গুয়েভারা ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় মার্ক্সবাদী, বিপ্লবী, চিকিত্সক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব।


তরুণ বয়সে ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময় এই সব অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। চে ছিলেন এক বিশিষ্ট লেখক ও ডায়েরি-লেখক। গেরিলা যুদ্ধের উপর তিনি একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেন।


বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা তাকে ডাকতো চানচো (pig) বলে, কারণ তিনি অনিয়মিত স্নান করতেন এবং সপ্তাহে একবার মাত্র পোশাক পাল্টাতেন। তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটর সাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথাটিও তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় রচনা। বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করেন।


টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশিত হয়। বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ভাষ্য মতে তারা গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তার মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়। ধারণা করা হয় ১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় নয়টি গুলি করে হত্যা করা হয় বন্দী চে গেভারা। চে' সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সে সময় লিখেছিল, 'একজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপকথাও চিরতরে বিশ্রামে চলে গেল'। যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের প্রতীক এখন চে গুয়েভারা ।


পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন জৈষ্ঠতম।

১২ বছর বয়সে দাবা খেলা শেখেন তার বাবার কাছে এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন। খুব শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিত, অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ তাঁর ভিতর তৈরি হতে থাকে। তার বাবা ছিলেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে (Spanish Civil War) রিপাবলিকানদের একজন গোড়া সমর্থক।


গুয়েভারা পরিবারে ছিল ৩০০০ এরও বেশি বই যা গুয়েভারাকে করে তোলে একজন জ্ঞান পিপাসু ও আক্লান্ত পাঠক যার মধ্যে কার্ল মার্ক্স, উইলিয়াম ফকনার, এমিলিও সলগারির বই। পাশাপাশি জওহরলাল নেহেরু, আলবার্ট ক্যামাস, লেলিন, রবার্ট ফ্রস্ট এর বইও তিনি পড়তেন।


১৯৫৪ সালের শুরুর দিকে গেভারা মেক্সিকো শহরে পৌছান এবং সদর হাসপাতালে এলার্জি বিভাগে চাকুরি করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চে কিউবার শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এসময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে গেভারা বিশ্বের বিপ্লবীদের কূটনীতিক হিসেবে পরিচিতি পান। তাই তিনি কিউবার প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করার জন্য নিঊয়র্ক শহরে যান।


চে গেভারা কিউবান ভাষায় লিখেছেন প্রায় ৭০টি নিবন্ধ, ধারণা করা হয় ছদ্মনামে কিংবা নামহীন অবস্থায় লিখেছেন ২৫টি। এছাড়া তিনি লিখে দিয়েছেন পাঁচটি বইয়ের ভূমিকা। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত ভাষণ আর সাক্ষাতকার দিয়েছেন প্রায় ২৫০-এর কাছাকাছি। বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে লেখা তার অসংখ্য চিঠির মধ্যে সংগৃহিত আছে ৭০টির মতো। তার লেখালেখি নিয়ে এখন পর্যন্ত বের হয়েছে নয় খণ্ড রচনাবলি।


সচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন চে গুয়েভারা।

অধ্যয়ন করেছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্র। সুখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্ব সময়ে আর্নেস্তো চে গুয়েভারাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি তার অমরত্বের কথা ভাবছেন? চে জবাব দেন 'আমি ভাবছি, বিপ্লবের অমরত্বের কথা'। তরুণ ছেলেরা চে’র ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। চে’র পোস্টার পড়ার ঘরে টানাচ্ছে। চে’র স্টাইলে সিগারেট খাচ্ছে তারা ।কাপুরুষোচিত ভাবে তাকে হত্যা করেছিল বলিভীয় কর্তৃপক্ষ।


১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারী চে’- বাহিনী রাজধানী হাভানা দখল করে। কিউবায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট হলেন ফিদেল। চে’-কে প্রথমে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদ দেয়া হয়। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন তিনি। গুয়েভারার প্রতি- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, 'চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়/আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা/ আত্মায় অভিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দশৈশব থেকে বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস'।


১৯৩০ সালের ২ মে সুইমিং পুলের বরফশীতল পানিতে গোসল করতে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যায়। সেই প্রথম তাঁকে আক্রমণ করে হাঁপানি। তখন তাঁর বয়স মোটে দুই বছর। তারপর আমৃত্যু আর তাঁর পিছু ছাড়েনি এই রোগ। তাঁর শেখা প্রথম বুলির একটা ছিল ইনজেকশন। অতিরিক্ত ধুমপান করতেন চে। সহকর্মীরা তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতেন। শেষ পর্যন্ত একদিন তাঁদের দিকে চেয়ে আপস করলেন এর্নেস্তো চে গুয়েভারা; জানালেন, ‘আগামীকাল থেকে আমি কেবল একটা করে চুরুট খাব।’ পরদিন কথামতো একটা চুরুট নিয়েই হাজির হলেন তিনি। তবে তার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় এক মিটার!


কিউবা বিপ্লবের অন্যতম একজন বিপ্লবী চে।

কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সহযোদ্ধা ছিলেন। মানুষের মুক্তির সংগ্রামে দেশে দেশে লড়াই করেছেন এই বীর। চে হচ্ছে সব দেশে সব কালের প্রতিবাদের স্বারক। মানুষের অন্তরে মুক্তির মশাল হয়ে তিঁনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে। ঢাকার আজিজ মার্কেটে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য গড়ে ওঠা ফ্যাশন হাউস গুলোও চে’র ছবি দিয়ে টি-শার্ট করেছে, বিক্রিবাট্টাও বেশ ভালো। চে নিজেই বলে গেছেন, ‘আমরা যেন বিষয় কিংবা অর্থের প্রতি অনুরক্ত না হই। আমাদের অনুরাগ থাকা উচিত চেতনার প্রতি, আদর্শের প্রতি।


তথ্যসুত্রঃ

পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত দুইটি বই-

১/অশোক ভট্টাযার্য। চে গেভারা: বর্ণময় জীবন ও সংগ্রাম। ৩য় সংস্করণ ২০০৮। অগ্রণী প্রকাশনী,

২/ চে গেভারা: দি মোটরসাইকেল ডায়ারিজ। অনুবাদক: পার্থ বন্দোপাধ্যায়। ২০০৫। চিরায়ত প্রকাশনী।

টাগ:চে গুয়েভারা, চে গুয়েভারার জীবনী, চে গুয়েভারার জীবন কাহিনি 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url