অযুর নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া এবং অযুতে সন্দেহ হলে কী কী করনীয়।
আসসালামুয়ালাইকুম, প্রিয় বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি। আমি আজকে আপনাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হাজির হলাম তা হলো অযুর নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া এবং অযুতে সন্দেহ হলে কী কী করনীয়, সে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃঅযুর নিয়ত ও অযুর নিয়ম, অযুতে সন্দেহ হলে কি কি করণীয়, অযুর দোয়া, ওযু কিভাবে করতে হয়, অযুর উচ্চারনঃ-
ওযুর নিয়তঃ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জা লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়াতাক্বারুবান ইলাল্লাহি তা'য়ালা।
অর্থঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদাত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
অজু করার নিয়মঃ
প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া। প্রথমে বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে। হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
মিসওয়াক করাঃ
কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নাত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
কুলি করাঃ
ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নাত। তিনবার কুলিকরা সুন্নাত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
নাকে পানি দেওয়াঃ
ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিষ্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নাত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নাড়া-চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
মুখমন্ডল ধোয়াঃ
উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোটা ফোটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নাত।
দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরজ। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরজ নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
হাত ধোয়াঃ
উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।
যদি করো আঙ্গুলের ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, তাহলে খিলাল করা ওয়াজিব।
মাথা মাসেহ করাঃ
মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরজ, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
মাথা মাছেহের নিয়মঃ
বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
কান মাসেহ করাঃ
উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
গর্দান মাসেহ করাঃ
উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ
ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে পা ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব। ওযুর দোয়াসমুহ পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে অজু। নামাজের জন্য অজুকে আল্লাহ তা'আলা ফরজ করেছেন। অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। যা তুলে ধরা হলোঃ
১। শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলে অজু শুরু করা।
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
অর্থঃ পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। (তিরমিজি, মিশকাত)
২। অজুর শেষে কালিমা শাহাদাত পড়া– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, মিশকাত)
উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লাইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ'বদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। (মুসলিম মিশকাত)
৩। তারপর এ দোয়াটি পড়া—
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাঝআ’লনি মিনাত তাউয়্যাবিনা ওয়াঝআ’লনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন। (তিরমিজি, মিশকাত) সুতরাং আল্লাহ তাআলা অজুর সময় উক্ত দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে দুনিয়াতে উত্তম রিযিক, মৃত্যুর পূর্বে গোনাহ মাফ এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করার তাওফিক দান করুন।
ওযুতে সন্দেহ হলেঃ
ওযু করবার সময় অঙ্গবিশেষ ধৌত করা হয়েছে কিনা এরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হলে এবং ইহা যদি প্রথম সন্দেহ হয় তবে উক্ত অঙ্গ পুনরায় ধৌত করা উচিত। কিন্তু সর্বদা যদি এরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হয় অথবা ওযু শেষ হওয়ার পর সৃষ্টি হয়, তবে তৎপ্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে নেই। ওযু শেষ হওয়ার পর ওযু ভঙ্গ হয়েছে বলে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ওযু থাকবে কিন্তু ওযু না থাকা অবস্থায় ওযু করা হয়েছে বলে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ওযু করতে হবে। (নুরুল ইজাহ, তাহবী)
বিঃদ্রঃ কোনো ভুল হলে কমেন্টে জানাবেন সঠিক করবো ইনশাআল্লাহ।
টাগঃ অযুর নিয়ত ও অযুর নিয়ম, অযুতে সন্দেহ হলে কি কি করণীয়, অযুর দোয়া, ওযু কিভাবে করতে হয়, অযুর উচ্চারণ | Azu's intention and ablution rules, what to do if you suspect in ablution, how to perform ablution, ablution |
প্রতিদিন ১০০-২০০ টাকা ইনকাম করতে চাইলে এখানে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনায় কাজে নিয়ে নেবো। ধন্যবাদ