১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন কেন ব্যর্থ হয় | Why the Indian Rule Act of 1935 failed

 
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন কেন ব্যর্থ হয়, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রূটিবিচ্যুতি

    ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন কেন ব্যর্থ হয়

    জাতীয়তাবাদের বিস্তার: ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সরকার এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করে দেশে ব্রিটিশ শাসনের সুরক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তারা মনে করেন যে নতুন কোণে সংস্কার আইন প্রবর্তন করে এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা সম্ভব।

    আন্দোলনের তীব্রতা: ১৯১৯ সালের মন্টাগু-চেলসফোর্ড আইন ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে পা রাখে। গান্ধীজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯০২-২২ খ্রি।), অবাধ্যতা আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি।) সহ বিভিন্ন আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।

    বিপ্লবী কার্যক্রম: ১৯৩০-এর দশকে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কার্যক্রম দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভগত সিং, বাতুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, বাসন্ত বিশ্বাস, বাঘা যতীন সহ বিভিন্ন বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখে সরকার আতঙ্কিত হয়েছিল।

    সাইমন কমিশনের প্রতিক্রিয়া: ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন ভারতে এসেছিলেন ভারতীয়রা স্বায়ত্তশাসনের দাবিদার কিনা তা বিচার করতে। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত এই কমিশনের প্রতিবেদনে শাসন, আইন প্রণয়ন ইত্যাদিতে ভারতীয়দের দক্ষতা সম্পর্কে খুব অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছিল।

    গালাতবেল সভা: সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার প্রথম গালাতবেল (১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ), দ্বিতীয় গালাতবেল (১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ) এবং তৃতীয় গালাতবেল (১৯৩২) ভারতে সংবিধান সংস্কার নিয়ে ভারতীয় নেতাদের সাথে বিভিন্ন আলোচনা করেন।

    হোয়াইট পেপার: সাইমন কমিশনের রিপোর্ট এবং তিনটি গোলটেবিল বৈঠকে ভারতীয় নেতাদের সাথে আলোচনার পরে, সরকার ১৯৩৩ সালে ভারতে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবসমূহ নামে একটি 'হোয়াইট পেপার' প্রকাশ করেছিল। এই প্রস্তাবগুলি এবং যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সংসদ ১৯৩৫ সালে ভারত সরকার আইন (ভারত সরকার আইন, ১৯৩৩) পাস করেছিল।

    ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রূটিবিচ্যুতি

    স্বায়ত্তশাসন হ্রাস: ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন ভারতীয়দের প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন দেয়নি। কেন্দ্রের গভর্নর-জেনারেল এবং প্রদেশগুলির গভর্নরদের সীমাহীন ক্ষমতা স্বায়ত্তশাসনকে প্রহসায় রূপান্তরিত করে। ডাঃ বিপন চন্দ্র বলেছেন, "ভারতের এই নতুন বিধি আইন (১৯৩৫) ভারতের জাতীয়তাবাদী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।"

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবদান: যদিও আইনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গঠনের বিধান করে তবে এটি দেশীয় রাজ্যগুলির অবদানকে দেশীয় রাজ্যগুলির ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়। তা ছাড়া, প্রস্তাবিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়ে মুসলিমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছিল।

    ফেডারেল কাঠামোর ক্ষতি: এই আইনটি বিভিন্ন প্রদেশে কেন্দ্রীয় গভর্নর-জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। চূড়ান্ত ক্ষমতা গভর্নর জেনারেলের উপর ন্যস্ত। এই কারণেই আইনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলে এবং বাস্তবে একটি কেন্দ্রীয়ীকরণ ব্যবস্থা তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, ভারতের ফেডারেল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সুতরাং ইতিহাসবিদ রজনী পাম দত্ত বলেছিলেন যে "প্রস্তাবিত ভারতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ ভুল নামকরণ ছিল।"

    নামমাত্র ভোটাধিকার: এই আইন দ্বারা প্রবীণদের অধিকার বাড়ানোর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ ভারতে মাত্র ১৪% মানুষের ভোটাধিকার রয়েছে। ফলস্বরূপ, গণতন্ত্র ব্যাহত হয়।

    সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: এই আইনটি মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের বিধান করে। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের কথাও রয়েছে।

    tags:  ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন কেন ব্যর্থ হয়, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রূটিবিচ্যুতি