জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ভাবসম্প্রসারণ | জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারণ

 
জীবে প্রেম করে যেই জন  সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ভাবসম্প্রসারণ | জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারণ

জীবে প্রেম করে যেই জন 
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর 

ভাব - সম্প্রসারণ : জীবজগৎকে ভালােবাসার মাধ্যমেই ঈশ্বর বা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা যায় । কেননা স্রষ্টা সমগ্র জীবজগৎকে সৃষ্টি করেছেন । আর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টির মধ্যেই তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন । তাই সৃষ্ট জীবের সেবা করলেই স্রষ্টার সেবা করা হয় । পৃথিবী স্রষ্টার লীলাক্ষেত্র । তিনি বহু বিচিত্র ধরনের পশু , পাখি , গাছপালা , কীটপতঙ্গ সৃষ্টি করেছেন । সেসব আকৃতি - প্রকৃতি - বর্ণে - গন্ধে বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় । যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ । বুদ্ধি - বিবেচনা , স্নেহ - মমতা - ভালােবাসায় মানুষের তুল্য কেউ নয় । অতুলনীয় রূপ , সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যপূর্ণ সবকিছুই মানুষের জন্য । প্রকৃতির মধ্যে বিচরণ করছে যে নানা জীব ও প্রাণী , মানুষ তাদের রক্ষা করবে , পরিচর্যা ও যত্ন করবে । নানা জাতের গাছপালা , লতাগুল্মসমৃদ্ধ বন - বনানী রক্ষা ও পরিচর্যা করার দায়িত্ব মানুষের । কেননা মানুষ তার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় সবকিছুই প্রকৃতি থেকে আহরণ করে । কাজেই মানুষের বেঁচে থাকার বিশাল উৎসকে ধরে রাখা মানুষেরই দায়িত্ব । প্রকৃতি ও জীবজগতের কোনােকিছুই যাতে নষ্ট না হয় , ধ্বংস না হয় , ক্ষতি না হয় সেটা দেখভালের দায়িত্বও মানুষের । মানুষ এ দায়িত্ব পালনে কোনােভাবেই অবহেলা করতে পারে না । স্রষ্টা পরম যত্নে এই সুন্দর জীবজগৎ সৃষ্টি করেছেন , পরম ভালােবাসা ও যত্নে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে । মানুষ স্রষ্টার ইবাদত করে , উপাসনা করে । জীবজগৎও তার উপাসনায় মশগুল থাকে । কেননা সকল জীবের মধ্যেই স্রষ্টা আছেন । স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করার চেষ্টা সবার মধ্যেই আছে । তাই মানুষও স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালােবেসে , যত্ন করে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করতে পারে । এজন্য সংসার ত্যাগ করে নির্জন পাহাড় - পর্বতে অবস্থানের প্রয়ােজন নেই । সংসারের মধ্যে থেকে , জীবজগতের মধ্যে থেকেই তাদেরকে ভালােবেসে'স্রষ্টার আশীর্বাদ লাভ করা যায় । আর্ত পীড়িত , অসহায় , দরিদ্র মানুষকে ভালােবেসে , তাদের সেবা করার মাধ্যমেই আল্লাহ বা স্রষ্টার সেবা করা যায় । অনেক বছর ধরে আমরা ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছি । নির্বিচারে আমরা গাছপালা কাটছি , বন - বনানী ধ্বংস করছি । এর ফলে পশু - পাখির নিরাপদ আবাসস্থল , তাদের খাদ্যের উৎস ধ্বংস হচ্ছে । ইতােমধ্যে বহু প্রজাতি পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়েছে । আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থে পাহাড় কাটছি , নদ - নদী , খাল - বিল ভরাট করে স্রোতধারা ক্ষীণ করে দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণীর উৎস নষ্ট করছি । ফলে মারাত্মক দূষণের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে । তার প্রভাব পড়ছে জীবজগৎ তথা মানুষের ওপরও । মানুষ নানা ধরনের কঠিন সমস্যার মুখােমুখি হচ্ছে । এর জন্য দায়ী অন্য কেউ নয় মানুষ । কেননা নিষ্ঠুর মানুষ তাদের বেঁচে থাকার উৎস , সুস্থ - সবল থাকার উৎস ধ্বংস করছে । মানুষের নির্মমতার কারণেই নষ্ট হচ্ছে তার প্রিয় ও সুন্দর পৃথিবী । স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালাে না বেসে আমরা স্রষ্টার রহমত এবং , আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি । একের পর এক ভয়াবহ গজবের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা । অথচ আমরা যদি স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টিসমূহকে প্রাণ দিয়ে ভালােবাসতাম , জীবজগতের যত্ন ও পরিচর্যা করতাম , জীবের সেবায় আত্মনিয়ােগ করতাম তাহলে স্রষ্টাও খুশি হতেন । মহামানব ও মনীষীরা প্রকৃতিকে ও জীবকে ভালােবেসে এবং তাদের সেবা করেই ঈশ্বরের সেবা করেছেন । কাজেই আমাদের বেঁচে থাকার এবং মহত্তম কল্যাণের প্রয়ােজনেই প্রতিটি জীবের সেবা করতে হবে । তাহলেই আমরা সন্টার যথার্থ সেবা করতে পারব এবং তার সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হতে পারব । 

টাগ: জীবে প্রেম করে যেই জন  সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ভাবসম্প্রসারণ,জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারণ