সূরা মারিয়াম এর শানে নুযুল ও তাফসির | সূরা মারইয়াম বাংলা অর্থসহ

 

সূরা মারইয়াম , সূরা মারইয়াম বাংলা অর্থসহ , সূরা মারিয়াম এর শানে নুযুল, মারিয়াম অর্থ , সূরা মারিয়াম আয়াত ৪ , সূরা মারিয়াম এর তাফসীর

    সূরা মারইয়াম

    প্রিয় পাঠকবৃন্দ টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আপনারা অনেকেই হয়তো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সূরা মারিয়াম বিভিন্ন আয়াতগুলো খুঁজছেন। আর তাই আজকে আমরা আমাদের পোষ্ট টি তৈরি করেছে আমাদের এই পোস্টটা আজকের সূরা মারিয়াম সম্পর্কে যা যা থাকছেঃ সেগুলো হলো সূরা মারইয়াম , সূরা মারইয়াম বাংলা অর্থসহ , সূরা মারিয়াম এর শানে নুযুল, মারিয়াম অর্থ , সূরা মারিয়াম আয়াত ৪ , সূরা মারিয়াম এর তাফসীর  ।আশা করছি আপনারা পুরো পোস্টটি ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন এবং সঠিক তথ্যটি পাবেন।

    সূরা মারইয়াম বাংলা অর্থসহ 

    الرَّحِيمِ 


     كهيعص

     কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১ ]


     ذِكْرُ رَحْمَةِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا


     এটা আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২ ] 


     إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاء خَفِيًّا


     যখন সে তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করেছিল নিভৃতে। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৩ ] 


     قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا


     সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবন ত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফলমনোরথ হইনি। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৪ ] 


     وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِن وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا


     আমি ভয় করি আমার পর আমার স্বগোত্রকে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; কাজেই আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে এক জন কর্তব্য পালনকারী দান করুন। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৫ ] 


     يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آلِ يَعْقُوبَ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا


     সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে ইয়াকুব বংশের এবং হে আমার পালনকর্তা, তাকে করুন সন্তোষজনক। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৬ ] 


     يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ اسْمُهُ يَحْيَى لَمْ نَجْعَل لَّهُ مِن قَبْلُ سَمِيًّا


     হে যাকারিয়া, আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারও নাম করণ করিনি। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৭ ] 


     قَالَ رَبِّ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا وَقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا


     সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা, আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৮ ] 


     قَالَ كَذَلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا


     তিনি বললেনঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেনঃ এটা আমার পক্ষে সহজ। আমি তো পুর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি এবং তুমি কিছুই ছিলে না। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৯ ] 


     قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّي آيَةً قَالَ آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا


     সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন। তিনি বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১০ ] 


     فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ مِنَ الْمِحْرَابِ فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ أَن سَبِّحُوا بُكْرَةً وَعَشِيًّا


     অতঃপর সে কক্ষ থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে এল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ করতে বললঃ [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১১ ] 


     يَا يَحْيَى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا


     হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। আমি তাকে শৈশবেই বিচারবুদ্ধি দান করেছিলাম। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১২ ] 


     وَحَنَانًا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَاةً وَكَانَ تَقِيًّا


     এবং নিজের পক্ষ থেকে আগ্রহ ও পবিত্রতা দিয়েছি। সে ছিল পরহেযগার। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৩ ] 


     وَبَرًّا بِوَالِدَيْهِ وَلَمْ يَكُن جَبَّارًا عَصِيًّا


     পিতা-মাতার অনুগত এবং সে উদ্ধত, নাফরমান ছিল না। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৪ ] وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا


     তার প্রতি শান্তি-যেদি ন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৫ ] 


     وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا


     এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৬ ] 


     فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا


     অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৭ ] 


     قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَن مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا


     মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৮ ] 


     قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا


     সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:১৯ ] 


     قَالَتْ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا


     মরিইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও কখনও ছিলাম না ? [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২০ ] 


     قَالَ كَذَلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَلِنَجْعَلَهُ آيَةً لِلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا


     সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২১ ] 


     فَحَمَلَتْهُ فَانتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا


     অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২২ ] 


     فَأَجَاءهَا الْمَخَاضُ إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنسِيًّا


     প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম! [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৩ ] 


     فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا


     অতঃপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়ায দিলেন যে, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৪ ] 


     وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا


    Ar tumi নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৫ ] 


     فَكُلِي وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا


     যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৬ ] 


     فَأَتَتْ بِهِ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُ قَالُوا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا


     অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৭ ] 


     يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا


     হে হারূণ-ভাগিন ী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৮ ] 


     فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا


     অতঃপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? [ সুরা মারঈয়াম ১৯:২৯ ] 


     قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا


     সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৩০ ] 

    সূরা মারিয়াম এর শানে নুযুল 

    Nazil হওয়ার সময় ও স্থান

    মুসলমানদের আবিসিনিয়ায় হিজরতের প্রাক্কালে এই সূরাটি নাযিল হয়

    ঐতিহাসিক পটভূমি: 

    সুদীর্ঘ ৪০টা বছর মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সমাজে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন-যাপন করেছেন। উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আচার-আচরণের কারণে সর্বজনপ্রিয় একজন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে তাঁর অবস্থান তৈরি হয়েছিল। তিনি ছিলেন আল-আমিন ও আস-সাদিক। অথচ যখনই তিনি মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখনই মানুষ প্রথমে তাঁকে উপেক্ষা করতে থাকে এবং পরবর্তীতে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি প্রদান শুরু করে দেয় এবং নবুয়্যতের পাঁচ বছরের মধ্যেই তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা একটু দরিদ্র ও দাসশ্রেণির ছিল তাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা ছিল বড় তীব্র।

    হাতের নাগালের মধ্যে পেলেই মারপিট করা, আটকে রাখা, অভুক্ত রাখা, তাদের কাছ থেকে কাজ করিয়ে নিয়ে পারিশ্রমিক না দেয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া নানাবিধ উপায়ে নিপীড়ন করতো। জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন হযরত খাব্বাব (রা.) খানায়ে কাবায় বিশ্রামরত রসূল (সা.)-এর কাছে আল্লাহর সাহায্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন-‘জুলুম-নির্যাতন আর কি দেখলে? অতীতকালে যারাই ঈমানের দাবি করেছে তাদের কাউকে করাতে দ্বিখ-িত করা হয়েছে, আবার লোহার চিরুণী দিয়ে কারো শরীর থেকে গোশ্ত পৃথক করা হয়েছে; তারপরও তারা ঈমানহারা হননি। সেদিন খুব নিকটে যেদিন একজন ষোড়শী সান’আ থেকে হাজরামাউত একাকী হেঁটে যাবে তাকে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতে হবে না’। মু’মিনদের প্রকাশ্যে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে রসূল (সা.) তাদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন যে, সেখানকার বাদশা নাজ্জাশী অত্যন্ত সৎ ও দরদী মানুষ এবং মানুষের প্রতি তিনি কখনও জুলুম করেন না।

    প্রথমে ১১ জন নারী-পুরুষ হিজরত করেন। তাঁরা হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লে কাফিররা তাঁদেরকে ধাওয়া করে; কিন্তু নদীর তীরে পৌঁছার পূর্বেই সাহাবীদের নৌকা ছেড়ে দেয়। বিভিন্ন পর্যায়ে ১০১ জন নারী ও পুরুষ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন এবং এই মুহাজিরদের নেতৃত্ব দেন হযরত জাফর বিন আবু তালিব (রা.)। আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মাত্র ৪০ জন নারী-পুরুষ সে সময়ে মক্কায় রয়ে যান। মুসলমানদের এভাবে চলে যাওয়াতে মক্কার কুরাইশ নেতৃবৃন্দ আরো অস্থির হয়ে পড়ে, কারণ হিজরতকারীদের সাথে প্রত্যেক বংশের কারো ভাই-বোন, কারো ছেলে-মেয়ে-জামাই বা আত্মীয়-স্বজন ছিল। কুরাইশ নেতৃবৃন্দ দু’জন ঝানু কূটনীতিককে (আবু জেহেলের বৈপিত্রেয় ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আবী বারী’আহ ও আমর ইবনে আস) প্রচুর উপঢৌকনসহ বাদশাহ নাজ্জাশীর দরবারে প্রেরণ করে।

    এই দুই কূটনীতিক প্রথমে নাজ্জাশীর সভাসদদের প্রচুর উপঢৌকনের মাধ্যমে তাদের পক্ষে নেন; তারপর উপঢৌকনসহ উপস্থিত হয় নাজ্জাশীর দরবারে এবং সেখানে উপস্থিত হয়ে মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ধর্মত্যাগী ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে ফেরত দানের জন্য আবেদন জানায়। সভাসদরাও তাদের সাথে একমত হয়ে ফেরত দানের জন্য বাদশাহর প্রতি অনুরোধ করেন। জবাবে বাদশা বলেন যে অভিযুক্তদের কথা না শুনে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না, কারণ আমি জালিম নই। বাদশাহর পক্ষ থেকে মুহাজিরদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলে তাঁরা পরস্পর পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন যে রসূল (সা.) তাঁদেরকে যা শিখিয়েছেন সেখানে তাঁরা তাই বলবেন। বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হলে বাদশাহ তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন- তোমরা কেন তোমাদের স্বজাতির ধর্ম পরিত্যাগ করলে, আবার আমার ধর্মও গ্রহণ করলে না বা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ না করে নতুন ধর্মমত গ্রহণ করলে? জবাবে হযরত জাফর বিন আবু তালিব (রা.) আরবের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থার বর্ণনা প্রদান করেন এবং সমাজে দুষ্কৃতির একটি চিত্র উপস্থাপন করার সাথে সাথে রসূল (সা.)-এর চরিত্র ও তাঁর শিক্ষা-দীক্ষাও পেশ করেন।

    এর ফলে আরবের কুরাইশদের সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন এবং এর প্রেক্ষিতে তাঁর দেশে একটি নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় আসার কথা ব্যক্ত করেন। বাদশাহ তাঁদের নবীর ওপর যে কালাম নাযিল হয় তা তাঁকে শোনানোর জন্য বললে হযরত জাফর বিন আবু তালিব (রা.) সূরা মরিয়ম পাঠ করে শোনান। তাতে বাদশাহ মুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং তাঁর চোখ অশ্রুসজল হয়ে পড়ে। তারপর কুরাইশ প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে তাদের আকিদা ভালো নয়। বাদশাহ জানতে চাইলে মুহাজিররা বলেন যে হযরত ইসা (আ.) আল্লাহর বান্দাহ ও রসূল এবং কুমারি মরিয়ম (আ.)-এর পুত্র। তাতে বাদশাহ বলেন তাঁর সম্পর্কে যথার্থই বলা হয়েছে এবং তিনি এর থেকে সামান্যতম বেশি কিছু নন। এরপর তিনি উপঢৌকনাদিসহ কুরাইশ প্রতিনিধি দলকে ফেরত পাঠান এবং মুহাজিরদের বলে দেন যে যতদিন খুশি তাঁরা তাঁর দেশে থাকতে পারবেন।

    মারিয়াম অর্থ 

    মারিয়াম নামের আরবি অর্থ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ভক্তি করা।

    সূরা মারিয়াম আয়াত ৪ 

     بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا

     সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবন ত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফলমনোরথ হইনি। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৪ ] 

    সূরা মারিয়াম এর তাফসীর  

    Ami আশঙ্কা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করো। [সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫ (প্রথম পর্ব)]

    তাফসির : জাকারিয়া (আ.)-এর কোনো সন্তান ছিল না। বৃদ্ধ বয়সে তিনি সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। তাঁর দোয়ার ভাষ্য কী ছিল, সে বিষয়ে আগের আয়াতে বর্ণনা ছিল। আলোচ্য আয়াতেও একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়ায় তিনি নবুয়তের রেখে যাওয়া আমানত বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অর্থাত্ অন্য আত্মীয়স্বজন ঈমান ও আমল সম্পর্কে উদাসীন হয়ে সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে একজন সন্তান হলে হয়তো মহান আল্লাহ তাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করবেন। তখন নবুয়তের উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাবে।

    একদিকে সন্তান লাভের আকুতি, অন্যদিকে স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব—উভয় বিষয় সামনে রেখে জাকারিয়া (আ.) মহান আল্লাহর শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর বিশেষ করুণা চেয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছেন। এতে বোঝা যায়, নিঃসন্তান দম্পতির জন্য আশার আলো সব সময় জ্বলে থাকে। আল্লাহ চাইলে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান হতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মাতা-পিতাকে এ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল্ ওয়ারিছিন। অর্থাত্ হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)।

    মারিয়াম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন জাকারিয়া (আ.) দেখতে পেলেন আল্লাহ তাআলা ফলের মৌসুম ছাড়াই মারিয়াম (আ.)-কে ফল দিয়ে রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। তখন তাঁর মনে সন্তানের জন্য সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ। অর্থাত্ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)।

    ইবরাহিম (আ.) একসময় নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে এ দোয়া করেছেন, ‘রব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন। অর্থাত্ হে আমার প্রভু! আমাকে সত্কর্মশীল সন্তান দান করো।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০০)।

    আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের পরিচয় দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, তাঁরা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রব্বানা-হাবলানা

    Tag:সূরা মারইয়াম , সূরা মারইয়াম বাংলা অর্থসহ , সূরা মারিয়াম এর শানে নুযুল, মারিয়াম অর্থ , সূরা মারিয়াম আয়াত ৪ , সূরা মারিয়াম এর তাফসীর