সূরা হুদ এর শানে নুযুল | সুরা হুদ আয়াত তাফসির | সুরা হুদ আয়াত ৬,৪১
সুরা হুদ আয়াত
আশা করি আপনারা পুরো পোস্টটি ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন এবং সঠিক তথ্যটি পাবেন।
সূরা হুদ এর শানে নুযুল
শানে নুযূল: (সূরা নং ১১ সূরা) হূদ
তাফসীরের জাকারিয়া
সূরা সংক্রান্ত আলোচনাঃ
আয়াত সংখ্যাঃ ১২৩
নাযিল হওয়ার স্থানঃ সূরা হুদ মক্কায় নাযিল হয়েছে। [ইবন কাসীর]
নামকরণঃ এ সূরার নাম সূরা হুদ। একজন প্রখ্যাত রাসূলের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। তার বাহ্যিক কারণ হচ্ছে, এ সূরার ৫৩ নং আয়াতে এর উল্লেখ আছে। যেখানে হুদ আলাইহিস সালাম ও তার কাওমের মধ্যকার কথোপকথন আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা সংক্রান্ত বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ এ সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সুরা হুদ ঐসব সুরার অন্যতম যাতে পূর্ববর্তী জাতিসমুহের উপর আপতিত আল্লাহর গযব ও বিভিন্ন কঠিন বর্ণনারীতির মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন দেখতে পাচ্ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেনঃ হ্যাঁ, সুরা হুদ এবং ওয়াকি'আ, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন, ইযাস-শামছু কুওওয়িরাত আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [তিরমিযীঃ ৩২৯৭] উদ্দেশ্য এই যে, উক্ত সুরাগুলিতে বর্ণিত বিষয়বস্তু অত্যন্ত ভয়াবহ ও ভীতিপ্রদ হওয়ার কারণে এসব সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর পবিত্র চেহারায় বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দেয়। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ সূরার একটি আয়াতে এসেছে, (فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ) “যেভাবে আপনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে দৃঢ়পদ থাকুন।” [১১২] এ নির্দেশই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [কুরতুবী]
আহসানুল বায়ান
সূরা হূদ [1]
(মক্কায় অবতীর্ণ)
এই সূরাতেও সেই সকল জাতির কথা আলোচিত হয়েছে; যারা আল্লাহর আয়াত ও পয়গম্বরগণকে মিথ্যাজ্ঞান করে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হয়েছিল এবং ইতিহাসের পাতা থেকে হয় (লিখিত) ভুল অক্ষরের মত মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথবা ইতিহাসের পাতায় শিক্ষা স্বরূপ লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এই কারণেই হাদীসে পাওয়া যায় যে, একদা আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার আপনাকে বৃদ্ধ মনে হচ্ছে কেন? নবী (সাঃ) উত্তরে বললেন, ‘‘সূরা হূদ, ওয়াকিয়াহ, আম্মা য়্যাতাসাআলুন এবং ইযাশ্শামসু কুওবিরাত ইত্যাদি সূরাগুলি আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে।’’ (তিরমিযী ৩২৯৭নং, সহীহ তিরমিযী, আলবানী ৩/১১৩)
সূরা হুদের তাফসির
[সুরা-হূদ, আয়াত-১১, তফসীর]
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
'মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"কিন্তু যারা সবর ( ধৈর্য্য ধারণ) করে ও নেক কাজ করে তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।"
সুরা-হূদ, আয়াত-১১
আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর-
এ আয়াতে সত্যিকার মানুষকে সাধারণ মানবীয় দুর্বলতা হতে পৃথক করে বলা হয়েছে যে,
সে সব ব্যক্তি সাধারণ মানবীয় দুর্বলতার উর্ধের্ব যাদের মধ্যে দুটি বিশেষ গুণ রয়েছে। একটি হচ্ছে ধৈর্য ও সহনশীলতা, দ্বিতীয়টি সৎকর্মশীলতা।
সবর (ধৈর্য) শব্দটি আরবী ভাষায় অনেক ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়।
সবরের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাধা দেয়া, বন্ধন করা।
কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় অন্যায় কার্য হতে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করাকে সবর বলে।
সুতরাং শরীআতের পরিপন্থী যাবতীয় পাপকার্য হতে প্রবৃত্তিকে দমন করা যেমন সবরের অন্তর্ভুক্ত,
তদ্রুপ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব ইত্যাদি নেক কাজের জন্য প্রবৃত্তিকে বাধ্য করাও সবরের শামিল।
এর বাইরে বিপদাপদে নিজেকে সংযত রাখতে পারাও সবরের অন্তর্ভুক্ত।
ইবনুল কাইয়্যেম: মাদারেজুস সালেকীন
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যার হাতে আমার আত্মা তার শপথ করে বলছি,
একজন মুমিনের উপর আপতিত যে কোন ধরনের চিন্তা, পেরেশানী, কষ্ট, ব্যথা, দুর্ভাবনা,
এমনকি একটি কাঁটা ফুটলেও এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুণাহের কাফ্ফারা করে দেন।"
[বুখারীঃ ৫৬৪১, ৫৬৪২, মুসলিমঃ ২৫৭৩]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি,
আল্লাহ মুমিনের জন্য যে ফয়সালাই করেছেন এটা তার জন্য ভাল হয়ে দেখা দেয়,
যদি কোন ভাল কিছু তার জুটে যায় তখন সে শুকরিয়া আদায় করে সুতরাং তা তার জন্য কল্যাণ।
আর যদি খারাপ কিছু তার ভাগ্যে জুটে যায়,
তখন সে ধৈর্য ধারণ করে, তখন তার জন্য তা কল্যাণ হিসেবে পরিগণিত হয়।
একমাত্র মুমিন ছাড়া কারো এ ধরনের সৌভাগ্য হয় না।"
[মুসলিমঃ ২৯৯৯]
[তাফসীর আবু বকর যাকারিয়া]
সূরা হুদ আয়াত ৬
সূরা হুদ আয়াত ৪১
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বি লাগাফুরুর রাহিম। (সূরা: হুদ, আয়াত: ৪১)।
অর্থ: আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান।
হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, বেঈমান-কাফিরদেরকে বাদ দিয়ে আপনার পরিবারবর্গ ও ঈমানদারদের নৌকায় তুলে নিন। নুহ আলাইহিস সালাম করলেনও তাই। বন্যা এসে গেলে তিনি জাহাজে উক্ত দোয়া পাঠ করেন।
Tag:সূরা হুদ এর শানে নুযুল, সূরা হুদের তাফসির , সুরা হুদ আয়াত , সূরা হুদ আয়াত ৬, সূরা হুদ আয়াত ৪১