সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫,৯০,৫১,৬ | সূরা আল মায়েদা শানে নুযুল - Time Of BD - Education Blog

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৩ ভিজিটর বন্ধুরা। দোয়া করি, এই বছরের প্রতিটি মুহুর্ত যেনো সকলের অনেক আনন্দে কাটে।

সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫,৯০,৫১,৬ | সূরা আল মায়েদা শানে নুযুল

 

সূরা আল মায়েদা আয়াত, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৯০, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫১, সূরা মায়েদা ৬ নং আয়াত, সূরা মায়েদা শানে নুযুল


    সূরা আল মায়েদা আয়াত

    প্রিয় পাঠকবৃন্দ টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আপনারা অনেকেই হয়তো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সূরা আল মায়েদা বিভিন্ন আয়াতগুলো খুঁজছেন। আর তাই আজকে আমরা আমাদের পোষ্ট টি তৈরি করেছে আমাদের এই পোস্টটা আজকের সূরা আল-মায়েদা সম্পর্কে যা যা থাকছেঃ সেগুলো হলো সূরা আল মায়েদা আয়াত, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৯০, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫১, সূরা মায়েদা ৬ নং আয়াত, সূরা মায়েদা শানে নুযুল । আশা করি ধৈর্য্য সহকারে আপনার পুরো পোস্টটি পড়বেন এবং সঠিক তথ্যটিি পাবেেন।

     সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫

    সূরা মায়েদার ৫৫ ও ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন বলেছেন-


    إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (55) وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ (56)


    "(হে মুমিনগণ!) তোমাদের পৃষ্ঠপোষক বা নেতাতো আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ-যারা নামায কায়েম করে ও রুকু অবস্থায় যাকাত দেয়। আর যারা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং এমন বিশ্বাসীদের নেতৃত্বকে গ্রহণ করে, তারাই (বিজয়ী হবে, কারণ) আল্লাহর দলই বিজয়ী। -সূরা আল মায়েদা (আয়াত-৫৫-৫৬)।

    বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে, একবার একজন দরিদ্র ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সেখানকার মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। কেউ তাকে কিছু দেয়নি। সে সময় নামাজের রুকু অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ওই দরিদ্র ব্যক্তিকে নিজের হাতের আংটি খুলে দেন। তাঁর এই দানের প্রশংসা করার জন্যই এ আয়াত নাজেল হয়। বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আম্মার ইয়াসির (রা.) বলেছেন: এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ আয়াত নাজেল হওয়ার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, "মান কুনতু মাওলাহু ফাআলী মাওলাহু" অর্থাৎ "আমি যাদের অভিভাবক (মাওলা) বা নেতা আলীও তাদের নেতা"। এটা স্পষ্ট এ আয়াতে ওয়ালি বলতে বেলায়াত বা নেতৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, শুধু বন্ধুত্ব বা ভালবাসা বোঝানো হলে তা তো সব মুসলমানদের জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত, কেবল তাদের জন্যই কেন প্রযোজ্য হবে যারা নামাজ কায়েম করে ও রুকু অবস্থায় দান করে? অনেকে বলেন, এখানে আল্লাজিনা আমানু বলতে একদল মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আসলে সম্মানার্থে আরবী ভাষায় বহু বচন ব্যবহারের রীতি রয়েছে। কোরআনের অন্যত্রও দেখা যায় কোনো শব্দের বাহ্যিক রূপ বহু বচনে আসা সত্ত্বেও বাস্তবে কেবল এক ব্যক্তিকে বোঝানোর জন্য ওই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

    এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার-

    এক. ইসলাম একদিকে যেমন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক না রাখার বা তাদের থেকে দূরে থাকার কথা বলে তেমনি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও বিশেষ শ্রেণীর মুমিনদের নেতৃত্ব মেনে নেয়ার কথাও বলেছে।

    দুই. যারা ঈমানদার নয় এবং নামাজ আদায় করে না ও যাকাত দেয় না, অন্য বিশ্বাসীদের ওপর কর্তৃত্ব করার বা নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার তাদের নেই।

    তিন. দরিদ্রদের সহায়তার জন্য নামাজও কোনো বাধা হয় না। নামাজ ও যাকাত বা দান এ আয়াতে পরস্পরের সাথে মিশে গেছে।

    চার. যারা সমাজের বঞ্চিত ও ছিন্নমূলদের ব্যাপারে উদাসীন, তারা ইসলামী সমাজের নেতা হতে পারে না।

    পাঁচ. মুমিনগণ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং পবিত্র ইমামদের নেতৃত্ব বা বেলায়াত মেনে নেয়, তবে তারা অবশ্যই কাফেরদের ওপর বিজয়ী হবে।

     সূরা আল মায়েদা আয়াত ৯০

    সূরা মায়েদার ৯০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-


    يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿٩٠﴾ 


    হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। -সূরা আল মায়েদা (আয়াত-৯০)।


    এটি মদের ব্যাপারে তৃতীয় নির্দেশ। প্রথম ও দ্বিতীয় নির্দেশে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু এখানে মদ ও তার সাথে জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক তীরকে অপবিত্র বা ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানী বিষয় বলে স্পষ্ট ভাষায় তা থেকে দূরে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ আয়াতে মদ ও জুয়ার অতিরিক্ত অপকারিতা বর্ণনা করে প্রশ্ন করা হয়েছে, তবুও কি তোমরা বিরত হবে না? এ থেকে উদ্দেশ্য ঈমানদারকে পরীক্ষা করা। সুতরাং যাঁরা মু’মিন ছিলেন, তাঁরা আল্লাহর উদ্দেশ্য বুঝে গেলেন এবং তা যে নিশ্চিত হারাম, তা মেনে নিয়ে বললেন, ‘আমরা বিরত হলাম, হে আমাদের প্রতিপালক!’ (আহমাদ ২/৩৫১) কিন্তু সাম্প্রতিক কালের তথাকথিত কিছু ‘চিন্তাবিদ’ বলেন যে, ‘মদ হারাম কোথায় বলা হয়েছে?!’ এমন চিন্তা-বুদ্ধির জন্য তো রোদন করতে হয়। মদকে অপবিত্র বা ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানী বিষয় গণ্য করে তা হতে দূরে থাকতে আদেশ দেওয়া এবং দূরে থাকাকে সফলতার কারণ গণ্য করা ঐ ‘মুজতাহিদ’দের নিকট হারাম হওয়ার জন্য (দলীল হিসাবে) যথেষ্ট নয়! যার মতলব হল, আল্লাহর নিকট অপবিত্র বস্তুও বৈধ, শয়তানী কাজও বৈধ। যে জিনিস থেকে আল্লাহ দূরে থাকতে বলেন, সে জিনিসও হালাল। যে কাজ সম্পাদন করাকে অসফলতা ও বর্জন করাকে সফলতার কারণ গণ্য করা হয়, তাও বৈধ! সুতরাং ‘ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিঊন।’

     সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫১ | মায়েদা ৬ নং আয়াত

    মুশরিকদের সংগে বন্ধুত্ব করা ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য করা। এর দলীল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী:


    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ [المائ‍دة: ٥١]


    “হে মুমিনগণ! ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম জাতিকে সৎপথে পরিচালিত করেন না’’। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত-৫১] 

     সূরা মায়েদা শানে নুযুল 

    নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু

    নামকরণ

    মায়িদাহ অর্থ খাওয়ার পাত্র, টেবিল ক্লথ, খাদ্য দ্রব্য ইত্যাদি, এ সূরার একস্থানে ‘মায়িদাহ’ শব্দের উল্লেখ আছে এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রতি অবতীর্ণ অনুগ্রহ ও জীবিকার কথা এই সূরায় আছে। সেহেতু এর নামকরণ করা হয়েছে মায়িদাহ।

    নাযিলের সময়-কাল

    হোদাইবিয়ার সন্ধির পর ৬ হিজরীর শেষের দিকে অথবা ৭ হিজরীর প্রথম দিকে এ সূরাটি নাযিল হয়। সূরায় আলোচ্য বিষয় থেকে একথা সুস্পষ্ট হয় এবং হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনাও এর সত্যতা প্রমাণ করে। ষষ্ঠ হিজরীর যিলকদ মাসের ঘটনা । চৌদ্দশ, মুসলমানকে সাথে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরাহ সম্পন্ন করার জন্য মক্কায় উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু কুরাইশ কাফেররা শক্রতার বশবর্তী হয়ে আরবের প্রাচীনতম ধর্মীঁয় ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁকে উমরাহ করতে দিল না। অনেক তর্ক বিতর্ক ও বাদানুবাদের পর তারা এতটুকু মেনে নিল যে, আগামী বছর আপনারা আল্লাহর ঘর যিয়ারত করার জন্য্য আসতে পারেন। এ সময় একদিকে মুসলমানদেরকে কাবাঘর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করার নিয়ম কানুন বাতলে দেবার প্রয়োজন ছিল, যাতে পরবর্তী বছর পূর্ণ ইসলামী শান শওকতের সাথে উমরাহর সফর করা যায় এবং অন্য দিকে তাদেরকে এ মর্মে ভালভাবে তাকীদ করারও প্রয়োজন ছিল যে, কাফের শক্র দল তাদের উমরাহ করতে না দিয়ে যে বাড়াবাড়ি করেছে তার জবাবে তারা নিজেরা অগ্রবর্তী হয়ে যেন আবার কাফেরদের ওপর কোন অন্যায় বাড়াবাড়ি ও জুলুম না করে বসে। কারণ অনেক কাফের গোত্রকে হজ্জ সফরের জন্য মুসলিম অধিকারভুক্ত এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া আসা করতে হতো। মুসলমানদেরকে যেভাবে কাবা যিয়ারত করতে দেয়া হয়নি সেভাবে তারাও এ ক্ষেত্রে জোর পূর্বক এসব কাফের গোত্রের কাবা যিয়ারতের পথ বন্ধ করে দিতে পারতো। এ সূরার শুরুতে ভূমিকাস্বরূপ যে ভাষণটির অবতারণা করা হয়েছে সেখানে এ প্রসংগই আলোচিত হয়েছে। সামনের দিকে তের রুকূতে আবার এ প্রসংগটি উত্থাপিত হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রথম রুকূ থেকে নিয়ে চৌদ্দ রুকূ পর্যন্ত একই ভাষণের ধারাবাহিকতা চলছে। এ ছাড়াও এ সূরার মধ্যে আর যে সমস্ত বিষয়বস্তু আমরা পাই তা সবই একই সময়কার বলে মনে হয়।

    বর্ণনার ধারাবাহিকতা দেখে মনে হয় এ সমগ্র সূরাটি একটি মাত্র ভাষণের অন্তরভুক্ত এবং সম্ভবত এটি একই সংগে নাযিল হয়েছে। আবার এর কোন কোন আয়াত পরবর্তীকালে পৃথক পৃথকভাবে নাযিল হতেও পারে এবং বিষয়বস্তুর একাত্মতার কারণে সেগুলোকে এ সূরার বিভিন্ন স্থানে জায়গা মতো জুড়ে দেয়া হয়েছে । কিন্তু বর্ণনার ধারাবাহিকতার মধ্যে কোথাও সামান্যতম শূন্যতাও অনুভূত হয় না। ফলে একে দুটি বা তিনটি ভাষণের সমষ্টি মনে করার কোন অবকাশ নেই।

    নাযিলের উপলক্ষ

    আলে ইমরান ও আন্‌নিসা সূরা দুটি যে যুগে নাযিল হয় সে যুগ থেকে এ সূরাটির নাযিলের যুগে পৌঁছতে বিরাজমান পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে অনেক বড় রকমের পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। ওহোদ যুদ্ধের বিপর্যয় যেখানে মদীনার নিকটতম পরিবেশও মুসলমানদের জন্য বিপদসংকুল করে তুলেছিল। সেখানে এখন সম্পূর্ণ ভিন্নতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আরবে ইসলাম এখন একটি অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্র একদিকে নজ্‌দ থেকে সিরিয়া সীমান্ত এবং অন্যদিকে লোহিত সাগর থেকে মক্কার নিকট এলাকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। ওহোদে মুসলমানরা যে আঘাত পেয়েছিল তা তাদের হিম্মত ও সাহসকে দমিত এবং মনোবলকে নিস্তেজ করার পরিবর্তে তাদের সংকল্প ও কর্মোন্মদনার জন্য চাবুকের কাজ করেছিল। তারা আহত সিংহের মতো গর্জে ওঠে এবং তিন বছরের মধ্যে সমগ্র পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। তাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও আত্মদানের ফলে মদীনার চারদিকে দেড়শ, দুশ, মাইলের মধ্যে সমস্ত বিরোধী গোত্রের শক্তির দর্প চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। মদীনার ওপর সবসময় যে ইহুদী বিপদ শকুনির মতো ডানা বিস্তার করে রেখেছিল তার অশুভ পাঁয়তারার অবসান ঘটেছিল চিরকালের জন্য। আর হিজাযের অন্যান্য যেসব জায়গায় ইহুদী জনবসতি ছিল সেসব এলাকা মদীনার ইসলামী শাসনের অধীনে এসে গিয়েছিল। ইসলামের শক্তিকে দমন করার জন্য কুরাইশরা সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল খন্দকের যুদ্ধে। এতেও তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর আরববাসীদের মনে এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহই রইলো না যে, ইসলামের ও আন্দোলনকে খতম করার সাধ্য দুনিয়ার আর কোন শক্তির নেই। ইসলাম এখন আর নিছক একটি আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শের পর্যায় সীমিত নয়। নিছক মন ও মস্তিষ্কের ওপরই তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং ইসলাম এখন একটি পরাক্রান্ত রাষ্ট্রীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের সীমানায় বসবাসকারী সমস্ত অধিবাসীর জীবনের ওপর তার কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত। এখন মুসলমানরা এতটা শক্তির অধিকারী যে, যে চিন্তা ও ভাবধারার ওপর তারা ঈমান এনেছিল সে অনুযায়ী স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনকে গড়ে তোলার এবং সে চিন্তা ও ভাবধারা ছাড়া অন্য কোন আকীদা-বিশ্বাস, ভাবধারা, কর্মনীতি অথবা আইন-বিধানকে নিজেদের জীবন ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ করতে না দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার তারা লাভ করেছিল।

    তাছাড়া এ কয়েক বছরের মধ্যে ইসলামী মূলনীতি ও দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী মুসলমানদের নিজস্ব একটি কৃষ্টি ও সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছিল। এ সংস্কৃতি জীবনের যাবতীয় বিস্তারিত বিষয়ে অন্যদের থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র ভাবমূর্তির অধিকারী ছিল। নৈতিকতা, স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ, জীবন যাপন প্রণালী, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষেত্রে মুসলমানরা এখন অমুসলিমদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইসলামী রাষ্ট্রের সমস্ত মুসলিম অধ্যুসিত জনপদে মসজিদ ও জামায়াতে সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেক জনবসতিতে ও প্রত্যেক গোত্রে একজন ইমাম নিযুক্ত রয়েছে। ইসলামের দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন-কানুন অনেকটা বিস্তারিত আকারে প্রণীত হয়ে গেছে এবং মুসলমানদের নিজস্ব আদালতের মাধ্যমে সর্বত্র গেগুলো প্রবর্তিত হচ্ছে। লেনদেন ও কেনা –বেচা ব্যবসায় বাণিজ্যের পুরাতন রীতি ও নিয়ম রহিত তৈরী হয়ে গেছে। বিয়ে ও তালাকের আইন, শরয়ী পরদা ও অনুমতি নিয়ে অন্যের গৃহে প্রবেশের বিধান এবং যিনা ও মিথ্যা অপবাদের শাস্তি বিধান জারি হয়ে গেছে। এর ফলে মুসলমানদের সমাজ জীবন একটি বিশেষ ছাঁচে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। মুসলমানদের ওঠা, বসা, কথাবার্তা, পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং জীবন যাপন ও বসবাস করার পদ্ধতিও একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্টে সমুজ্জল হয়ে উঠেছে। এভাবে ইসলামী জীবন একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করার এবং মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও তামাদ্দুন গড়ে ওঠার পর, তারা যে আবার কোন দিন অমুসলিম সমাজের সাথে মিলে একাত্ম হয়ে যেতে পারে। তেমনটি আশা করা তৎকালীন অমুসলিম বিশ্বের পক্ষে আর সম্ভবপর ছিল না।

    হোদায়বিয়ার চুক্তি সম্পাদিত হবার পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক ছিল এই যে, কুরাইশ কাফেরদের সাথে তাদের ক্রমাগত যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও সংঘাত লেগেই ছিল। নিজেদের ইসলামী দাওয়াতে সীমানা বৃদ্ধি ও এর পরিসর প্রশস্ত করার জন্য অবকাশই তারা পাইনি। হোদাইবিয়ার বাহ্যিক পরাজয় ও প্রকৃত বিজয় এ বাধা দূর করে দিয়েছিল । এর ফলে কেবল নিজেদের রাষ্ট্রীয় সীমায়ই তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে পায়নি এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ইসলামের দাওয়াত বিস্তৃত করার সুযোগ এবং অবকাশও লাভ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজটিরই উদ্ধোধন করলেন ইরান, রোম মিসর ও আরবের বাদশাহ ও রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে পত্র লেখার মাধ্যমে । এ সাথে ইসলাম প্রচারকবৃন্দ মানুষকে আল্লাহর দীনের দিকে আহবান জানাবার জন্য বিভিন্ন গোত্র এ কওমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেন।

    সুরার আলোচ্য বিষয়সমূহ

    নিম্নলিখিত তিনটি বড় বড় বিষয় এ সূরাটির অন্তরভুক্ত

    এক. মুসলমানদের ধর্মীয়, তামাদ্দুনিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আরো কিছু বিধি নির্দেশ। এ প্রসংগে হজ্জ সফরের রীতি-পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। ইসলামী নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কাবা যিয়ারতকারীদেরকে কোন প্রকার বাধা না দেবার হুকুম দেয়া হয়। পানাহার দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে হালাল ও হারামের চূড়ান্ত সীমা প্রবর্তিত হয়। জাহেলী যুগের মনগড়া বাধা নিষেধগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়। আহলী কিতাবদের সাথে পানাহার ও তাদের মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়। অযু, গোসল ও তায়াম্মুম করার রীতি পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। বিদ্রোহ ও অরাজকতা সৃষ্টি এবং চুরি-ডাকাতির শাস্তি প্রবর্তিত হয় । মদ ও জুয়াকে চূড়ান্তভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ করা হয়। কসম ভাঙার কাফ্‌ফারা নির্ধারিত হয়। সাক্ষ প্রদান আইনের আরো কয়েকটি ধারা প্রবর্তন করা হয়।

    দুই. মুসলমানদেরকে উপদেশ প্রদান । এখন মুসলমানরা একটি শাসক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে যাওয়ায় তাদের হাতে ছিল শাসন শক্তি। এর নেশায় বহু জাতি পথভ্রষ্ট হয়। মজলুমীর যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছিল এবং তার চাইতে অনেকে বেশী কঠিন পরীক্ষার যুগে মুসলমানরা পদার্পণ করেছিল। তাই তাদেরকে সম্বোধন করে বারবার উপদেশ দয়া হয়েছেঃ ন্যায়, ইনসাফ ও ভারসাম্যের নীতি অবলম্বন করো। তোমাদের পূর্ববর্তী আহ্‌লী কিতাবদের মনোভাব ও নীতি পরিহার করো। আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর হুকুম ও আইন কানুন মেনে চলার যে অংগীকার তোমরা করেছো তার ওপর অবিচল থাকো। ইহুদী ও খৃস্টানদের মতো তার সীমালংঘন করে তাদের মতো একই পরিণতির শিকার হয়ো না। নিজেদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালার জন্য কিতাবের অনুসরণ করো। মুনাফিকী নীতি পরিহার করো।

    তিন. ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে উপদেশ প্রদান। এ সময় ইহুদীদের শক্তি খর্ব হয়ে গেছে। উত্তর আরবের প্রায় সমস্ত ইহুদী জনপদ মুসলমানদের পদানত। এ অবস্থায় তাদের অনুসৃত ভ্রান্ত নীতি সম্পর্কে তাদেরকে আর একবার সর্তক করে দেয়া হয়। তাদেরকে সত্য-সঠিক পথে আসার দাওয়াত দেয়া হয়। এ ছাড়া যেহেতু হোদায়বিয়ার চুক্তির কারণে সমগ্র আরবে ও আশপাশের দেশগুলোয় ইসলামের দাওয়াত প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তাই খৃস্টানদেরকেও ব্যাপকভাবে সম্বোধন করে তাদের বিশ্বাসের ভ্রান্তিগুলো জানিয়ে দেয়া হয় এবং শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনার জন্য তাদেরকে আহবান জানানো হয়। যেসব প্রতিবেশী দেশে মূর্তিপূজারী ও অগ্নি উপাসক জাতির বসবাস ছিল সেসব দেশের অধিবাসীদেরকে সরাসরি সম্বোধন করা হয়নি। কারণ ইতিপূর্বে তাদের সমমনা আরবের মুশরিকদেরকে সম্বোধন করে মক্কায় যে হেদায়াত নাযিল হয়েছিল তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।

    আয়াত ভিত্তিক শানে শানে নুযূল

    যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) খাদ্য দ্রব্যের বৈধাবৈধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হন তখন এ সূরা অবতীর্ণ হয়। আরব দেশে তখন হারামে কোরবাণীর উদ্দেশে প্রেরিত পশুর গলায় চিহ্নস্বরূপ কিছু লটকানোর নিয়ম ছিল, যেন সবাই তা চিনতে পারে।

    আয়াত-২ : আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অবমাননা তিনভাবে হতে পারে। প্রথমতঃ এসব বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে চলা। দ্বিতীয়তঃ এসব বিধি-বিধানকে অসম্পূর্ণরূপে পালন করা। তৃতীয়তঃ নির্ধারিত সীমালংঘন করে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া। এ তিন প্রকারের অবমাননাকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (মারেফুল কোরান)

    আয়াত- ১৮ : একদা তিন ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর নিকট এসে আলাপ আলোচনা করল। রাসূল (সা.) তাদেরকে আল্লাহ্র পথে ডাকলেন এবং আযাবের ভয় দেখালেন। তখন তারা বলল, আমরা আল্লাহ্র বংশধর ও প্রিয় পাত্র নাসারাদের অনুরূপ। তাদের এ দাবীর প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়।

    আয়াত-৩৩ : ষষ্ঠ হিজরীতে উ’কল ও উ’রাইনার গোত্রের কতিপয় লোক মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করার পর মদীনার আবহাওয়ার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট গেলে, তিনি তাদেরকে, যাকাতের উটের দুগ্ধ ও মূত্র সেবন করতে বললেন। তারপর সুস্থ হয়ে তারা রাখাল ইয়াসারকে হাত, পা কেটে জিহ্বায় কাটা বিদ্ধ করে শহীদ করে। এ সংবাদ অবগত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত ব্যথিত হলেন এবং কুরুয বিন্ খালেদ আল্ ফিহরী কিংবা কারও মতে হযরত ইবনে জাবেরের নেতৃত্বে বিশজন অশ্বারোহীকে পাঠান। তারা তাদেরকে নবীর দরবারে হাযির করেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মারেফুল কোরান)

    আয়াত- ৪৯ : কা’আব ইবনে উসাইদ, আবদুল্লাহ্ ইবনে ছুরিয়া ও শাদ ইবনে কায়ছ রাসূল (সা.) - কে দিয়ে আল্লাহ্র বিধানের প্রতিকূলে কোন মীমাংসা করিয়ে বিপথগামী করতে পরামর্শ করল। তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মদ! আমরা ইহুদীদের মধ্যে সম্মানিত ও গোত্র প্রধান। আমরা মুসলমান হলে সমস্ত ইহুদী একযোগে মুসলমান হবে। তাই আমাদের পরস্পরের মাঝে একটি বিবাদ মীমাংসার জন্য আপনার নিকট আসলে আপনি আমাদের অনুকূলে রায় দেবেন। রাসূল (সা.) এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বললেন, তোমাদের কারও ঈমান আনা না আনায় কিছু আসে যায় না। আমি আল্লাহ্র বিধান অনুসারে মীমাংসা করব- পক্ষে বা বিপক্ষে যাই হোক। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

    আয়াত- ৫৫ : একদা হযরত আলী (রা.) নফল নামাযে রুকুতে থাকা অবস্থায় একজন ভিক্ষুক এসে আল্লাহ্র ওয়াস্তে ভিক্ষা প্রার্থনা করলে। তিনি স্বীয় আংটি খুলে ভিক্ষুকের প্রতি ছুঁড়ে দিলেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতে ‘রুকু’ অর্থ রুকুই থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে, হযরত উবাদা ইবনে ছামেত যখন ইহুদীদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং স্বীয় বন্ধুত্ব বিশেষতঃ আল্লাহ্ ও রাসূলের জন্য করেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। তখন শব্দের মর্মার্থ হবে হযরত উবাদা ইবনে ছামেত ও অন্যান্য ছাহাবীরা। হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ছালামকে তাঁর স্ব-গোত্রীয় লোকেরা সমাজচ্যুত করার প্রস্তাব করলে তিনি হুযুর (সা.)-কে এতদসম্বন্ধে অবহিত করেন। রসূলুল্লাহ্ (সা.) তখন এ আয়াত পাঠ করে শুনান।

    আয়াত-৬৫ : এখানে বলা হযেছে যে, ইহুদীরা আপনার প্রতি নাযিলকৃত কোরআনী নির্দেশাবলী দিয়ে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাদের কুফর ও অবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। আল্লাহ মুসলমানদেরকে তাদের অনিষ্ট হতে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে তাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তারা প্রকাশ্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে সাহস পায় না এবং তাদের কোন চক্রান্ত সফল হয় না। (মারেফুল কোরান)

    আয়াত-৬৬ : আয়াতের সারকথা হল, ইহুদীরা যদি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন পাকের নির্দেশাবলীর প্রতি বিশ্বাস করে এবং সেগুলো পালন করে তারা পরকালের প্রতিশ্র“ত নেয়া’মতরাজির যোগ্য হবে এবং ইহকালেও তাদের সামনে রিযিকের দ্বারা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। উল্লেখ যে, বর্তমান যুগের মুসলমানদের ব্যাপারেও এই একই কথা প্রযোজ্য। (মারেফুল কোরান)

    আয়াত-৮৩ : নাসারাদের সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল হয়। তাঁদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা.) সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করেছিলেন। তেলাওয়াত শুনে তাঁরা কেঁদে ফেলেছিলেন এবং বলেছিলেন- এটা হযরত ঈসা (আ.)-এর নিকট যা নাযিল হত তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতঃপর তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন। (তাফসিরে জালালাইন)

    আয়াত-৮৭ : কয়েকজন প্রধান ছাহাবী ক্বিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা শোনে হযরত ওসমান ইবনে মারওয়ানের গৃহে সমবেত হলেন এবং সংসার ত্যাগী হওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করলেন এবং আরো প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তাঁরা সারা দিন রোযা রাখবেন এবং সারা রাত নামায পড়বেন, গোশত ইত্যাদি খাবেন না, আর নারীদের সঙ্গ ত্যাগ করে, সম্পূর্ণ পৃথক থাকবেন। তখন অত্র আয়াতটি নাযিল হয়।

    আয়াত-৯৪ : পূর্ববতী আয়াত দ্বারা মদ পান ও জুয়া হারাম হয়ে যাবার পর কোন কোন ছাহাবী আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের মধ্যে অনেকেই তো (মদ ও জুয়া হারাম হওয়ার পূর্বে) মদ পানকারী ছিল এবং জুয়ালব্ধ মালও ভক্ষণ করত। আর এ অবস্থায়ই তারা মৃত্যুবরণ করেছে। তারপর এগুলো হারাম হয়েছে। সুতরাং তাদের কি অবস্থা হবে? তখন এই আয়াতটি নাযিল হয় (বয়ানুল কোরান)

    আয়াত-৯৫ : ষষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায় দেড় হাজার সাহাবীসহ এহরাম বাঁধা অবস্থায় বায়তুল্লাহ যিয়ারতে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে শিকার করার মত জন্তু তাদের একেবারে কাছেই আসত। কিন্তু তাঁরা এহরাম বাঁধা থাকার কারণে শিকার করতেন না। আলোচ্য আয়াতে এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (মারেফুল কোরান)

    আয়াত-১০১ : লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগল, যার উত্তরে তারা গুরুতর অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে বা কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণ হত। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

    আয়াত-১০৬ : বনূ সাহম গোত্রের বুদাইল নামক একজন মুসলমান তামীমুদ্দারী ও আদী ইব্নে বারা নামক দুজন খৃষ্টান (পরে মুসলমান হয়েছে) এর সঙ্গে সিরিয়ায় বাণিজ্য করতে গেলে পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় পতিত হলে সঙ্গীদ্বয়কে পরিত্যক্ত স্বর্ণ খচিত পাত্রটিসহ সকল মালামাল ফেরত দেয়। অবশেষে তার ওয়ারিশরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট মুকাদ্দমা পেশ করলে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

    আয়াত-১১০ : অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ.) কে একটি বিশেষ মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হল তিনি মানুষের সাথে শিশু অবস্থায়ও কথা বলেন এবং পরিণত বয়সেও কথা বলেন। জন্ম গ্রহণের প্রথম দিকে শিশু কথা বলতে পারে না। কোন শিশু মায়ের কোলে বা দোলনায় কথা-বার্তা বললে, তা তার বিশেষ স্বাতন্ত্র্যরূপে গণ্য হবে। পরিণত বয়সে কথা বলা, যা আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, কোন উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়। প্রত্যেক মানুষই এ বয়সে কথা বলে থাকে। কিন্তু ঈসা (আ.) শিশু অবস্থায় কথা বলা তো স্পষ্টই মু’জিযা। আর তাঁর জন্য পরিণত বয়সেও কথা বলা মু’জিযা। কেননা, এতে বুঝা যায় যে, তিনি পুনর্বার পৃথিবীতে পদার্পণ করবেন। কারণ পরিণত বয়সের পূর্বেই তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (মারেফুল কোরান

    Tag:সূরা আল মায়েদা আয়াত, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫৫, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৯০, সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫১, সূরা মায়েদা ৬ নং আয়াত, সূরা মায়েদা শানে নুযুল 



    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url

     আমাদের সাইটের সকল পিডিএফ এর পাসওয়ার্ড হচ্ছে timeofbd.com