ময়দার উপকারিতা | ময়দা দিয়ে সহজ রেসিপি এবং ত্বকের যত্ন
ময়দার পিঠা রেসিপি
ময়দার উপকারিতা
তেল পরিষ্কার করতে: তেলের বােতল উল্টে সব তেল মাটিতে পড়ে গেছে? তেলতেলে ভাব উঠানাে খুব বেশি ঝামেলা। তবে ময়দা এই কাজকে পানির মতাে সহজ করে দেবে। তেলের উপর ময়দা ছিটিয়ে দিন। ময়দা সব তেল শুষে নেবে। এরপর ভেজা একটি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। সমস্যা শেষ! সিঙ্ক
পরিষ্কার করতে : তেল চিটচিটে সিঙ্ক পরিষ্কার করতে ময়দা ভীষন কাজের।
সিঙ্কে ময়দা ছড়িয়ে দিন। এরপর ভেজা একটা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। সিঙ্ক চকচক করবে, কোন প্রকার লিকুইড ছাড়াই!
গাছকে পােকার হাত থেকে বাচাঁতে: ছোট ছোট গাছকে পােকার হাত থেকে বাচাঁতে ময়দা খুব ভালাে কাজ করে। একটি লবন দানিতে ময়দা নিন। এর সাথে জল মিশিয়ে ভালাে করে ঝাকিয়ে গাছের গােড়ায় ছেড়ে দিন। এতে সব পােকা বের হয়ে যাবে। দু দিন পর জল দিয়ে ময়দা ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু হিসেবে: শ্যাম্পু হিসেবে ময়দা ব্যবহার করতে পারেন। ময়দা ড্রাই শ্যাম্পু হিসেবে দারুণ কাজ করে। একবার ব্যাবহার করে দেখতে পারেন।
ময়দা দিয়ে সহজ রেসিপি
শিমেরফুল পিঠা (ফেনী জেলা রেসিপি)
উপকরণঃ
ডিম (২ টা)
ময়দা (এক থেকে দেড় কাপ)
চিনি (পৌনে এক কাপ)
লবণ
সয়াবিন তেল (২ কাপ)
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে একটা বাটিতে ডিম ভেঙে নিতে হবে ।একটু লবণ আর চিনি দিয়ে ভাল করে ফেটে নিতে হবে চিনি ভাল করে মিশে গেলে অল্প অল্প করে ময়দা মিশাতে হবে।এভাবে একটা ঢো তৈরি হবে।ঢো টা একটু নরম হলেই ভাল বেলতে সহজ হবে।এবার ছোট ছোট লিচি কেটে রুটি বানাতে হবে একটা গোল বোতলের ঢাকনা বা কিছু দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে শিমের ফুলের শেপ দিতে হবে।এবার এগুলো ডুবো তেলে খুব কম আচে ভাজলে ই হয়ে যাবে শিমের ফুল পিঠা।
ময়দা দিয়ে ত্বকের যত্ন
ত্বকের যত্নে ময়দার ব্যবহার
ময়দার রয়েছে অনেক গুণ। খুব সহজেই চটজলদি ময়দার সঙ্গে বেসন মিশিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়াই যায়। অথচ সেই সময়টা আমদের হাতে নেই। নিজের জন্য একটু সময় বের করে নিন। আর ত্বকের যা যা সমস্যা রয়েছে ময়দা দিয়ে করে ফেলুন সব সমস্যার সমাধান। জেনে নেওয়া যাক ময়দার গুণাগুণ সম্পর্কে।
১) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে ময়দা ব্যবহার করতেই পারেন। পার্লারে গিয়ে একগুচ্ছ টাকা খরচ না করে খুব সহজেই ময়দা দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। এক চামচ ময়দার সঙ্গে দু’চামচ বেসন মিশিয়ে নিন। এর পরে ময়দা ও বেসনের মধ্যে এক চামচ পাতিলেবুর রস ও এক চামচ দুধ মিশিয়ে প্যাকটি বানান। ১৫-২০ মিনিট মুখের মধ্যে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২) ফেসপ্যাক
যে কোনো ত্বকে ময়দার ফেস-প্যাক ব্যবহার করা যেতেই পারে। দুই চামচ ময়দার সঙ্গে এক চামচ বেসন মেশান। আর এক চামচ হলুদ গুঁড়ো, এক চামচ মধু , এক চামচ লেবুর রস ও পাকা কলাদিয়ে প্যাকটি বানিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপরে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩)তৈলাক্ত ত্বক
অনেক মানুষের মুখের ত্বক খুব তৈলাক্ত হয়। ময়দা ব্যবহার করেই দেখুন। দেখবেন মুখের তৈলাক্ত ভাব এক নিমেষে চলে গেছে। দুই চামচ ময়দা, এক চামচ বেসন, এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ গোলাপ জল, এক চামচ চন্দন গুঁড়ো দিয়ে প্যাকটি বানিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
৪) মুখের ট্যান
সূর্যের তাপ লেগে মুখের চামড়া পুড়ে গেছে। মুখের ট্যান তুলতেও সাহায্য করে ময়দা। একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। দুই চামচ ময়দা, এক চামচ বেসন, দুই চামচ পাকা পেঁপের প্লাপ, এক চামচ কমলালেবুর রস দিয়ে প্যাকটি বানিয়ে নিন। এর পরে ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
৫) ব্রণ দূর করতে
ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি ব্রণ দূর করতে চান খুব সহজেই বাড়িতে বসে ময়দা দিয়েই করতে পারেন সেই সমস্যার সমাধান। এক চামচ ময়দা, এক চামচ বেসন ও এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাকটি বানান। এর পরে মুখের যেখানে যেখানে ব্রণ রয়েছে সেই জায়গায় প্যাকটি লাগান। অন্তত ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ময়দার আটার পার্থক্য
কি কি উপাদান থাকে? এদের প্রস্তুত প্রণালী কি ?
আটা ও ময়দার মধ্যে পার্থক্য আসলে এদের প্রস্তুতপ্রনালীতে। আটা ও ময়দা দুটোই গমের তৈরী। তবে, আটা এবং ময়দা বানানোর প্রক্রিয়া আসলে ভিন্ন।
1.প্রস্তুত প্রণালী:
আটা-
আটা এবং ময়দা বানানোর প্রক্রিয়া আসলে ভিন্ন। গম পিষে তৈরি করা হয় আটা। এতে গমের বীজের সঙ্গে তার খোসাও পিষে ফেলা হয়। এ কারণে আটার রং অনেকটা বাদামী হয়।
যখন আটা তৈরী হয় তখন তাতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপদানগুলি মজুদ থাকে। যেমন ফাইবার, এই ফাইবার থাকার কারণে আটা দিয়ে তৈরী খাবার সহজ পাচ্য হয়।
এছাড়া ফাইবার আমাদের হজমে সাহায্য করে, মেটাবলিসমকে বাড়িয়ে তোলে এছাড়া কনস্টিপেশনের সমস্যা হতে দেয় না। এছাড়া এই ফাইবার আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়তে দেয়না।
ময়দা-
কিন্তু ময়দা বানাতে আটাকে পরিশোধিত করা হয়। আলাদা করা হয় খোসা। এ কাজটি কয়েক দফা করলেই ময়দা মেলে।
ময়দাকে 'অল পারপাসস ফ্লাওয়ার' বলা হয়। এর সুন্দর শুভ্র চেহারা ও মসৃণতা আনার জন্যে রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ব্লিচ করা হয়। এই কারণে ময়দা দেখতে সাদা ধবধবে হয়।
2.শরীরে এনার্জি প্রদান-
আটাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৫ বর্তমান। এগুলি প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলি শরীরে এনার্জি প্রদান করে এছাড়া নতুন রক্তকোষের জন্ম দেয়।
ময়দাতে এই সমস্ত জরুরি ভিটামিন প্রায় সমস্তই নষ্ট হয়ে যায়। ফলত ময়দা আমাদের শরীরের কোনো উপকারেই লাগে না।
3.রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা / গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Glycemic Index)
ময়দা Glycemic Index আটার অনেক ওপরে অবস্থান করে।
এই ইনডেক্সে যারা ওপরে অবস্থান করে সে সব খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এর ফলে ইন্সুলিন কম মাত্রায় তৈরী হয়। ফলত আমাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে ত্বরান্নিত করে।
এছাড়া ময়দা আমাদের খিদেকে বাড়িয়ে দেয়।
এটি আমাদের শরীররে মেদ জমার একটি অন্যতম কারণ এর ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। এই কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের আটার রুটি খেতে বলা হয়ে থাকে।
4.কি উপাদান পাওয়া যায় ?
আটায় থাকে অ্যামাইনো এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো দেহের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনায় সহায়তা করে। উদ্বেগ, ঘুম না আসা, মাথাব্যথা এবং বিষণ্নতা সারাতে এই উপাদানগুলো বেশ কাজ করে।
ময়দা অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যাসিডিক। কারণ ময়দা তৈরি করার সময় জরুরি নিউট্রিশনস ও ভিটামিন গুলি বেশিরভাগ মাত্রায় নষ্ট হয়ে যায় এবং একে অ্যাসিডক প্রকৃতির করে তোলে।
যার ফলে এটি আমাদের শরীরে বর্তমান ক্যালসিয়ামকে ক্ষয় করতে থাকে, ফলত আমাদের শরীরে হাড়গুলির ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। তাই ময়দা জাত দ্রব্য বেশি মাত্রায় খেলে আর্থারাইটিস এছাড়া আরো নানা ধরনের রোগের জন্ম দেয়।
সাধারণ ময়দা ব্যবহৃত হয় কেক, কুকি, পাস্তা, নুডলস, মাফিন এবং নানরুটি বানাতে। আর রুটি, পুরি এবং ডেজার্ট বানাতে লাগে আটা।
ময়দার হালুয়া রেসিপি
তুশা সিন্নি বা ময়দার হালুয়া।চলুন তাহলে এই হালুয়ার রেসিপিটা দেখি -
রেসিপি: Farzana Rahman
যা যা লাগবে-
চিনি ১+১/২ কাপ
ঘি ১/২ কাপ
পানি ৩/৪ কাপ
এলাচ ২টি
গোলাপজল ১টে.চা
দারচিনি(ছোট) ২টুকরা
ময়দা ২কাপ
লবঙ্গ ১টি
অরেঞ্জ ফুড কালার-কয়েক ফোঁটা
যেভাবে করবেন-
পানিতে চিনির সিরা করে ছেঁকে নিব এবং এতে গোলাপজল মিশাব।
ঘি গালিয়ে ময়দা ও গরম মসলা দিয়ে বাদামি রং করে ভেজে নামাব। ফুটানো সিরা প্রথমে অর্ধেকটা ময়দায় দিয়ে কাঠের চামচ দিয়ে ফেটব। বাকি সিরা দিয়ে কিছুক্ষণ ফেটব। মসৃন হলে হালুয়া প্লেটে ঢেলে সমান করব।এভাবেই বানিয়ে ফেলুন মজাদার তুশা সিন্নি বা ময়দার হালুয়া
Tag:ময়দার উপকারিতা, ময়দা দিয়ে সহজ রেসিপি, ময়দার পিঠা রেসিপি , ময়দা দিয়ে ত্বকের যত্ন, ময়দার আটার পার্থক্য, ময়দার হালুয়া রেসিপি