সূরা আনফালের তাফসীর | সূরা আনফাল আয়াত ২,৩০,১২,৬০,৭০

Sadia
0

 

সূরা আনফাল, সূরা আনফালের তাফসীর , সূরা আনফাল আয়াত ৩০, সূরা আনফাল আয়াত ২, সূরা আনফাল আয়াত ৬০, সূরা আনফাল আয়াত ১২, সূরা আনফাল আয়াত ৭০


    সূরা আনফাল আয়াত ২

    প্রিয় পাঠকবৃন্দ টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আপনারা অনেকেই হয়তো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সূরা আনফালের বিভিন্ন আয়াতগুলো খুঁজছেন। আর তাই আজকে আমরা আমাদের পোষ্ট টি তৈরি করেছে আমাদের এই পোস্টটা আজকের সূরা আনফালের সম্পর্কে যা যা থাকছেঃ সেগুলো হলো সূরা আনফাল, সূরা আনফালের তাফসীর , সূরা আনফাল আয়াত ৩০, সূরা আনফাল আয়াত ২, সূরা আনফাল আয়াত ৬০, সূরা আনফাল আয়াত ১২, সূরা আনফাল আয়াত ৭০ । আশা করি পুরো পোস্টটি আপনারাাা ধর্য্য সহকারে পড়বেন এবং সঠিক তথ্যটি পাবেন।

     সূরা আনফালের তাফসীর

    সুরা_আল_আনফাল;

    .বিষয়ভিত্তিক আয়াতের তাফসির

    আল-কোরআনে ইরশাদ রয়েছে,

    “নিশ্চয়ই মু’মিনরা এরূপই হয় যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে, আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায়, আর তারা নিজেদের রবের উপর নির্ভর করে।


    যারা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং আমি যা কিছু তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে,


    এরাই সত্যিকারের ঈমানদার, এদের জন্য রয়েছে তাদের রবের সন্নিধানে উচ্চ পদসমূহ, আরও রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।”

    —[সুরা আল আনফাল;আয়াত ২-৪]


    আয়াতের তাফসীর:— 

    এ আয়াতগুলোতে প্রকৃত মু’মিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। 

    আল্লাহ তা‘য়ালা প্রকৃত মু’মিনের পরিচয় তুলে ধরতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন: 


    ১. মু’মিনদের সামনে যখন আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করা হয় তখন তাদের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে কেঁপে উঠে। অর্থাৎ তাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব, বড়ত্ব ও আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির কথা স্মরণ হয়, ফলে শাস্তির ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। 

    এটা হল তাদের মজবুত ঈমানের পরিচয়। ফলে আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে তাঁর আদেশগুলো পালন করে এবং নিষেধগুলো বর্জন করে। 

    *যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

     ‘এবং যখন তারা কোন অশ্লীল কার্য করে কিংবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে অপরাধসমূহের ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনা করে’ 

    —(সূরা আলি-ইমরান;আয়াত ১৩৫) 


    এ জন্য ইমাম সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন, আমি এ আয়াতের তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী সুদ্দী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি: 

    “অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির অন্তর ভয়ে কম্পিত হয়, যে কারো প্রতি জুলুম করতে চায় বা কোন অবাধ্য কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন তাকে বলা হয় আল্লাহকে ভয় করো, তখন তার অন্তর আল্লাহর শাস্তির ভয়ে কেঁপে উঠে ফলে, সে ঔ কাজ থেকে বিরত থাকে।”

    —(তাফসীর ইবনে কাসীর;অত্র আয়াতের তাফসীর) 


    ২. যখন আল্লাহ তা‘আলার কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ওপর তারা ভরসা করে । 

    ৩. তারা সালাত কায়েম করে এবং


    ৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্পদ থেকে তাঁর পথে ব্যয় করে।

    এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মুমিনদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। 

    কেউ কেউ বলেছেন উল্লিখিত আয়াতগুলোতে মু’মিনদের তিন রকমের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ রয়েছে, তাই তিন প্রকার পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। 


     মু’মিন সৎ আমল করলে তার ঈমান বৃদ্ধি পায় আর অবাধ্যমূলক কাজে জড়িত হলে ঈমান কমে যায়।

    এ ব্যাপারে উক্ত আয়াত ছাড়াও অনেক আয়াত রয়েছে।

    *যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:


    “তিনিই সেই সত্তা, যিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন, যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়।”

    —(সূরা ফাতাহ;আয়াত ৪) 


    *আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: 

    “যাতে আহলে কিতাবের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে, ঈমানদারদের ঈমান বৃদ্ধি পায় আর আহলে কিতাব ও মু’মিনগণ যেন সন্দেহ পোষণ না করে।”

    —(সূরা মুদ্দাসসির;আয়াত ৩১) 


    অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে— “সৎ আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় ও অসৎ আমল করলে হ্রাস পায়।” 


    অতএব, ঈমান বৃদ্ধি-হ্রাসও পায় এ বিশ্বাস রাখতে হবে। 

    সুতরাং, প্রকৃত মু’মিন হতে হলে অবশ্যই উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে। শুধু মুখে দাবী করলে হবে না। 

    আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:—


    ১. প্রকৃত ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: "তারা সালাত কায়েম করে এবং সম্পদের যাকাত প্রদান করে।"


    ২. সৎ আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং অবাধ্য ও নাফরমান কাজ করলে ঈমান হ্রাস পায়। 


    ৩. প্রকৃত ঈমানদারদের পরিণাম অত্যন্ত শুভ হবে। 

    —[তাফসিরে ফাতহুল মাজিদ;অত্র আয়াতসমূহের তাফসির।

     সূরা আনফাল আয়াত ৩০

    সূরা আনফালের ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-


    وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ


    “স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন অবিশ্বাসীগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তোমাকে বন্দি করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করেছিলেন এবং কৌশল গ্রহণকারীদের মধ্যে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ।” (৮:৩০)


    এই পবিত্র আয়াতটি ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়, যে ঘটনার কারণে আল্লাহর রাসূল মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। রাসূল (সা.)এর নবুয়্যত প্রাপ্তির ১৩ বছর পর যখন ইসলামের আহ্বান মক্কায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, দলে দলে মানুষ বিশেষ করে যুবকরা মুসলমান হচ্ছিল তখন উদ্বিগ্ন আরব নেতারা ইসলাম এবং রাসূলে খোদাকে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করে। দারুন্‌ নদওয়া নামক একটি স্থানে তারা মিলিত হয়। ইসলামকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য মক্কার নেতাদের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কেউ প্রস্তাব দেয় হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে বন্দী করে কারারুদ্ধ করা হোক, কেউ বলে না তাকে মক্কা থেকে অন্য কোথাও নির্বাসিত করা হোক, আবার কারো পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে মুহাম্মদকে হত্যা করা হোক যাতে তার ধর্ম বা মতাদর্শ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হত্যার প্রস্তাবটিই ওই বৈঠকে গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে এই পরিকল্পনায় অংশ নেবে যাতে মুহাম্মদ(সা.)এর আত্মীয়-স্বজন রক্তের বদলা নেয়ার জন্য উদ্যত হতে না পারে।


    এদিকে, আল্লাহর রাসূল কাফেরদের এই চক্রান্ত হযরত জিব্রাইল (আ.) অর্থাত অহির ফেরেশতার মাধ্যমে পেয়ে যান এবং সেই রাতেই আল্লাহর হুকুমে তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাসূলে খোদা (সা.) হযরত আলীকে তার বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার নির্দেশ দিয়ে যান যাতে কাফেররা এটা মনে করে যে পয়গম্বর (দ.) ঘরে তার বিছানাতেই শুয়ে আছেন। এই আয়াতে মহান আল্লাহ কাফেরদের সেই ষড়যন্ত্র এবং তার বিপরীতে আল্লাহর কৌশল সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন। এখানে এটাই বোঝানো হচ্ছে যে, অবিশ্বাসীদের গর্ব ও অহংকার করার কিছু নেই। তারা যেন এটা মনে না করে যে তাদের ষড়যন্ত্র বা কৌশল ব্যর্থ হবে না। আর মুমিনদেরও হতাশ হওয়া বা এটা মনে করা উচিত নয় যে আল্লাহ হয়ত তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন বা অপছন্দ করছেন।

     সূরা আনফাল আয়াত ৬০ 

    وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ

    [সুরা আনফাল , আয়াত ৬০ ] 

    তোমরা কা[ফির]দের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যদ্দবারা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত স[ন্ত্র]স্ত করবে, এছাড়া অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জাননা, কিন্তু আল্লাহ জানেন। আর তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় কর, তার প্রতিদান তোমাদেরকে পুরোপুরি প্রদান করা হবে, তোমাদের প্রতি (কম দিয়ে) অত্যাচার করা হবেনা . [8:60]

     সূরা আনফাল আয়াত ১২

    ওরা ষড়যন্ত্র করে এই আয়াতগুলো মুছে ফেলতে চেয়েছিল, আর আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ এখন সেই আয়াতগুলো একসাথে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটাই হচ্ছে ওদের ষড়যন্ত্র আর আল্লাহর পরিকল্পনা। মুমিনদের মনে রাখতে হবে,,আল্লাহর পরিকল্পনা সব সময় উত্তম।

     8:12/সূরা আল-আনফাল/আয়াত নং ১২

    اِذۡ یُوۡحِیۡ رَبُّکَ اِلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ اَنِّیۡ مَعَکُمۡ فَثَبِّتُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ سَاُلۡقِیۡ فِیۡ قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا الرُّعۡبَ فَاضۡرِبُوۡا فَوۡقَ الۡاَعۡنَاقِ وَ اضۡرِبُوۡا مِنۡہُمۡ کُلَّ بَنَانٍ ﴿ؕ۱۲﴾ 

    অনুবাদঃ 

    স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদেরকে অনড় রাখ’। অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেব তাদের হৃদয়ে যারা কুফরী করেছে। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে। -(আল-বায়ান)

     সূরা আনফাল আয়াত ৭০ 

    "অবশ্যই তুমি পাবে। যা তোমার থেকে চলে গেছে, তার থেকে উত্তম।”

    - সুরা আনফাল, আয়াত ৭০

    Tag:সূরা আনফাল, সূরা আনফালের তাফসীর , সূরা আনফাল আয়াত ৩০, সূরা আনফাল আয়াত ২, সূরা আনফাল আয়াত ৬০, সূরা আনফাল আয়াত ১২, সূরা আনফাল আয়াত ৭০ 



    Post a Comment

    0Comments

    প্রতিদিন ১০০-২০০ টাকা ইনকাম করতে চাইলে এখানে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনায় কাজে নিয়ে নেবো। ধন্যবাদ

    Post a Comment (0)