মুবাহ অর্থ কি | মুবাহালা কি | মুবাহালা অর্থ কি | মুবাহালার ঘটনা | মুবাহালা কখন করব | মুবাহালা কি শরিয়ত সম্মত | মুবাহালা

 

মুবাহ অর্থ কি | মুবাহালা কি | মুবাহালা অর্থ কি |   মুবাহালার ঘটনা | মুবাহালা কখন করব | মুবাহালা কি শরিয়ত সম্মত | মুবাহালা

মুবাহালা 

ইমাম নববী রহ. বলেন, 


আভিধানিক অর্থে 'মুবাহালা' মানে একে অপরকে লা'নত করা। অর্থাৎ উভয় পক্ষের লানতকারী মিথ্যুকদের উপর যেন আল্লাহর অবিশাপ নাযিল হয় এই বদ দুয়া করা।


المباهلة في اللغة هي الملاعنة ، أي الدعاء بإنزال اللعنة على الكاذب من المتلاعنَين ، و البَهلةُ اللَعنة


[তাহরীরু আলফাজিত তাম্বীহ, নববী ১/২৪৭]


আল্লামা ইবনু মানযূর থেকে বর্ণিত 


'মুবাহালা' হচ্ছে, যখন কোন সম্প্রদায় বিতর্কিত কোন বিষয়ের জন্য একত্রিত হয়ে বলতে থাকে: আমাদের মধ্যে যে জালিম তার উপর আল্লাহর লা'নত বর্ষি

[লিসানুল আরাব ১১/৭১]


অর্থাৎ পারিভাষিক অর্থে, যখন কোন বিতর্কিত বিষয়ে দুইটি দল বাতিলকে বাতিল সাব্যস্ত করতে এবং হককে হক সাব্যস্ত করার জন্য একত্রিত হয়ে একে অপরকে লানত করে তখন তাকে 'মুবাহালা' বলা হয়।


কুরআন, ও সালাফদের থেকে এই মুবাহালা প্রমাণিত।


আল্লাহ তা'আলা বলেন,


 (فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ)


"হে নবী আপনার কাছে যে জ্ঞান এসেছে, তা নিয়ে যারা আপনার সঙ্গে ঝগড়া করে তাদেরকে বলুন এসো, আমরা আমাদের ও তোমাদের পুত্রদের, আমাদের ও তোমাদের নারীদের এবং স্বয়ং আমাদেরকে ও স্বয়ং তোমাদেরকে মুবাহালার জন্য আহবান করি। তারপর প্রার্থনা করি যে, মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।" 


[সুরা আলে ইমরানঃ ৬১]


এই আয়াত নাযিলে পটভূমিঃ


দশম হিজরীতে মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ইয়েমেনের নাজরান এলাকায় একদল মুসলমানকে পাঠিয়েছিলেন। এর জবাবে নাজরানের খ্রিস্টানরাও মহানবীর সাথে বিতর্কের জন্য একদল খ্রিস্টানকে মদীনায় পাঠায়। তারা মদীনায় রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র সাথে হযরত ঈসা (আ.)'র ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে।


কিন্তু তারা যুক্তি ও সত্য মেনে নিতে অস্বীকার করে। এরপর আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পারস্পরিক অভিশাপের প্রস্তাব দেন। তিনি খ্রিস্টানদের বললেন, তোমরা তোমাদের কয়েকজন পুত্র, নারী ও ঘনিষ্ঠজনকে নিয়ে আস। আর আমরাও একই কাজ করে জনসমাবেশে এসে মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করব। নাজরানের খ্রিস্টানরা এই প্রস্তাব শুনে নিজেদের মধ্যে পরামর্শের জন্য সময় চায়। খ্রিস্টানদের প্রধান তাদেরকে বলল, প্রস্তাব মেনে নাও।


কিন্তু যদি দেখ, মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)  জনসমক্ষে তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজনকে নিয়ে পারস্পরিক অভিশাপ কামনা বা মুবাহালার জন্য উপস্থিত হয়, তবে তা করা থেকে বিরত থাকবে এবং কোনভাবে আপোষ করবে। 


নির্দিষ্ট দিনে খ্রিস্টানরা দেখলো মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাত্র চারজনকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। এই চারজন হলেন, রাসূল কন্যা ফাতেমা (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), জামাতা আলী (আ.) এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসান ও হোসাইন (আ.)। খ্রিস্টানদের প্রধান অন্যান্য খ্রিস্টানদের বললেন, আমি এমন কিছু চেহারা দেখতে পাচ্ছি, যদি তাঁরা দোয়া করেন, তাহলে পাহাড় টলে যাবে এবং যদি আমাদের ওপর অভিশাপ দেন, তাহলে আমরা একজনও জীবিত থাকব না। এ অবস্থায় তারা পারস্পরিক অভিশাপ বা মুবাহালায় যোগ দিতে অস্বীকার করল।


[সীরাতে ইবনু হিশাম ২/৪১২; তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/৩৭৪; তাফসীরে বাগাবী ২/৪৮]


নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, 


যার হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্ত্বার শপথ, নিশ্চয়ই নাজরান বাসীদের উপর আযাব খুব নিকটে চলে এসেছিল,  যদি তারা অভিসম্পাত করত তাহলে তারা বানর, শূকরে পরিণত হত! এবং অবশ্যই তাদের উপর অনবরত আগ্নেয়গিরির ঝটকা লাগত, এবং অবশ্যই নাজরান ও তার বাসিন্দাদের এমনকি গাছে থাকা পাখিদেরও আল্লাহ তা'আলা সমূলে মূলোৎপাটন করতেন। আর যদি তাদের উপর এসব আযাব অতিবাহিত হত তাহলে খ্রিষ্টানরা সকলে ধ্বংস হয়ে যেত।


والذي نفسي بيده إن العذاب قد تدلى على أهل نجران ولو تلاعنوا لمسخوا قردة وخنازير ولاضطرم عليهم الوادي نارا ، ولاستأصل الله نجران وأهله حتى الطير على الشجر ، ولما حال الحول على النصارى كلهم حتى هلكوا


[মুস্তাদরাকে হাকেম ২/৫৯৪; দালায়েল, আবু নুয়াইম ২/২৯৮; তারীখে তাবারী ৬/৪৭৮; আসবাবুন নুযূল,ওয়াহেদী পৃ. ৭৪-৭৫; তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/৩৬৮; তাফসীরে বাগাবী ২/৪৮; কানযুল উম্মাল ২/৩৭৯-৩৮০- ইমাম হাকেম এই হাদীসকে সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।]


ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম আল জাওযিয়্যাহ রহ. বলেন,


'বাতিলপন্থীদের সাথে বাক-বিতন্ডার সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট হুজ্জত প্রমানিত হলে আর তারা হকের পথে ফিরে না এলে বরং গোড়ামির উপর অটল থেকে গোয়ার্তমি করলে সুন্নাহ হচ্ছে, তাদেরকে মুবাহালার আহবান করা। কেনন মহান আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই কাজের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তিনি একথা বলেননি যে, আপনার পরে এই বিধান আপনার উম্মতের জন্য প্রযোজ্য হবেনা।''


[আদ দ্বাওউল মুনীর আলাত তাফসীর, ইবনুল কাইয়্যুম ২/৭১; যাদুল মা'আদ ৩/৬৪৩]


হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদি. থেকে বর্ণিত,  


''আক্বেব ও সাইয়্যেদ নামক দুজন নজরানের নেতা নবীজির মুবাহালা ও লানত গ্রহণ করার জন্য  রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসল। অতঃপর তাদের একজন বলল- একাজ করোনা, কেননা আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদ নবী হয়ে থাকেন আর আমাদের তিনি লানত করেন তাহলে আমরা কখনই সফল হবোনা এবং আমাদের পর আর কেউই অবিশিষ্ট থাকবেনা!''


 (جاءَ العاقبُ والسيّدُ صاحبا نجرانِ إلى رسولِ اللهِ -صلّى الله عليه وسلّم- يريدان أن يُلاعِناه، قال: فقال أحدُهما لصاحبِه: لا تفعل فواللهِ لئن كان نبيّاً فلاعنا لا نفلحُ نحن، ولا عقِبُنا من بعدِنا،) 


[সহীহ বুখারীঃ ৪৩৮০; সহীহ মুসলিমঃ ২৪২০]


পূর্বসূরি বহু উলামায়ে কেরাম যাদের মাঝে- ইমাম আওযাঈ, ইবনু তাইমিয়া,  ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ, ইবনু হাজার আসক্বালানী রহ. প্রমুখ এসব মুবাহালার আহবান করেছিলেন।


ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহ. থেকে বর্ণিত 


''অকাট্যভাবে সত্য প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পরেও বিরোধীরা যখন গোড়ামি করে তখন মুবাহালার ডাক দেওয়া শরীয়তসম্মত। এভাবে মুবাহালার ডাক দিয়েছিলেন ইবনু আব্বাস, এরপর ইমাম আওযাঈ। এছাড়াও একদল উলামাদের সাথেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। আর অভিজ্ঞতা বলে, যেসব বাতিলপন্থীরা মুহাবাহালায় অংশগ্রহণ করেছে তারা মুবাহালার প্রভাব বাস্তবায়ন হতে ঐদিন থেকে নিয়ে একটি বছরও সময় নেয়নি। এমন একজন ঘাড়ত্যাড়া যে মুলহিদদের পক্ষাবলম্বন করেছিল  তার সাথে আমারও মুবাহালা হয়েছিল, অতঃপর দুই মাস যেতে না যেতেই ওদের উপর মুবাহালার প্রভাব পড়েছে।''

টাগঃ মুবাহ অর্থ কি,মুবাহালা কি,মুবাহালা, মুবাহালার ঘটনা,মুবাহালা কখন করব,মুবাহালা কি শরিয়ত সম্মত, মুবাহালা অর্থ কি