আবার আসিব ফিরে ও সোনার তরী কবিতা | দুঃখ কষ্টের ও ছোটদের আকাশ নিয়ে কবিতা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ টাইম অফ বিডির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা এবং সালাম আসসালামু আলাইকুম আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।মানুষ কবিতা , আবার আসিব ফিরে , কষ্টের কবিতা , দুঃখের কবিতা, আকাশ নিয়ে কবিতা, ছোটদের কবিতা, সোনার তরী কবিতা গুলো নিয়ে আজকে আমাদের এই পোস্টটি তৈরি করা হয়েছে দয়া করে পুরো পোস্টটি আপনারা পড়বেন এবং আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
মানুষ কবিতা
মানুষ
---কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সাম্যের গান–
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ
ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি ।
‘পুজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময়
হলো !’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-
টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয় !
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা,
খাইনা তো সাত দিন !’
সহসা বন্ধ হল মন্দির , ভুখারী ফিরিয়া চলে
তিমির রাত্রি পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক
জ্বলে !
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই
কুটিকুটি !
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ
নিয়ে সাত দিন !’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল
মোল্লা–”ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গে-ভাগাড়ে গিয়ে ! নামাজ পড়িস
বেটা ?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা !’ মোল্লা হাঁকিল-
‘তা হলে শালা
সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত-
রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা !
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে–
“আশিটা বছর কেটে গেল,
আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল
দুয়ারে চাবী !”
কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায়
কালাপাহাড় ;
ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-
দ্ব ার !
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয়
সেখানে তালা ?
সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল
চালা !
হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের
জয় !
মানুষেরে ঘৃণা করি
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল
চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর
করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই
মানুষেরে মেরে ।
পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !–মুর্খরা সব শোনো
মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ
কোনো ।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের
মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-
বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে !
আমরা তাঁদেরি সন্তান , জ্ঞাতি ,
তাঁদেরি মতন দেহ
কে জানে কখন মোরাও
অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ।
হেস না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম
আমিই
কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম
।
হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি,
তোমাতে মেহেদি ঈসা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার
দিশা ?
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই,
কাহারে মারিছ লাথি ?
হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন
দিবারাতি !
অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ –
দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজানালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় !
হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর -বাসে
জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের
ইতিহাসে !
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ,
যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখেনি–হয়ত আসিছে সে এরই
ঘরে !
ও কে ? চন্ডাল ? চমকাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্য
জীব !
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব
।
আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে,
করিবে নান্দী পাঠ ।
রাখাল বলিয়া কারে কর হেলা, ও-
হেলা কাহারে বাজে !
হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল
সাজে !
চাষা বলে কর ঘৃণা !
দেখো চাষা রুপে লুকায়ে জনক বলরাম
এলো কি না !
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারও ধরিল হাল
তারাই আনিল অমর বাণী–
যা আছে র’বে চিরকাল ।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায়
নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলা -নাথ
গিরিজায়া, তা কি চিনি !
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-
মুষ্টি দিলে
দ্বার দিয়ে তাই মার
দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলৈ ।
সে মোর রহিল জমা -
কে জানে তোমারে লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে
বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ দু’চোখ স্বার্থ ঠুলি,
নতুবা দেখিতে,
তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলী ।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা মথিত
সুধা
তাই লুটে তুমি খাবে পশু ?
তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা ?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই
জানে
তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের
কোনখানে !
তোমারি কামনা-রাণী
যুগে যুগে পশু ফেলেছে তোমায় মৃত্যু
বিবরে টানি ।
আবার আসিব ফিরে
আবার আসিব ফিরে
(জীবনানন্দ দাশ)
-------------------------------
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে -এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় -হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব -কিশোরীর -ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা রায় -রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।
কষ্টের কবিতা | দুঃখের কবিতা
সমাধি
এ কে মিজান
শূললিত জুলির মাঝে কষ্টের তারায় দোদুল্যমান শবদেহ মন,
তুমি আমার হৃদয়ের বিছানায় শুয়ে কাতরানো অনন্ত যৌবনা জীবন।
তোমায় দেখি আমি নিশ্চুপ নিরবতা নিশি রাত দিন,
আবেগের বশে আবদ্ধ হয়ে রঙিয়েছি স্বপ্নে রঙিন।
পাখি উড়ে গেলেও পলক আমি ফেলতে পারি,
জীবনে মরণে আমি শুধু চেয়েছি তোমারি।
স্বপ্ন কোন দিন সত্যি হয় না ও আমার মন জয় পাখি,
শুন্য হৃদয়ে মরুভূমির বালুময়ে করিস কেন ডাকাডাকি।
অন্তর দেশে কেন সাজালি ঐ পোড়া মন,
যৌবন গেলো লিলা খেলা ছলে সং গোপন।
আর হয়তো ফিরবো না আমি তোমার ঐ ভব তুফান ভারী চুল্লি পোড়া গন্ধে ঘুম ভাঙ্গা সংসারে,
তুমি আপন করে নিয়েছো জীবন যাপন করা অশান্ত সমীরণ স্বর্গ সুখের হুর পাখা দুঃখের কারাগারে।
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলে শুধু জীবনে সুখী হয় না,
সুখি হতে গেলে সুন্দর একটা মানুষ চাই , মানুষ মানুষের কাছে দেনা।
ভুলের অরূপ রতন গলে রশি বেঁধে কানন্দে,
মনের খোঁজে জীবন দেব চরিত্রহীন না বানন্দে।
জীবন স্রোত বড় নিষ্ঠুর সন্দেহ স্বার্থপরতা হিংসা বিদ্বেষ পোষণ অভয়ারণ্য,
আমার জীবনের সমস্ত প্রতিভা উৎসর্গ তোমার ঐ না দেখা মিষ্টি হাসির জন্য।
আকাশ নিয়ে কবিতা
জীবনানন্দ দাশের কবিতা
অনেক আকাশ
গানের সুরের মতো বিকালের দিকের বাতাসে
পৃথিবীর পথ ছেড়ে- সন্ধ্যার মেঘের রঙ খুঁজে
হৃদয় ভাসিয়া যায়,- সেখানে সে কারে ভালোবাসে!-
পাখির মতন কেঁপে- ডানা মেলে- হিম-চোখ বুজে
অধীর পাতার মতো পৃথিবীর মাঠের সবুজে
উড়ে উড়ে ঘর ছেড়ে কতো দিকে গিয়েছে সে ভেসে,-
নীড়ের মতন বুকে একবার তার মুখ গুঁজে
ঘুমাতে চেয়েছে,- তবু- ব্যথা পেয়ে গেছে ফেঁসে-
তখন ভোরের রোদে আকাশে মেঘের ঠোঁট উঠেছিলো হেসে!
আলোর চুমায় এই পৃথিবীর হৃদয়ের জ্বর
ক’মে যায়;- তাই নীল-আকাশের স্বাদ-সচ্ছলতা
পূর্ণ ক’রে দিয়ে যায় পৃথিবীর ক্ষুধিত গহ্বর;
মানুষের অন্তরের অবসাদ- মৃত্যুর জড়তা
সমুদ্র ভাঙিয়া যায়;- নক্ষত্রের সাথে কয় কথা
যখন নক্ষত্র তবু আকাশের অন্ধকার রাতে-
তখন হৃদয়ে জাগে নতুন যে এক অধীরতা,
তাই ল’য়ে সেই উষ্ণ-আকাশেরে চাই যে জড়াতে
গোধূলির মেঘে মেঘে, আকাশের মতো র’বো নক্ষত্রের সাথে!
আমারে দিয়েছ তুমি হৃদয়ের যে এক ক্ষমতা
ওগো শক্তি,- তার বেগে পৃথিবীর পিপাসার ভার,
বাধা পায়, জেনে লয় লক্ষত্রের মতন স্বচ্ছতা!
আমারে করেছ তুমি অসহিষ্ণু- ব্যর্থ- চমৎকার
জীবনের পারে থেকে যে দেখেছে মৃত্যুর ওপার,
কবর খুলেছে মুখ বার-বার যার ইশারায়,
বীণার তারের মতো পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষার তার
তাহার আঘাত পেয়ে কেঁপে-কেঁপে ছিঁড়ে শুধু যায়!
একাকী মেঘের মতো ভেসেছে সে- বৈকালের আলোয়- সন্ধ্যায়!
ছোটদের কবিতা
সারাদিনের কাজ
কলমেঃ হোসাইন আল-নাহিদ
সকাল বেলা উঠবো আমি
মোড়গ যখন ডাকে,
ভোর বাতাসে ঘুরবো আমি
রাস্তার আঁকে-বাঁকে।
শিশির গায়ে মাখবো আমি
শীত যদিও লাগে,
পরের গাছের আম কুড়াবো
ইচ্ছা মনে জাগে।
সকাল হলে যাবো চলে
প্রাইমারি ইস্কুল,
রাস্তার পাশে দোকান হতে
নেবো কিনে পিস্তুল।
দুপুরবেলা বন্ধ খেলা
ইস্কুল হবে ছুটি
টিফিন বেলা কিনো খাবো
মধুবন আর পাউরুটি।
বিকেলবেলা চলবে খেলা
বন্ধ লেখাপড়া
বকা দিবে বাবা মায়ে
বলবে কথা কড়া।
সন্ধা হলে যাবো চলে
পড়ার টেবিলে,
মন গড়া সব গল্প করবো
পড়াশোনা উড়িয়ে চিলে।
রাত্রি হলে ঘুমিয়ে যাবো
গল্প শুনে দিদার,
সকাল হলে উঠে যাবো
নতুন করে আবাদার ।।
সোনার তরী কবিতা
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা—
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু-ধারে—
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী-’পরে।
আর আছে?— আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে—
এখন আমারে লহ করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই— ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
~সোনার তরী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Tag:মানুষ কবিতা , আবার আসিব ফিরে , কষ্টের কবিতা , দুঃখের কবিতা, আকাশ নিয়ে কবিতা, ছোটদের কবিতা , সোনার তরী কবিতা