বসন্তের বৃষ্টির বিরহের কবিতা | জীবনানন্দ দাশের ও বনলতা সেন এর কবিতা
বসন্তের কবিতা
কবিতা – বসন্ত নয় অবহেলা
কবি- দর্পন কবির
বসন্ত নয়, আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিলো অবহেলা
ভেবেছিলাম, অনেকগুলো বর্ষা শেষে শরতের উষ্ণতা মিশে এলো বুঝি বসন্ত!
দরজা খুলে দেখি আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা
মধ্য দুপুরের তির্যক রোদের মতো
অনেকটা নির্লজ্জভাবে আমাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলা
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখেছিলাম
আমার দীনদশায় কারো করুণা বা আর্তিব পেখম ছড়িয়ে আছে কি না
ছিলো না
বৃষ্টিহীন জনপদে খড়খড়ে রোদ যেমন দস্যুর মতো অদমনীয়
তেমনি অবহেলাও আমাকে আগলে রেখেছিলো নির্মোহ নিঃসংকোচিত
আমি অবহেলাকে পেছনে ফেলে একবার ভোঁ-দৌড় দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম
তখন দেখি আমার সামনে কলহাস্যে দাঁড়িয়েছে উপেক্ষা
উপেক্ষার সঙ্গেও একবার কানামাছি খেলে এগিয়ে গিয়েছিলাম তোমাদের কোলাহল মুখর আনন্দ সভায়
কি মিলেছিলো?
ঠোঁট উল্টানো ভৎসনা আর অভিশপ্ত অনূঢ়ার মতো এক তাল অবজ্ঞা
তাও সয়ে গিয়েছিলো একটা সময়
ধরেই নিয়েছিলাম আমার কোনো কালেই হবে না রাবেন্দ্রিক প্রেম
তোমাদের জয়গানে করতালিতে নতজানু থেকেছিলো আমার চাপা আক্ষেপ লজ্জা
বুঝে গিয়েছিলাম জীবনানন্দময় স্বপ্ন আমাকে ছোঁবে না
জয়নুলের রঙ নিয়ে কল্পনার বেসাতি
হারানো দিনের গানের ঐন্দ্রালিক তন্ময়তা
বা ফুল, পাখি, নদীর কাব্যালাপে কারা মশগুল হলো, এ নিয়ে কৌতূহল দেখাবার দুঃসাহস আমি দেখাইনি কখনো
এত কিছু নেই জেনেও নজরুলের মতো বিদ্রোহী হবো, সেই অমিত শক্তিও আমার ছিলো না
মেনে নেয়ার বিনয়টুকু ছাড়া আসলে আমার কিছুই ছিলো না
শুধু ছিলো অবহেলা, উপেক্ষা আর অবজ্ঞা
হ্যাঁ, একবার তুমি বা তোমরা যেন দয়া করে বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলে আমার দিকে
তাচ্ছিল্য নয়, একটু মায়াই যেন ছিলো
হতে পারে কাঁপা আবেগও মিশ্রিত ছিলো তোমার দৃষ্টিতে
ওইটুকুই আমার যা পাওয়া
আমি ঝড়ে যাওয়া পাতা, তুমি ছিলে আকস্মিক দমকা হাওয়া
তারপরও অবহেলার চাদর ছাড়িয়ে
উপেক্ষার দেয়াল ডিঙিয়ে
ও অবজ্ঞার লাল দাগ মুছে জীবনের কোনো সীমারেখা ভাঙতে পারিনি আমি
এ কথা জানে শুধু অন্তর্যামী
অনেক স্বপ্নপ্রবণ হয়ে একবার ভেবেছিলাম
এই অবহেলা তুষারপাতের মুখচ্ছবি, উপেক্ষা কাচের দেওয়াল, অবজ্ঞা কুচকুচে অন্ধকার
এর কিছুই থাকবে না একটি বসন্তের ফুঁৎকারে
একটি ঝলমলে পোশাক গায়ে চড়িয়ে হাতের মুঠোয় বসন্ত নিয়ে অন্তত একটি সন্ধ্যাকে উজ্জ্বল করে নেবো
এমন ভাবাবেগও ছিলো আকাশের কার্নিশে লেপ্টে থাকা পেঁজা মেঘের মতো
ঐ মেঘ কখনো বৃষ্টি হয়ে নামেনি
তোমার বা তোমাদের নাগরিক কোলাহল কখনো থামেনি
অর্ধেক জীবন ফেলে এসে দেখি অনেক কিছু বদলে গেছে
সেকি!
কোথায় হারালো কৈশোরের দিনলিপি বিপন্ন করা অবহেলা
স্বপ্নকে অবদমনের স্বরলিপিতে আটকে ফেলা উপেক্ষা
আর তারুণ্যকে ম্রিয়মাণ করে রাখার অবজ্ঞা
ওরা আমাকে চোখ রাঙাতে পারে না ঠিক, তবে এখনো পোড় খাওয়া দিন বড্ড রঙিন
আমি আজ সমুদ্র জলে হাত রেখে বলে দিতে পারি
কোন ঢেউয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে তোমাদের গোপন অশ্রুকণা
আকাশ পানে তাকিয়ে বুঝতে পারি কার দীর্ঘশ্বাসে ঝড়ে পড়ছে নক্ষত্র
এমনকি তুমি যে সম্রাজ্ঞীর বেশের আড়ালের মিহিন কষ্ট চেপে হয়েছো লাবণ্যময় পাষাণ, পাথর
এটাও দেখতে পাই অন্তরদৃষ্টি দিয়ে
আমি জানি, দীর্ঘশ্বাসে ভরা এ আখ্যান যদি পেতো কবিতার রূপ
সেই অবহেলা হতো বসন্ত স্বরুপ
জীবনানন্দ দাশের কবিতা
জীবনান্দ দাসের কবিতা
_________ আট বছর আগে একদিন
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাদ
মরিবার হল তার সাধ।
বধু শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল, আশা ছিল জোছনায় তবু সে দেখিল
কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয় নি ঘুম বহুকাল- লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার
কোনোদিন জাগিবে না আর।
‘কোনদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম অবিরাম ভার
সহিবে না আর-’
এই কথা বলেছিল তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিত্বব্ধতা এসে।
তবুও তো পেঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায়–অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।
টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারি দিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;
মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোতে ভালোবাসে।
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কত দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন কোন্ বিকীর্ণ জীবন
অধিকার করে আছে ইহাদের মন:
দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘর শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
একা গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা একা;
যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
এই জেনে।
অশ্বত্থের শাখা
করে নি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে
সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করে নি কি মাখামাখি?
বলে নি কি: বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক দু-একটা ইদুর এবার!
জানায় নি পেচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?
জীবনের এই স্বাদ- সুপক্ক যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের-
তোমার অসহ্য বোধ হল;
মর্গে কি ওমোটে
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে!
শোনো
তবু এ মৃতের গল্প;-কোনো
নারীর প্রণয়ের ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিতা জীবনের সাধ
কোথাও রাখে নি কোনো খাদ,
সময়ের উদবর্তনে উঠে এসে বধূ
মধু-আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ‘পরে।
জানি-তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত ক্লান্ত করে:
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেচা অশ্বত্থের ডালে বসে এসে
চোখ পালটায় কয়: বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক দু একটা ইদুর এবার–
হে প্রগাঢ় পিতামহী , আজও চমৎকার?
আমিও তোকার মতো বুড়ো হব–বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব
কালীদহে বেনো জলে পার;
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।
বৃষ্টির কবিতা
কবিতা
বৃষ্টির দিনে
বদরুল ইসলাম বদর
আকাশেতে মেঘের খেলা
ভয় লেগেছে সারা বেলা
ডাকছে আকাশ ঘুড়ুম ঘুড়ুম
পায়রা ডাকছে বাক বাকুম।
বৃষ্টি পড়ছে টাপুরটুপুর
রাজ কন্যার পায়ে নুপুর
মানছে নাতো দিন আর দুপুর।
সাজছে আকাশ কত সাজে
যাচ্ছে মানুষ কত কাজে
ছাতা মাথায় নতুন সাজে।
বে্ঙ ডাকেছে ঘেং ঘেং
ডাক শুনে মাথা হচ্ছে হেং
চুড়ুই পাখির সরই টেং।
চৈত্র মাসের হাহাকার মাঠ
বৃষ্টির পানিতে ভরছে খাল বিল ঘাট।
বৃষ্টি পড়ছে ফোটা ফোটা
ঝরছে গাছের কত গুটা।
খেলছে শিশুরা কত যে খেলা
ঘরে ঘরে খেলার মেলা।
বিরহের কবিতা
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।
তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।
নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।
-নির্মলেন্দু গুণ
বনলতা সেন কবিতা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনারা অনেকেই হয়তো বনলতা সেন কবিতার খুঁজছেন তাই আমরা আমাদের আজকের এই পোষ্ট বনলতা সেন কবিতা নিয়ে হাজির করেছে আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে
কবিতা : বনলতা সেন।
কবি : জীবনানন্দ দাশ।
হাজার বছর ধরে আমি
পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে
নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;
আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো
নাটোরের বনলতা সেন। ......
নারী কবিতা
নারী
---মহাদেব সাহা।
যে হও, সে হও তুমি
যার হও, যে কোনাে গােত্রের হও
আর্য হও, অনার্যা রমণী হও, হও বানুবংশের দুহিতা
উজ্জ্বল খ্রিস্টানি হও, বৌদ্ধের যুবতী তুমি হও, ভুরুতে কটাক্ষ ধরাে
সেও তুমি শরীরে ধারণ করাে সেই একই নীলবর্ণ শিলা।
ওষ্ঠে ধরাে শিশুর আহার
কপালে কলঙ্ক ধরাে
হেলান গ্রীবায় ধরাে বুনাে রাজহাঁস
যে হও, সে হও তুমি
যাহার কুমারী হও, কন্যা হও, পরনারী হও,
সেও তুমি বক্ষে ধারণ করাে তৃণের স্বভাব; দেহে এই মােমের লাবণ্য ধরাে, অঙ্গীকার হও যার হও কোনাে ধর্মের হও
তুমি কৃতির নার্স, সিট্রেস,
তুমি নারী, তুমি অধিকার।
বন্ধু নিয়ে কবিতা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন বন্ধু নিয়ে কবিতা আর তাই আমরা আমাদের আজকের পোস্টটি তৈরি করেছি বন্ধু নিয়ে কবিতা আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে
বন্ধুত্বের ইতিউতি
জাহানারা বুলা।
বন্ধুত্ব গভীর কি করে হয়?
কাছে গেলাম, চেপে ধরলে,
চেটেপুটে খেয়ে নিলে?
এমন বন্ধু হতে পারবো আমি?
তাই বলে ভালোবাসার অনুরণন অনুভবে আনবো না?
জানতে চাইবো না - কেমন আছো?
জানাবো না- যতটুকু ভালো আছি, নিরুপায় হয়েই?
তুমি যে খুব ভালো থাকো, বোঝা যায় -
এই যেমন, মোটেও উন্মুখ নও কথা বলতে,
তোমাকে নিয়ে কবিতা অনুরূপ্য যা কিছু লিখি তা পড়তে।
হয় তো কাছে পেলে শক্ত আলিঙ্গনে বেঁধে
দীঘল চুলের সুবাসে উন্মত্ত হয়ে
আবেশ কম্পিত ঠোঁটে বলবে- ভালোবাসি।
ওটা ভালোবাসা নয়,
তৃষ্ণার সম্ভাব্য চরিতার্থের হরষ ওটা।
আমি যে ভাবনার আকাশ বুকে নিয়ে উড়াউড়ি করি,
শিশির, শিউলী বোঁটা হয়ে তোমার দাওয়ায় ঝরে পড়ি -
ওটা ভালোবাসা।
কাছে আসবো না, বলিনি তো!
একদিন চায়ের কাপে ঝড় তুলবো,
সিঙাড়ার আলু-বাদাম খুটে খেতেখেতে
চোখ তুলে বারবার তোমাকেই দেখবো,
হাতটাও ধরবো -
মুখোমুখি বসে থেকে এপাড়ে ওপাড়ে সেতু গড়ে তুলবো -
বন্ধুত্বে এটুকুই গভীরতা ভালো।
Tag:বসন্তের কবিতা, জীবনানন্দ দাশের কবিতা , বৃষ্টির কবিতা, বিরহের কবিতা, বনলতা সেন কবিতা, নারী কবিতা, বন্ধু নিয়ে কবিতা