সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা সমগ্র | Syed Shamsul Haque poem
সৈয়দ শামসুল হকের শ্রেষ্ঠ কবিতা | সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা
টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি বারকাতুহু । প্রিয় পাঠকবৃন্দ কেমন আছেন আপনারা সবাই ? আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আমিও ভাল আছি। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম সৈয়দ শামসুল হকের শ্রেষ্ট কবিতা, সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, । আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
আমি একটুখানি দাঁড়াব কবিতা | একটুখানি দাঁড়াবো সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা
আমি একটুখানি দাঁড়াব এবং দাঁড়িয়ে চলে যাব;
শুধু একটু থেমেই আমি আবার এগিয়ে যাব;
না, আমি থেকে যেতে আসিনি;
এ আমার গন্তব্য নয়;
আমি এই একটুখানি দাঁড়িয়েই
এখান থেকে
চলে যাব।
আমি চলে যাব
তোমাদের এই শহরের ভেতর দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি
এর মার্চপাস্টের যে সমীকরণ
এবং এর হেলিকপ্টারের যে চংক্রমণ,
তার তল দিয়ে তড়িঘড়ি;
আমি চলে যাব
তোমাদের কমার্সিয়াল ব্লকগুলোর জানালা থেকে
অনবরত যে বমন
সেই টিকার-টেপের নিচ দিয়ে
এক্ষুনি;
আমি চলে যাব
তোমাদের কম্পিউটারগুলোর ভেতরে যে
বায়ো-ডাটার সংরক্ষণ
তার পলকহীন চোখ এড়িয়ে
অবিলম্বে;
আমি চলে যাব
যেমন আমি যাচ্ছিলাম আমার গন্তব্যের দিকে
ধীরে ধীরে
বহুকাল ধরে
আমি একটি
দু’টি
তিনটি
প্রজন্ম ধরে।
আমি কথা দিচ্ছি
তোমাদের কোনো রমণীকে আমি চুম্বন করব না;
আমি কথা দিচ্ছি
তোমাদের কোনো সন্তানকে আমি কোলে করব না;
এবং কথা দিচ্ছি
তোমাদের এপার্টমেন্টের জন্যে আমি দরখাস্ত করব না,
তোমাদের ব্যাংক থেকে আমি ঋণ গ্রহণ করব না,
তোমাদের শাসন-পরিষদে আমি সদস্য হতে চাইব না,
তোমাদের নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না;
এবং আমি আরো কথা দিচ্ছি
তোমাদের বেতারে কোন ভাষণ দেব না,
তোমাদের কম্পিউটারে কোন তথ্য ফিড করব না,
তোমাদের হেলিকপ্টারে আমি উড্ডীন হতে চাইব না,
তোমাদের মার্চপাস্টে আমি ড্রামবাদক হব না।
তোমাদের এপার্টমেন্ট আমার কষ্ট,
তোমাদের উনোন আমার কষ্ট,
তোমাদের ব্যাংক আমার কষ্ট,
তোমাদের পরিষদ আমার কষ্ট,
তোমাদের আয়না আমার কষ্ট,
তোমাদের গেলাশ আমার কষ্ট,
তোমাদের রমণী আমার কষ্ট,
তোমাদের সন্তান আমার কষ্ট।
আমি শুধু একটু সময় দাঁড়িয়ে দেখে যাব-
এ সবের ভেতর দিয়েই তো আমার বাড়ি যাবার পথ,
আমি বাড়ি যাব,
পৃথিবীতে সমস্ত বাড়ি যাবার পথেই আছে
এরকম একেকটি শহর;
আমি এক্ষুনি এগিয়ে যাব।
তোমাদের যে এপার্টমেন্ট, আমি জানি, তার ছাদ নেই;
তোমাদের যে উনোন, আমি জানি, তার আগুন নেই;
তোমাদের যে ব্যাংক, আমি জানি, তার স্বচ্ছলতা নেই;
তোমাদের যে পরিষদ – কারো সম্মতি নেই;
তোমাদের যে আয়না – কোনো প্রতিফলন নেই;
তোমাদের যে গেলাশ – কোনো পানীয় নেই;
আমি জানি
তোমাদের রমণীদের গর্ভধারণ করবার ক্ষমতা নেই;
আমার জানা আছে
তোমাদের সন্তানদের হাতে শস্যের একটিও বীজ নেই।
একটি দু’টি তিনটি প্রজন্ম ধরে আমি
একাধিক যুদ্ধ – একটি শান্তিকে,
একাধিক মন্বন্তর – একটি ফসলকে,
একাধিক স্তব্ধতা – একটি উচ্চারণকে,
একাধিক গণহত্যা – একটি নৌকোকে,
একাধিক পতাকা – একটি স্বাধীনতাকে
শরীরে আমার বীভৎস ক্ষতের মধ্যে লাল স্পন্দনের মতো
অনুভব করতে করতে
এই যে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছি-
সে একটি বাড়ির দিকে যে কখনো ভেঙে পড়ে না,
সে একটি উনোনের দিকে যে কখনো নিভে যায় না,
সে একটি ব্যাংকের দিকে যে কখনো দেউলে হয় না,
সে একটি পরিষদের দিকে যে কখনো যুদ্ধ ঘোষণা করে না,
এমন একটি আয়নার দিকে যেখানে প্রতিফলন,
এমন একটি গেলাশের দিকে যেখানে পরিস্রুত পানীয়,
এমন একটি রমণীর দিকে যে এইমাত্র চুল খুলেছে,
এমন এক সন্তানের দিকে যে এইমাত্র বর্ষায় ভিজেছে।
আমার এই অগ্রসর
সে তোমাদের ভেতর দিয়েই অগ্রসর।
রাতের পর রাত ভেঙে উৎকর্ণ জন্তুর মতো চলেছি
চাঁদের নিচে পানির সন্ধানে,
সমস্ত স্তব্ধতাকে মাকড়শার জালের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে
গুহাবন্দী মানুষের মতো আমি চলেছি
পানির শব্দ নির্ণয় করে।
আমি এখনো জানি না তার শেষে অপেক্ষা করছে কিনা
একটি রমণী অথবা তার হাঁসুলী ছেঁড়া পুঁতি;
আমি এখনো জানি না তার শেষে দেখতে পাব কিনা
সরোবরের ভেতরে চাঁদ অথবা কাদার ভেতরে করোটি।
তবু আমাকে যেতে হবে
এবং তবু আমাকে যেতেই হবে, সহস্র ক্ষত শরীরে।
তোমাদের এই শহরের ভেতর দিয়ে যেতে
যদিবা আমার চোখে পড়ল কচিৎ একটি যুগল
যাদের গান এখনো বহন করতে বাতাস বড় ইচ্ছুক,
আমি জানি আমিও তো একটি যুগল হতে চেয়েছি-
তাই আমার একটুখানি থামা।
যদিবা আমার চোখে পড়ল ছেঁড়া কিছু কাগজ
যার ভেতরে বন্দী কোনো কবির লেখা ছিন্ন ক’টি অক্ষর,
আমি জানি আমিও তো একটি কবিতার জন্যে কলম ধরেছি-
তাই আমার একটু এই দাঁড়ানো।
যদিবা আমার চোখে পড়ল শাদা একটি ফুল
যা রাতের অন্ধকারে ছোট্ট কিন্তু তীব্র সুগন্ধ নিয়ে ফুটেছিল,
আমি জানি আমিও তো একটি উদ্যানই আমার স্বপ্নে দেখেছি-
তাই আমার একটু শুধু বিরতি।
আমাকে এক রমণী তার রাতের প্রস্তুতি নিয়ে ডাকছে,
আমাকে যেতেই হবে;
আমাকে একটি কাগজ তার কবিতার সম্ভাবনা নিয়ে ডাকছে,
আমাকে যেতেই হবে;
আমাকে একটি উদ্যান তার চারাগাছগুলো নিয়ে ডাকছে,
আমাকে যেতেই হচ্ছে
আমাকে ডাকছে একটি শিশু,
আমাকে ডাকছে একটি রাষ্ট্র,
আমাকে ডাকছে একটি আয়না তার সমুখে স্থাপিত হবার জন্যে।
তাই একটুখানি দাঁড়িয়েই আমি এগিয়ে যাব আবার
যেমন যাচ্ছিলাম
ধীরে ধীরে
বহুকাল ধরে
আমি একটি
দু’টি
তিনটি
প্রজন্ম ধরে।
তোমাদের ভেতর দিয়েই তো সর্বকাল চলে গেছে আমার পথ
এবং সর্বকাল আমি দাঁড়িয়েছি আমি আবার নিয়েছি পথ।
সংকলিত
এখন মধ্যরাত কবিতা | এখন মধ্যরাত সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা
এখন মধ্যরাত।
তখন দুপুরে রাজপথে ছিলো মানুষের পদপাত।
মিছিলে মিছিলে টলমল ছিলো সারাদিন রাজধানী।
এখন কেবল জননকূল ছল বুড়িগঙ্গার পানি
শান্ত নীরব
নিদ্রিত সব।
ওই একজন জানালায় রাখে তার বিনিদ্র হাত
ছিলো একদিন তার
উজ্জ্বল দিন, ছিলো যৌবন ছিলো বহু চাইবার।
সারা রাত চষে ফিরেছে শহর খুঁজেছে সে ভালোবাসা।
পেতেছে সে হাত জীবনের কাছে ছিলো তারও প্রত্যাশা পাওয়া না পাওয়ার
প্রশ্নে হাওয়ার
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এখন সারারাত হাহাকার।
পথে ওড়ে ধুলো, ছাই ওড়ে শুধু পথে যে আগুন ছিলো
একদা সে জ্বেলে ছিলো।
হৃদয়ে এখন সৌধের ভাঙা টুকরো আছাড় খায়।
আলো নিভে যায়, নিভে যায় আলো একে একে জানালায়।
থেমে যায় গান
তারপরও প্রাণ
বাঁশিটির মতো বেজে চলে যেন সবই আছে সবই ছিলো।
সংকলিত
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ কবিতা | তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মানচিত্রের ভেতরে
যার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তেরো শো নদীর ধারা ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার করতলে পাঙরাটির বুকে
যার ডানা এখন রক্ত আর অশ্রুতে ভেজা ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার বৃষ্টিভেজা খড়ের কুটিরে
যার ছায়ায় কত দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে সন্তান এবং স্বপ্ন ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার তোমার নৌকার গলুইয়ে
যার গ্রীবা এখন ভবিষ্যতের দিকে কেটে চলেছে স্রোত ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মাছধরা জালের ভেতরে
যেখানে লেজে মারছে বাড়ি একটা রুপালী চিতল ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার হালের লাঙলের ভতরে
যার ফাল এখন চিরে চলেছে পৌষের নবান্নের দিকে ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার নেহাই ও হাতুড়ির সংঘর্ষের ভতরে
যার একেকটি স্ফুলিঙ্গে এখন আগুন ধরছে অন্ধকারে ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার কবিতার উচ্চারণে
যার প্রতিটি শব্দ এখন হয়ে উঠছে বল্লমের রুপালী ফলা ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার দোতারার টান টান তারের ভেতরে
যার প্রতিটি টঙ্কার এখন ইতিহাসকে ধ্বনি করছে ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার লাল সূর্য্ আঁকা পতাকার ভেতরে
যার আলোয় এখন রঞ্জিত হয়ে উঠছে সাহসী বদ্বীপ ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার অনাহারী শিশুটির কাছে
যার মুঠোর ভেতরে এখন একটি ধানের বীজ ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের পর কোমল পলিমাটিতে
যেখানে এখন অনবরত পড়ছে কোটি কোটি পায়ের ছাপ ।
সংকলিত
Tag: সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা সমগ্র, সৈয়দ শামসুল হকের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, আমি একটুখানি দাঁড়াব কবিতা, একটুখানি দাঁড়াবো সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, এখন মধ্যরাত কবিতা, এখন মধ্যরাত সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ কবিতা, তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা,