মহাদেব সাহার কবিতা সমগ্র | Mahadev Saha poem
মহাদেব সাহা শ্রেষ্ঠ কবিতা | মহাদেব সাহার কবিতা
টাইম অফ বিডি এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি বারকাতুহু । প্রিয় পাঠকবৃন্দ কেমন আছেন আপনারা সবাই ? আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আমিও ভাল আছি। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম মহাদেব সাহার শ্রেষ্ট কবিতা, মহাদেব সাহার কবিতা, । আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
সব তো আমারই স্বপ্ন কবিতা | সব তো আমারই স্বপ্ন মহাদেব সাহার কবিতা
সব তো আমারই স্বপ্ন মাথার উপরে এই যে কখনো
উঠে আসে মরমী আকাশ কিংবা স্মৃতি ভারাতুর চাঁদ
মেলে ধরে রূপকাহিনীর গাঢ় পাতা। কোনো এক
কিশোর রাখাল কী করে একদা দেখা পেয়ে গেলো
সেই রাজকুমারীর আর পরস্পর ভাসালো গন্ডোলা।
সেও তো আমারই স্বপ্ন রূপময় এই যে ভেনিস
কী যে সিক্ত বাষ্পাকুল ছিলো একদিন রঙিন বর্ষণে
শিল্পের গৌরবে তার মুখচ্ছবি উদ্ভাসিত আর থেকে থেকে
জ্যোৎস্নখচিত সারা দেহে খেলে যেতো চিত্রের মহিমা!
এসব তো আমার স্বপ্নের মৃত শিশু এই যে কখনো
দেখি শৈশবের মতো এক স্মৃতির সূর্যাস্ত, অনুভূতিশীল মেঘ
যেন রাত্রি নামে নক্ষত্রের নিবিড় কার্পেটে
বুঝি যামিনী রায়ের কোনো সাতিশয় লোকজ মডেল।
সব তো আমারই স্বপ্ন তবে, মাঝে মাঝে উদ্যান, এভেন্যু,
লোকালয় মনে হয় অভ্রভেদী অব্যক্ত ব্যাকুল
এই গাছগুলি কেমন মিষ্টিক আর প্রকৃতি পরেছে
সেই বাউল বর্ণের উত্তরীয়! এও তো আমারই স্বপ্ন
আঙিনায় একঝাঁক মনোহর মেঘ
আর উন্মুক্ত কার্নিশে দোলে নীলিমা, নীলিমা! কিংবা
টবে যে ব্যাপক চারাগুলি তাতে ফুটে ওঠে মানবিকতার
রাঙা ফুল; এখনো যে কোনো কোনো অনুতপ্ত খুনী
রক্তাক্ত নিজের হাত দেখে ভীষণ শিউরে ওঠে ভয়ে
আর প্রবল ঘৃণায় নিজেই নিজের হাত ছিঁড়ে ফেলে
সেখানে লাগাতে চায় স্নিগ্ধ গোলাপের ডালপালা।
সেও তো আমারই স্বপ্ন এই যে চিঠিতে দেখি
ভালোবাসারই তো মাত্র স্বচ্ছ অনুবাদ কিংবা
একটি কিশোরী এখনো যে বকুলতলায় তার
জমা রাখে মৃদু অভিমান; এখনো যে তার গণ্ডদেশ
পেকে ওঠে পুঞ্জীভূত মাংসের আপেল। এসব তো
আমার স্বপ্নের মৃত শিশু, বিকলাঙ্গ, মর্মে মর্মে
খঞ্জ একেবারে! যেন আমি বহুকাল-পোষা
একটি পাখির মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে আছি।
আমি জানি সবই তো আমার স্বপ্ন নীলিমায়
তারার বাসর আর এভেন্যুতে গূঢ় উদ্দীপনা-
এইগুলি সব তো আমারই স্বপ্ন, সব তো আমারই স্বপ্ন।
ধূলোমাটির মানুষ
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস কবিতা | মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস মহাদেব সাহার কবিতা
কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস যেন একখানি
অন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!
পাতায় পাতায় চোখের জল সেখানে লিপিবদ্ধ
আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট;
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস, এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!
দীর্ঘশ্বাসভরা এই বুকের চেয়ে শীতপ্রধান বিপন্ন অঞ্চল
আর কোথাও নেই,
এমন হলুদ, ধূসর ও তুষারাবৃত!
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
হঠাৎ একসঙ্গে অসংখ্য দুঃখ যদি কখনো কেঁদে ওঠে
কিংবা যদি
প্রাচীন শিলালিপি থেকে সব শোকের গান সশব্দে বেজে যায়,
তাহলে যেমন মধ্যাহ্নের আকাশ সহসা দুঃখে ম্লান হয়ে যাবে
গোলাপ হবে কৃষ্ণবর্ণ, তার চেয়েও বিষণ্নতা নেমে আসবে
মানুষের বুক থেকে এই দীর্ঘশ্বাস যদি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে।
তেমন সম্ভাবনা আছে বলেই মানুষ বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস
চেপে রাখে
তার চোখে নিয়তই জল ঝরে তবু দেখা যায় না;
মানুষের বুকের ভেতর কতো যে দীর্ঘশ্বাস, জমাট বেঁধে আছে
কতো যে ক্রন্দন, পাতা ঝরার শব্দ, মৃত্যুসংবাদ
মানুষের বুকের মধ্যে ব্যথিত ব্যাকুল ইতিহাস
আর আহত সভ্যতা
মেঘের মতো ঘনীভূত হতে হতে একেকটি মর্মানি-ক
দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে
মানুস তাকে বয়ে বয়ে দগ্ধ বেঁচে থাকে;
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
একেকটি মানুষ নিজের মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়,
হায়, কেউ জানে না!
ধূলোমাটির মানুষ
ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কবিতা | ভালোবাসা আমি তোমার জন্য মহাদেব সাহার কবিতা
ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েই
সবচেয়ে বেশি বিব্রত আজ
তেমাকে নিয়েই এমন আহত
এতো অপরাধী, এতো অসহায়!
তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াই
তোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।
ভালোবাসা তুমি ফুল হলে তার
ফুলদানি পেতে অভাব ছিলো না,
মেঘ হলে তুমি সুদূর নীলিমা
তোমাকে দিতাম উড়ে বেড়াবার;
জল হলে তুমি সমুদ্র ছিলো
তোমারই জন্য অসীম পাত্র-
প্রসাধনী হলে তোমাকে রাখার
ছিলো উজ্জ্বল অশেষ শো-কেস,
এমনকি তুমি শিশির হলেও
বক্ষে রাখার তৃণ ছিলো, আর
সবুজ পাতাও তোমার জন্য
হয়তোবা হতো স্মৃতির রুমাল।
ভালোবাসা তুমি পাখি হতে যদি
তোমাকে রাখার ভাবনা কি ছিলো
এই নীলকাশ তোমারই জন্য
অনায়াসে হতো অনুপম খাঁচা!
কিন্তু তুমি তো ফুল নও কোনো
মেঘ নও কোনো দূর আকাশের,
ভালোবাসা তুমি টিপ নও কোনো
তোমাকে কারো বা কপালে পরাবো;
ঘর সাজাবার মেহগনি হলে
ভালোবাসা তুমি কথা তো ছিলো না
তুমি তো জানোই ভালোবাসা তুমি
চেয়েছো মাত্র উষ্ণ হৃদয়!
খোঁপায় তোমাকে পরালেই যদি
ভালোবাসা তুমি ফুটতে বকুল,
কারো চোখে যদি রাখলেই তুমি
হতে ভালোবাসা স্নিগ্ধ গোধূলি-
তাহলে আমার তোমাকে নিয়ে কি
বলো ভালোবাসা এমন দৈন্য,
আমি তো জানিই তোমার জন্য
পাইনি যা সে তো একটি হৃদয়
সামান্যতম সিক্ত কোমল,
স্পর্শকাতর অনুভূতিশীল!
ধূলোমাটির মানুষ
ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই কবিতা | ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই মহাদেব সাহার কবিতা
ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই চেয়ে দেখো
আমার ভিতরে কোথায় নেমেছে ধস,
কোথায় নেমেছে ঘোর কালো!
দেখো আমার ভেতরে এখন প্রবল গ্রীষ্মকাল
খরা আর খাদ্যের অভাব; ভালো করে চেয়ে দেখো
আমার ভিতরে সমস্ত কেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন, ভগ্ন ও ব্যথিত
ঠিক যে আঁধার তাও নয় মনে হয় মধ্যাহ্নে অকালসন্ধ্যা
অস্তমিত সকল আলোর উৎস;
ভালো আছি বলি কিন্তু ভিতরে যে লেগেছে হতাশা
লেগেছে কোথাও জং আর এই মরচে-পড়া লোহার নিঃশ্বাস
গোলাপ ফুটতে গিয়ে তাই দেখো হয়েছে ক্রন্দন,
হয়েছে কুয়াশা!
আমি কি অনন্তকাল বসে আছি, কেন তাও তো জানি না
চোখে মুখে উদ্বেগের কালি, থেকে থেকে ধূলিঝড়
আতঙ্কের অন্তহীন থাবা; ভিতরে ভীষণ গোলযোগ
ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই চেয়ে দেখো
ভিতরে কেমন কোলাহল উদ্যত মিছিল
ঘন ঘন বিক্ষুব্ধ শ্লোগান, ডাক-তার-ব্যাঙ্ক ধর্মঘট
হরতালপ্লাবিত দেখো আমার ভিতরে এই এভেন্যু ও পাড়া,
হঠাৎ থমকে আছে ব্যস্ত পথচারী যেন কারফিউতাড়িত
আমার ভিতরে এই ভাঙাচোরা, দ্বন্দ্ব ও দুর্যোগ;
দেখো অনাহারপীড়িত শিশু
দেখো দলে দলে দুর্ভিক্ষের মুখ
ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই চেয়ে দেখো
ভিতরে কী অস্থির উন্মাদ, ভিতরে কী নগ্ন ছেঁড়া ফাড়া!
ধূলোমাটির মানুষ
কোনো তরুণ প্রেমিকের প্রতি কবিতা | কোন তরুণ প্রেমিকের প্রতি মহাদেব সাহার কবিতা
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমারই আকাশে উদাসীন মেঘ, মাতাল নৌকা-
সারারাত বেয়ে জ্যোৎস্নার খেয়া ভোরবেলা হাতে ব্যর্থ কুয়াশা
তুমি তো জানো না এসব কাহিনী ঝরে গেছে কতো যামিনীর চাঁদ,
তবু যে প্রেমিক আজো খুঁজে পাও কোথাও স্বপ্ন, কোথাও গন্ধ
কোথাও স্মৃতির স্নিগ্ধ বকুল কুড়াও এখনো তেমনি বিভোর
তুমি তো জানো না তুমি তো জানো না বকুলগুলি যে কার ব্যর্থতা!
তরুণ প্রেমিক আমি ঠিকই জানি তুমি তাকালেই খুলবে পাপড়ি
মেঘ জমা হবে আবেগে তোমার; কিংবা নদীর দূর মোহনায়
ভাসবে আবার তোমাদেরই নামে অনাদি কলস!
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমার এ-বুকে বিয়াত্রিচের ব্যথিত তৃষ্ণা তাই ঘুরে মরি
অন্ধ নরকে ভীষণ একাকী আহত দান্তে তুমি তো জানো না
তুমি তো জানো না অর্ফিয়ুসের কর্তিত মাথা তবু করি এই পুরাতন গান
যে-গান এখনো তোমার শোণিতে লেখে চিরায়ত করুণ কাব্য
তোমার মতোই তরুণ প্রেমিক আমি কি ধরিনি বেদনার হাত
ছুঁইনি কি তার অধীর ওষ্ঠ তোমার মতোই আমি একদিন?
সুন্দর বলে ভুল করে আমি সেই বেদনাকে নিয়েছি বক্ষে
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমাদের আগে এখানে ঝরেছি!
তরুন প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমারই চোখের অতৃপ্ত নেশা, চিরজাগরণ
তোমার মতোই মেঘে মেঘে আমি খুঁজেছি হরিণ, অশোকগুচ্ছ
কিংবা খুঁজেছি দূর নভে কোনো গাঢ় ম্যানসন পাইনি তবুও
বাড়িয়েছি হাত তোমার মতোই কেবল শূন্যে
ভেবেছি হয়তো সেখানেই আছে হাড়ের গায়ে কোমল ঝর্ণা
কুলুকুলু নদী আর তার পাশে ফুটে আছে বুঝি আমার কাম্য
তোমার মতোই তরুন প্রেমিক আমিও একদা খুঁজেছি অলীক!
তরুণ প্রেমিক তুমি যে ভাসাও স্বপ্ন বোঝাই এই সাম্পান
তুমি তো জানো না ভিড়বে কিনা সে তোমার সবুজ নির্জন দ্বীপে
তবু যে প্রেমিক আজো করো তুমি আকাশকুসুম তেমনি চয়ন
তেমনি আজো যে নগ্ন দুহাতে তুলে নাও তুমি রঙিন গোধূলি
তোমার মতোই আমিও একদা রাতের শিশিরে ভরেছি পকেট!
তরুন প্রেমকি তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেম
আমার বুকের কোথায় লালিত, কতোদিন তাকে দিয়েছি আহার
তরুণ প্রেমিক তোমাদের হাসি, তোমার কুজন
তুমি তো জানো না আমারই বুকের ঝরাপাতাদের গান!
ধূলোমাটির মানুষ
Tag: মহাদেব সাহা শ্রেষ্ঠ কবিতা, মহাদেব সাহার কবিতা, মহাদেব সাহার কবিতা সমগ্র, সব তো আমারই স্বপ্ন কবিতা, সব তো আমারই স্বপ্ন মহাদেব সাহার কবিতা, মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস কবিতা, মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস মহাদেব সাহার কবিতা, ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কবিতা, ভালোবাসা আমি তোমার জন্য মহাদেব সাহার কবিতা, ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই কবিতা, ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই মহাদেব সাহার কবিতা, কোনো তরুণ প্রেমিকের প্রতি কবিতা, কোন তরুণ প্রেমিকের প্রতি মহাদেব সাহার কবিতা ,