প্রবন্ধ রচনা পারমাণবিক বোমা এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

Educational help
0

 

প্রবন্ধ রচনা পারমাণবিক বোমা, পারমানবিক বোমা রচনা, পারমাণবিক শক্তি রচনা,


    প্রবন্ধ রচনা পারমাণবিক বোমা


    (সংকেত: ভূমিকা; পারমাণবিক বোমা কী; পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের ইতিহাস; বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার; পারমাণবিক বোমা ও বিশ্বশান্তির অবনতি; পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ; পারমাণবিক বোমার ব্যবহার প্রতিরোধ; উপসংহার।)


    ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বসভ্যতার যুগে যা কিছু অভিশাপ স্বরূপ আবির্ভূত হয়েছে তার মধ্যে পারমাণবিক বোমা অন্যতম। পারমাণবিক বোমা আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই এটি বিশ্ববাসীর কাছে নিকৃষ্টতম বর্বরতার হাতিয়ার নামে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর ব্যবহারে গোটা মানবগোষ্ঠী দেখেছে সভ্যতার এক ভয়ানক ও বীভৎস রূপ। বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানা বিশ্বের বুকে শক্তিধরের পরিচয় বহন করে। এরূপ অস্ত্র ও বোমার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিজেকে মহাশক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে সবাই। তবে সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্রের নিরস্ত্রীকরণের জোর প্রচেষ্টা চলছে। কেননা এর অপব্যবহার মানুষের জীবনকে দাঁড় করিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে।


    পারমাণবিক বোমা প্রবন্ধ রচনা


    পারমাণবিক বোমা কী: পারমাণবিক বোমা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক অস্ত্র। পরমাণুর কেন্দ্র বিভাজিত হওয়ার সময় উদ্ভুত শক্তির সাহায্যে প্রবলভাবে বিস্ফোরিত বোমাকে পারমাণবিক বোমা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। একে নিউক্লিয়ার বোমাও বলা হয়ে থাকে।


    পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের ইতিহাস: নৃশংস বর্বরতার প্রতীক পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও গবেষকের নাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের প্রচেষ্টা শুরু হয় ১৯১৯ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের হাত ধরে। পরবর্তীতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক এই প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করেন নিজ নিজ গবেষণা কর্মের মাধ্যমে। জর্জ বি. প্রোগ্রাম, কন্যান্ট, ব্রিগম, লরেন্স, মারফ্রি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে বিজ্ঞানী ওপেনহেইমার এই প্রচেষ্টাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৪৫ সালের প্রথম দিকে প্রথম পারমাণবিক বোমা আবিষ্কৃত হয়। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ওপেনহেইমারকে বলা হয় পারমাণবিক বোমার আবিষ্কারক। আবিষ্কারের কিছুদিন পরেই বিশ্ববাসী দেখতে পেয়েছে এ বোমার ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ব্যবহার।


    বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার: পারমাণবিক বোমার ব্যবহার কতটা নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর হতে পারে তা প্রথম প্রমাণিত হয় ১৯৪৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে এ বোমা ব্যবহারের পরিণতি ছিল খুবই ভয়াবহ ও হৃদয় বিদারক। ১৯৩৯ সালে শুরু হয়ে ২য় বিশ্বযুদ্ধের ব্যপ্তি ছিল ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। সেই যুদ্ধে জার্মান-জাপান-ইতালি ছিল ফ্যাসিবাদী অক্ষশক্তি। পারমাণবিক বোমার আবিষ্কারক ওপেন হেইমারের পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন নাৎসি বাহিনীর প্রধান হিটলারের বর্বরতা ও অত্যাচার থেকে জার্মান তথা মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য ঐ বোমা ব্যবহার করা হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে সময় জাপানকেই সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করেছিল। যার ফলে চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রূম্যান জাপানকেই চিহ্নিত করেন। অবশেষে ১৯৪৫ সালের ৬ আগষ্ট বোমারু বিমানের মাধ্যমে মার্কিন বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরে একটি ২০,০০০ টন টি.এন.টি শক্তিসম্পন্ন পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ফলে শহরের বিশাল অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। প্রায় পুরো শহরজুড়ে তৈরি হয় ধ্বংসের মহাস্তুপ। বোমার বিস্ফোরণে মারা যায় প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ এবং আহত হয় আরো ৬৯ হাজার। অথচ ঐ শহরের অধিবাসী ছিল প্রায় ৩,৪৩,০০০ জন। হিরোশিমা ধ্বংসযজ্ঞের রেশ কাটতে না কাটতেই একই মাসের ৯ তারিখ আবারো পারমাণবিক বোমা বিক্ষেপ করা হয় জাপানের নাগাসাকি শহরে। এতে মারা যায় প্রায় ৩৯ হাজার লোক এবং আহত হয় আরো ২৫ হাজার। পারমাণবিক বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রায় ৬০ হাজার ঘর বাড়ি। ১৯৪৫ সালের পর বোমার ব্যবহার তেমন প্রসারিত না হলেও বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্র ব্যবহার করার প্রবণতা এখনো দেখা যায়।


    পারমাণবিক শক্তি প্রবন্ধ রচনা


    পারমাণবিক বোমা ও বিশ্বশান্তির অবনতি: বিশ্বশান্তির ধারায় প্রবলভাবে আঘাত করেছে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। কিন্তু বিশ্ব নেতারা এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ও চরম অমানবিক আচরণের পরিণাম থেকে তেমন কোনো শিক্ষাগ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। যার ফলে বিশ্বে নতুন করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং দেশে-দেশে অরাজকতা ও শত্রুতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা তৈরি ও ব্যবহার করার এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। যার ফলস্বরূপ বিশ্বশান্তি প্রতিনিয়ত চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।


    পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ: বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে শক্তির একটি মাপকাঠি হিসাবে পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্র থাকা -না থাকাকে ধরা হয়। এর ভিত্তি শীর্ষ পাঁচটি ক্ষমতাশালী দেশকে পারমাণবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশ বলা হয়ে থাকে। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও চীন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এরা নিউক্লিয়ার ক্লাব নামে পরিচিত। এই পাঁচটি দেশের বাইরেও ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে মনে করা হয়।


    পারমাণবিক বোমার ব্যবহার প্রতিরোধ: আধুনিক সভ্যতাকে পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্রের বিষাক্ত প্রকোপ থেকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেয় ১৯৬৮ সালে। ১৯৭০ সালে প্রথম একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রাথমিকভাবে সেই নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল মাত্র ৩টি দেশ। পরে ১৯৯৫ সালে ঐ সংখ্যা বেড়ে ১৭৩- এ দাঁড়ায়। বিশ্ববাসীর এ ব্যাপারে সচেতনতার সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আন্তর্জাতিক ‘রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (OPCW)। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার কমানো এবং ক্রমান্বয়ে বন্ধ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিটিবিটি (CTBT)। যার পূর্ণনাম হচ্ছে 'Comprehensive Nuclear Test Ban Treaty'। এটির উদ্দেশ্য ছিল নতুন করে কেউ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি এবং ব্যবহার করতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়া। এ কথা পরিষ্কার যে, পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা থেকে বিশ্ববাসীকে রেহাই দিতে হলে দরকার মূলত অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সদিচ্ছা। নিজ নিজ অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে হবে সবার আগে। অন্যথায় চুক্তিপত্রের কার্যকারিতা কখনো সফলতার মুখ দেখবে না।


    উপসংহার: পারমাণবিক শক্তির আবিষ্কার নিঃসন্দেহে মানব সভ্যতার অন্যতম একটি কৃতিত্ব। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কল্যাণ সাধন করা যায়। অথচ এটা ব্যবহৃত হচ্ছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার কাজে। পারমাণবিক বোমা ও শক্তি নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যুদ্ধ পুরোপুরি নিরসন না করে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়। মানব সভ্যতার হুমকি এই পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে বিশ্বনেতাদের পদক্ষেপ অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সবার আগে পারমানবিক অস্ত্র-সমৃদ্ধ দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিৎ।



    Tag: প্রবন্ধ রচনা পারমাণবিক বোমা, পারমানবিক বোমা রচনা, পারমাণবিক শক্তি রচনা, 

    Post a Comment

    0Comments

    প্রতিদিন ১০০-২০০ টাকা ইনকাম করতে চাইলে এখানে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনায় কাজে নিয়ে নেবো। ধন্যবাদ

    Post a Comment (0)