প্রবন্ধ রচনা শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর - Time Of BD - Education Blog

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৩ ভিজিটর বন্ধুরা। দোয়া করি, এই বছরের প্রতিটি মুহুর্ত যেনো সকলের অনেক আনন্দে কাটে।

প্রবন্ধ রচনা শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

 

প্রবন্ধ রচনা শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান, শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান রচনা, শিক্ষাঙ্গনে সংকট প্রবন্ধ রচনা,


    প্রবন্ধ রচনা শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান


    (সংকেত: ভূমিকা; শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা; শিক্ষাঙ্গনে সংকট; শিক্ষানীতির অভাব; শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস; ছাত্র রাজনীতি; শিক্ষার বাণিজ্যিকরণ; সেশনজট; প্রশ্নপত্র ফাঁস; শিক্ষাঙ্গনে সংকট সমাধানের উপায়; উপসংহার।)


    ভূমিকা: বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে অনেক আগেই। এদেশে উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলেও শিক্ষার অভাবে উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অস্থিরতা, অরাজকতাসহ অন্যান্য হাজারো সংকটে জর্জরিত আমাদের শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া একটি দেশের উন্নতি কখনই ঘটনানো সম্ভব নয়। আর তাই সামাগ্রিক সংকট দূর করে সঠিক শিক্ষা দানের মাধ্যমে ছাত্রদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এতেই বিশ্ব নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ দেখতে পারবে।


    শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকটা অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছাত্রদের যেখানে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকার কথা, সেখানে আজ হায়েনার নির্মম থাবা। খুন, জখম ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করেছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন দাপটের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অন্যদিকে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা বোমা, ককটেল নিক্ষেপের পথ বেছে নিয়েছে। হাত পায়ের রগ কেটে দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বর্তমানে ছাত্র নামধারী একদল শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে বা ক্ষমতা দ্বারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করা, ছাত্রাবাসে আসন দখলের জন্য হামলা চালানো প্রভৃতি অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন আজ জিম্মি সন্ত্রাসীদের হাতে এবং শিক্ষাঙ্গন যেন পরিণত হচ্ছে সন্ত্রাসাঙ্গনে।


    শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা


    শিক্ষাঙ্গনে সংকট: আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে সঠিক শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাঙ্গনে সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে শিক্ষানীতির অভাব, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষার বাণিজ্যিকরণ, সেশনজট, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপক সংকটের মুখে পড়বে।


    শিক্ষানীতির অভাব: স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সঠিক কোনো শিক্ষানীতির আলোকে পথ চলতে পারেনি। ১৯৯০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস এবং ১৯৯১ সাল থেকে তা চালু হলেও এর সঠিক সুফল পাওয়া যায়নি। তাছাড়া আমরা দেখতে পাই যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ব্যাপক পাসের হার এবং জিপিএ পাঁচ-এর ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই জিপিএ পাঁচ প্রাপ্ত ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় বর্তমানে পাসের হার ও জিপিএ পাঁচ এর হার বাড়লেও আমাদের শিক্ষার মান বেড়েছে কী? এই অবস্থার জন্য অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বা শিক্ষাবিদ আমাদের দুর্বল শিক্ষানীতিকেই দোষারোপ করে থাকেন।


    শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে সন্ত্রাস নেই। এই ভাইরাসটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। রাজনীতি, চাঁদাবাজি আর মাস্তানির ফলে শিক্ষাঙ্গন আজ সন্ত্রাসাঙ্গণে পরিণত হচ্ছে। ছাত্ররা কখনো স্বেচ্ছায় আবার কখনও চাপের মুখে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতার লোভে এক ছাত্র আরেকজনকে হত্যা করছে। ছাত্র রাজনীতি, টেন্ডার বাজি, নৈরাজ্য ইত্যাদি শিক্ষাঙ্গনকে অশান্ত করে তুলেছে। এর ফলে ছাত্রদের মূল্যবান সময়, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সর্বোপরি এটি দেশকে যে ভয়াবহ অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষো রাখে না।


    ছাত্র রাজনীতি: আজকের বাংলাদেশের যত বড় বড় অর্জন ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত সবকিছুই ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকায় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতার লোভে ছাত্ররা হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে। সাধারণ ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে রাজনৈতিক দলে ভিড়ছে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষাঙ্গন কলুষিত হচ্ছে অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার মানও।


    শিক্ষার বাণিজ্যিকরণ: বর্তমানে শিক্ষা অনেকের কাছে একটি বাণিজ্যিক পণ্যের মতো রূপ ধারণ করেছে। সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা কম থাকার কারণে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। এখানে বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে কোনো রকমে সময় পার করে হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া শিক্ষকরা ক্লাসের বাইরে প্রাইভেট, কোচিং, খন্ডকালীন চাকুরি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রভৃতি কাজে জড়িয়ে পড়ে। যার খারাপ প্রভাব পড়ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়।


    শিক্ষাঙ্গনে সংকট প্রবন্ধ রচনা


    সেশনজট: শিক্ষাঙ্গনে একটি বিশাল সমস্যা সেশনজট। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এমন একশ্রেণির শিক্ষক রয়েছেন যারা শিক্ষাদানকে দায়িত্ব মনে না করে ব্যবসা মনে করেন। তারা সঠিক সময়ে ক্লাস, পরীক্ষা এমনকি ফল দেওয়াতে বিলম্ব করেন। যার দরুন সেশনজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলাদলি, সন্ত্রাস প্রভৃতির কারণেও সেশনজটের সৃষ্টি হয়।


    প্রশ্নপত্র ফাঁস: সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে দেশে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। পিইসি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হচ্ছে। আর এতে করে দেশের প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এটি খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার। এর ফলে দুর্নীতির কালো থাবা আমাদের পবিত্র শিক্ষাকেও দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। আর এতে করে নিরুৎসাহিত হচ্ছে মেধাবীরা। যার ফলে দেশ অনেক পিছিয়ে পড়ছে।


    শিক্ষাঙ্গনে সংকট সমাধানের উপায়: শিক্ষাঙ্গনে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে তা যদি সমাধান না করা হয় তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এই সমস্যা সমাধানকল্পে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে-


    - সঠিক শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।


    - শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার ব্যবস্থা করা।


    - ছাত্রদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করা।


    - শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।


    - নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ করা, পরীক্ষা নেওয়া ও পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা।


    - শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোসহ বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।


    - দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।


    - শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করা।


    - প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ও জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।


    - সর্বোপরি জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানো।


    উপসংহার: শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের উচিত শিক্ষাঙ্গনের সুন্দর শান্ত পরিবেশ বজায় রাখা। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। তাই শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে সম্মিলিতভাবে শিক্ষাঙ্গনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা আমাদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।


    Tag: প্রবন্ধ রচনা শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান, শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান রচনা, শিক্ষাঙ্গনে সংকট প্রবন্ধ রচনা, 

    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url

     আমাদের সাইটের সকল পিডিএফ এর পাসওয়ার্ড হচ্ছে timeofbd.com