প্রবন্ধ রচনা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

Educational help
0

 

প্রবন্ধ রচনা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন রচনা, প্রবালদ্বীপ রচনাবলী,


    প্রবন্ধ রচনা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন


    (সংকেত: ভূমিকা; পরিচিতি ও ভৌগোলিক অবস্থান; জীবন ও জীবিকা; অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা; প্রাকৃতিক সৌন্দর্য; পর্যটনকেন্দ্র সেন্টমার্টিন; যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা; আবহাওয়া ও জলবায়ু; পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনা; উপসংহার।)


    ভূমিকা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ। একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তার সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরেছে বিশ্বের বুকে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অসংখ্য দ্বীপের ভিড়ে তাই সেন্টমার্টিন আপন রূপ ঐশ্বর্যে অনন্য একটি স্থান দখল করে আছে। সেন্টমার্টিনের সাগরের জলতরঙ্গের সাথে গাছ-গাছালির সবুজের সমারোহ অপরূপ মিতালী তৈরি করে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করেছে আরো বেশি মোহনীয়, আকর্ষণীয়, সতেজ ও সজীব। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে সেন্টমার্টিন হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান একটি পর্যটন কেন্দ্র।


    পরিচিতি ও ভৌগোলিক অবস্থান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপর আধার সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অর্ন্তগত। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ইউনিয়ন হিসেবে সেন্টমার্টিন বিশেষভাবে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ভেসে উঠা এই প্রবাল দ্বীপ নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত যা টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থানরত। বৃটিশ শাসনামলে এ দ্বীপের নামকরণ করা হয় সেন্টমার্টিন। স্থানীয় জনগণের কাছে এটি “নারিকেল জিঞ্জিরা” নামে পরিচিত। সেন্টমার্টিনের অন্তর্গত ছেড়া দ্বীপ নামে আরো একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে যা প্রবল জোয়ারের কারণে প্রায়ই মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।


    জীবন ও জীবিকা: সেন্টমার্টিন পর্যটকদের নিকট মনোরম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। কিন্তু এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান তেমন ভালো নয়। সেন্টমার্টিনের অধিবাসীগণ প্রধানত মৎস্যজীবী। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সাগরে মাছ শিকার করার পর তারা স্থানীয় বাজার ও টেকনাফ-কক্সবাজারে বিক্রি করে। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য অধিকাংশ উপাদানই তাদের টেকনাফ থেকে আমদানি করতে হয়।


    প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন প্রবন্ধ রচনা


    অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা: সেন্টমার্টিনের অর্থনীতি মূলত মৎস্য কেন্দ্রীক। অধিকাংশ লোকের পেশা হচ্ছে মাছ ধরা। আর সেই সূত্রে তাদের সমাজ প্রধানত জেলে সমাজ। কিছু লোক আবার সমুদ্র তল থেকে শৈবাল ও ঝিনুক সংগ্রহ করে তা পার্শ্ববর্তী মায়ানমারে রপ্তানি করে টাকা উপার্জন করে। জেলে সমাজের অন্তর্গত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে একটি ব্যবসায়ী শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। অনেকেই এখন পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করার মাধ্যমে অর্থ আয় করে থাকে। সেন্টমার্টিনের অর্থনীতির আরেকটি উপাদান হচ্ছে নারিকেল। সম্পূর্ণ দ্বীপে রয়েছে প্রচুর নারিকেল গাছ। এসব নারিকেল তারা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায়ও সরবরাহ করে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুরো সেন্টমার্টিনের সমাজপতি। তিনি তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে দ্বীপবাসীর দেখাশোনা করেন এবং বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন।


    প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: প্রকৃতি নিজের মতো করে সেন্টমার্টিনকে রাঙিয়ে তুলেছে ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাহারি সংমিশ্রণে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের মধ্যে সেন্টমার্টিন উজ্জ্বল এক সৌন্দর্যভান্ডার। সমুদ্রের উঁচু-নিচু জলতরঙ্গের বুকে সবুজের চিরায়ত সমারোহ গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি। নীল জলরাশি বেষ্টিত একখন্ড সবুজ ভূখন্ড মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় অপার সৌন্দর্যময়ী বাংলাদেশের কথা। সৈকতের শামুক-ঝিনুক, স্বচ্ছ পানির নিচে রকমারি শৈবাল আর সাগর তীরের ঝাউগাছ মিলে সেন্টমার্টিন যেন এক স্বর্গপুরী।


    পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিন: পর্যটন শিল্পের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে বহুল সমাদৃত। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সেন্টমার্টিনের নাম সবার আগে চলে আসে। প্রতিবছর হাজার হাজার দেশি ও বিদেশি পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে সেন্টমার্টিনের সৈকত। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়ই উপভোগ করা যায়। আয়তনে ছোট হওয়ায় ইচ্ছা করলে পায়ে হেঁটে পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়। সমুদ্রতীরে রাতের চাঁদের আলোয় নারিকেল জিঞ্জিরা এক আলৌকিক ভালো লাগার জন্ম দেয়। স্পিড বোডে চড়ে দ্বীপের চতুর্দিকে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর ব্যাপার। এক কথায় যারা সত্যিকার অর্থে আধুনিক ব্যস্ততাকে এড়িয়ে প্রকৃতির একটু শীতল পরশ পেতে চায় তাদের জন্য সেন্টমার্টিনের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।


    যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা:সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে সমুদ্র পথ। কিছু বড় জাহাজ, অসংখ্য ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিড বোড পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। দ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত না। কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটেই মূলত দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয়। তবে কিছু ভ্যান গাড়ি যাতায়াত সেবা দিয়ে থাকে। পুরো দ্বীপে বিদ্যুৎ না থাকালেও জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাথে বাংলাদেশের কোনো টেলিফোন সংযোগ নেই। কিন্তু সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।


    আবহাওয়া ও জলবায়ু: সমুদ্রের ভেতরে অবস্থানের কারণে বিভিন্ন সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের আবহাওয়া ও জলবায়ুর অবস্থা বিভিন্ন রকম থাকে। সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ের আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে। এ কারণে এই সময়টাকে বলা হয় পর্যটন মৌসুম। এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে সবচেয়ে বেশি। শীতকালে সাগর অনেকটা শান্ত থাকে বিধায় পর্যটকেরাও এ সময় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বর্ষাকাল আসলেই শুরু হয় আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ। এসময় সাগর উত্তাল হয় বহুগুণে। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসময় পর্যকদের তেমন আনাগোনা থাকে না।


    প্রবালদ্বীপ রচনাবলী


    পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনা: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সেন্টমার্টিন হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে পারলে এ দ্বীপ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে যে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য সরকারিভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন শিল্পে সেন্টমার্টিনের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে পারলে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করতে হবে। আর এই সেবাদানের জন্য গড়ে তোলা দরকার দক্ষ কর্মী বাহিনী। পর্যটন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আকর্ষণীয় প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে সেন্টমার্টিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া গেলে বৃহদার্থে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সেন্টমার্টিনের সামনে তাই পড়ে আছে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা।


    উপসংহার: চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৭ম শতাব্দীতে বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন- "A sleeping beauty emerging from mists and water." বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এরকম আরো অনেকেই এর প্রশংসা করেন। সেন্টমার্টিনের প্রকৃতিক সৌন্দর্য আর সাগরের হাতছানি যে কাউকেই মোহাবিষ্ট করে দেয়। এমন সৌন্দর্যের আধার প্রবাল দ্বীপটির প্রতি সরকারের কার্যকরী দৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা দূর করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধকরণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিকল্প নেই।


    Tag: প্রবন্ধ রচনা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন রচনা, প্রবালদ্বীপ রচনাবলী, 

    Post a Comment

    0Comments

    প্রতিদিন ১০০-২০০ টাকা ইনকাম করতে চাইলে এখানে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনায় কাজে নিয়ে নেবো। ধন্যবাদ

    Post a Comment (0)