প্রবন্ধ রচনা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর - Time Of BD - Education Blog

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৩ ভিজিটর বন্ধুরা। দোয়া করি, এই বছরের প্রতিটি মুহুর্ত যেনো সকলের অনেক আনন্দে কাটে।

প্রবন্ধ রচনা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

 

প্রবন্ধ রচনা পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ, পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ রচনা, পালস ও পোলিও রচনা,


    প্রবন্ধ রচনা পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ


    (সংকেত: ভূমিকা; পোলিও কি; পোলিও রোগের কারণ; পোলিও রোগের লক্ষণ; পোলিও রোগের চিকিৎসা; বাংলাদেশে পোলিও রোগের পূর্বকথা; বাংলাদেশে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি; পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ; পোলিও রোগ ও বর্তমান বিশ্ব; উপসংহার।)


    ভূমিকা: পোলিও একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বাংলাদেশ পোলিও রোগ নির্মূলের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জাতীয় টিকা দিবস পালন করে আসছে। এই সফলতার ধারাবাহিকতায় ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশকে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি জোরদার ও জাতীয় টিকা দিবস সফলভাবে পালন করার ফলে ২২ নভেম্বর ২০০৬ সালের পর থেকে অদ্যবধি ৭ বছরের অধিক সময় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ পোলিওমুক্ত আছে। চলতি বছরের ২৭ মার্চ পোলিওমুক্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেই সফলতার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেল।


    পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ রচনা


    পোলিও কি: পোলিও, পোলিও মাইলেটিস রোগের সচরাচর ব্যবহৃত নাম। এটি এক ধরণের ভাইরাসজনিত রোগ। পোলিও ভাইরাস আন্ত্রিক ভাইরাস দলেরই অর্ন্তগত। কারণ এটি শরীরের অন্ত্রপথেই দেহে প্রবেশ করে থাকে। তিন ধরণের পোলিও ভাইরাস সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়। পোলিও ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির নার্ভস্ সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে এক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে দেখা যায় যে, পোলিও আক্রান্ত ব্যক্তি সারাজীবনের জন্য চলাচলের ক্ষমতা হারায়। তবে ৫ বছরের শিশুদের জন্য এই রোগ বেশী ক্ষতিকর।


    পোলিও রোগের কারণ: পোলিও রোগের প্রধান কারণ হলো পোলিও ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির পোলিও রোগ হয়। দূষিত খাদ্য ও পানির সাথে শরীরে প্রবেশ করার পর এই ভাইরাস রক্তকোষের মধ্যে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে রক্তে সংক্রমণ ঘটায়। পরবর্তীতে ভাইরাস প্রান্তীয় স্নায়ু নিউরনের উদ্দীপনার পথ ধরে ছড়িয়ে পড়ে মাইয়েলিনসমূহকে ধ্বংস করে ফেলে। এই মাইয়েলিনের মাধ্যমেই স্নেহ পদার্থসমূহ স্নায়ুতন্ত্র আবৃত করে। যাতে করে স্নায়ু উদ্দীপনা সমূহ সহজেই সঞ্চালিত হতে পারে। আর এখান থেকেই মাইয়েলাইটিস কথাটি এসেছে। এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানসংক্রান্ত যে পরিণতি পরিলক্ষিত হয় সেটিই হলো শিথিল পক্ষাঘাত বা পোলিও।


    পোলিও রোগের লক্ষণ: পোলিও ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পোলিও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগের লক্ষণ হলো- বাচ্চাদের সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর থাকে, মাথা ব্যথা হয়, সারা শরীরে ব্যথা হয়, গলা ব্যথা হতে পারে, বমিবমি ভাব হয়, ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যায়, হাত ও পা অবশ হয়ে যায়, মুখের একপাশ অবশ হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিলে ঢোক গিলতে এবং শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাত ও পা চিকন হয়ে যায়।


    পালস ও পোলিও রচনা


    পোলিও রোগের চিকিৎসা: ভাইরাস আক্রান্ত পোলিও রোগটি প্রতিকারযোগ্য নয় এটি প্রতিরোধযোগ্য। পোলিও রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং সম্পূর্ণভাবে বিশ্রাম নিতে হবে


    প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:


    - জন্মের পর থেকে প্রত্যেক শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে।


    - গোসল করা, কাপড় ধৌত করা, রান্না করা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।


    - স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।


    - টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।


    - খাওয়ার আগে ও পরে হাত, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।


    - নোংরা, অপরিষ্কার কাপড় পুকুরে ধোয়া যাবে না।


    বাংলাদেশে পোলিও রোগের পূর্ব কথা: বাংলাদেশে ১৯৭০ এবং ৮০’র দশকে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়। নব্বইয়ের দশকে পোলিও নির্মূলে সফলতা আসতে থাকে। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগাক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২ জন। ১৯৮৬ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে সাড়ে এগারো হাজার শিশু পোলিও আক্রান্ত হতো। তবে ১৯৮৮ সালে বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল কর্মসূচির আওতায় দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে তা দ্রুত সফলতা লাভ করে। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৬ সালে এসে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে পোলিওমুক্ত হয়।


    বাংলাদেশে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি: প্রকৃতপক্ষে লঘুকৃত ভাইরাস সম্বলিত, মুখে খাওয়ানোর টিকা রক্ষণমূলক অনাক্রম্যতা প্রদানে অধিকমাত্রায় কার্যকর হয়েছে। পোলিওমুক্ত বহুদেশের মত বাংলাদেশও ১৯৯৫ সাল থেকে শিশুকে মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে পোলিও নির্মূলকরণ নীতি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১ লক্ষ শিশুকে দুই ফোঁটা মুখে খাওয়ানো টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় টিকা দিবস পালিত হয়ে আসছে।


    পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ: ২৭ মার্চ ২০০৪ তারিখে “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা” বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই সংস্থাটির দিল্লী কার্যালয় থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর এদেশে সর্বশেষ পোলিও রোগী পাওয়া যায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে বাংলাদেশকে তখন পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এককভাবে কোনো দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা না করে সেটি অঞ্চলভিত্তিক করে থাকে। কেননা সীমানা পার হয়েও ভাইরাসের যাতায়াত হতে পারে। ২০১১ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়ায় বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা যায়নি। কোনো দেশে পর পর তিন বছর পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়া না গেলে সে দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়। গত তিন বছর যাবত বাংলাদেশ, ভারতসহ পাশের দেশে পোলিও রোগী না পাওয়ায় এ অঞ্চলকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।


    পোলিও রোগ ও বর্তমান বিশ্ব: ১৯১৬ সালে ১ম আমেরিকায় পোলিও রোগ মাহমারি হিসেবে দেখা দেয়। সে সময় পোলিও রোগের কারণে ২৭ হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গহানি এবং ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৪৫ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল শুরু করে পোলিও প্লাস ক্যাম্পেইন। সে সময় ১২৫ টিরও বেশি দেশে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি শিশু আক্রান্ত হচ্ছিল। ১৯৫৪ সালে ১ম পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। ১৯৯১ সালে আমেরিকায় শেষ পোলিও রোগ শনাক্ত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ১৫০টির বেশি দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালে পশ্চিমা দেশগুলোকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয। ২০০২ সালে ইউরোপ থেকে পোলিও নির্মূল করা হয়। ২০০৩ সালে মাত্র ৭টি দেশে পোলিও রোগ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে পোলিও আক্রান্ত দেশ হিসেবে আফগানিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান এই চারটি দেশকে চিহ্নিত করা হয়। পোলিও নির্মূলের হার দাঁড়ায় শতকরা ৯৯.৪ ভাগ। ২০০৬ সালে ভারতে ৬৭৬ জন পোলিও রোগী থাকলেও ২০০৭ সালেই তা কমে হয় ২৮১ জন। ২০০৮ সালে গোটা বিশ্বে মাত্র ১৬৩৩ জন পোলিও রোগী পাওয়া যায়। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়া এখনও পোলিও রোগ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশা করছে ২০১৮ সালের মধ্যে এই তিনটি দেশ থেকেও পোলিও নির্মূল করা সম্ভব হবে।


    উপসংহার: পোলিও একটি ভয়াবহ ব্যাধি, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ আজ পোলিওমুক্ত। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরাট ইতিবাচক দিক।


    Tag: প্রবন্ধ রচনা পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ, পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ রচনা, পালস ও পোলিও রচনা, 

    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url

     আমাদের সাইটের সকল পিডিএফ এর পাসওয়ার্ড হচ্ছে timeofbd.com